ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভুলের খেসারত

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ভুলের খেসারত

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ যারা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল তাদের ফলাফল নেই। অথচ যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তাদের ফলাফলে পাস দেখানো হয়েছে। নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার উদাসীনতা ও কম্পিউটার অপারেটরের অদক্ষতার কারণে প্রায় শতাধিক প্রাথমিক ও এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার্থীর এই চিত্র ফাঁস হয়ে পড়েছে। এ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপজেলায় ২০১৫ সালে ১৭৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা ছিল ৫ হাজার ৯৯৯ জনের। অনুপস্থিত দেখানো হয় ২৩২ জন। ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত ফলাফলে দেখানো হয়, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩৭ জন, অকৃতকার্য হয়েছে বালক ৬০ ও বালিকা ৯০ জনসহ ১৫০ জন। অভিযোগে জানা গেছে, যাদের অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে তাদের মধ্যে ১০৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। অথচ তাদের ফেল দেখানো হয়। অপরদিকে এবতেদায়ীতে সর্বমোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩৫৯ জন। পরীক্ষায় অংশ নেয়নি ১০৮ জন। ফলাফলে দেখানো হয়, জিপিএ-৫ পেয়েছে পাঁচজন এবং অকৃতকার্য হয়েছে ১৮ জন। এখানে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল এমন বেশকিছু পরীক্ষার্থী পাস করেছে। একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, এবার প্রাথমিক সমাপনী ও এবতেদায়ী পরীক্ষায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসানের উদাসীনতা ও অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটরের চরম ভুলে তাদের সন্তানদের ফলাফল আসেনি। সূত্রমতে, পিএসসি পরীক্ষার্থীদের নাম রেজিস্ট্রেশন করার সময় একজন ছাত্রের রেজিস্ট্রেশন নম্বর আরেকজন ছাত্রের রোল নম্বরের সঙ্গে দিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলা হয়। এসব তালগোল পাকিয়ে ফেলা রোল নম্বর ও রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলো যাচাই না করে শিক্ষা কর্মকর্তা ফলাফল প্রকাশের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে রেজাল্টশীট পাঠিয়ে দেন। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থী রোকসানা আক্তার, যার রোল নম্বর ৫৩৭১, পিতা গোলাম রব্বানী; নাজমিন আক্তার, রোল নম্বর ৩৬৩৫, পিতা হাবিবুর রহমানসহ আরও অনেক অভিভাবক বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা ও কম্পিউটার অপারেটরের ভুলের মাসুল দিতে গিয়ে আমাদের কোমলমতি ছেলেমেয়েদের একটি বছর পিছিয়ে যেতে বসেছে। আমরা উদাসীন শিক্ষা কর্মকর্তার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার সর্তে বলেন, প্রায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রছাত্রীর এ রকম অবস্থা হয়েছে শিক্ষা কর্মকর্তার যাচাই না করার জন্য। আরেক শিক্ষক বলেন, আমার নিজের ছেলের একই অবস্থা হয়েছে। এদিকে এবতেদায়ী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও অনেক ছাত্রছাত্রীর ফলাফল প্রকাশ পেয়েছে। এ রকম পরীক্ষায় অংশ না নেয়া ছাত্রছাত্রীরা হলো- রাসেল ইসলাম রোল নম্বর ৩৪, হাবিবুল্লাহ রোল নম্বর ৩২০, লাকী আক্তার রোল নম্বর ম-২২৮, হনুফা আক্তার রোল নম্বর ম-৯০। এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসানের সঙ্গে কথা বললে তিনি সাংবাদিকদের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তড়িঘড়ি করে কাজ করতে কিছুটা ভুল হয়েছে। এ বিষয়ে ওই শিক্ষার্থীকে খাতা পুনরায় পর্যবেক্ষণের জন্য বোর্ড চ্যালেঞ্জ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আগামীতে যেন আর ভুল না হয় সেদিকে খেয়াল করা হবে বলে জানান তিনি। তবে উপজেলার শত শত শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিয়মিত অফিস করেন না। তার বাড়ি বগুড়া হওয়ায় তিনি বেশি সময় বগুড়ায় থাকেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার বিচারসহ অপসারণ দাবি করা হয়।
×