ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে বিচারের জন্য গৃহীত

ভুল চিকিৎসায় সিলেটে তিন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

ভুল চিকিৎসায় সিলেটে তিন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় শিশুর অঙ্গহানির ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা বিচারের জন্য গৃহীত হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক শাহেদুল করিমের আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য গৃহীত হয়। আদালতে শুনানিকালে অভিযুক্ত সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ জাবের আহমদ, ডাঃ তানভীর আহমেদ চৌধুরী ও ইন্টার্ন ডাঃ শাফিনাজ মোস্তফা ও ব্রাদার তারেক আহমদ উপস্থিত ছিলেন। মামলাটি বিচারের জন্য গৃহীত হওয়ায় অভিযুক্তরা আবারও জামিন চাইলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী বদরুর রহমান বাবরের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান চৌধুরী জানান, চিকিৎসায় অবহেলার কারণে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সিআর ২৬২/১৫ মামলাটি আদালত বিচারিক এখতিয়ারে গ্রহণ করে চার্জ গঠনের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন। এ সময় আদালতে অভিযুক্ত তিন ডাক্তারসহ চারজন উপস্থিত ছিলেন। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি সিলেট টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট এ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি ও বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন বদরুর রহমান বাবরের নয়াসড়কস্থ বাসার দরজার হেজবল্টে চাপ লেগে আঘাতপ্রাপ্ত হয় তার আট বছর বয়সী ছেলে সাফি। ডান হাতের তর্জনিতে রক্তক্ষরণ শুরু হলে বাসার পার্শ¦বর্তী সিলেট উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সাফিকে নেয়া হয়। এ সময় জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত ব্রাদার তারেক শিশু সাফির আঙ্গুলের গোড়ায় রাবার ব্যান্ড বেঁধে আঘাতপ্রাপ্ত স্থান পরিষ্কার করে। পরবর্তীতে ডাঃ সৈয়দ মাহমুদ হাসানের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে নেয়া যাওয়া হয়। হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ জাবের আহমদের উপস্থিতিতে ডাঃ তানভীর আহমদ চৌধুরী ও ইন্টার্ন ডাঃ শাফিনাজ মোস্তফা সাফির আঙ্গুলে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। সেলাইকালে তানভীর ও শাফিনাজ মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখছিলেন। এর ফাঁকে তারা সময়ক্ষেপণ করে সেলাই ও ব্যান্ডেজ করেন। এ সময় সাফির মা পারুল বেগম রাবার ব্যান্ড না খুলে ব্যান্ডেজ করার কারণ জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ডাঃ জাবের আহমদ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলেন, ‘ডাক্তার আমরা, না আপনি?’ অপারেশনের পর ডাঃ জাবের বাসার কাছে থাকায় সাফিকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। হাসপাতালের ছাড়পত্রে কর্তৃপক্ষ কৌশলে নিজেদের বাঁচিয়ে হাসপাতালের ছাড়পত্রে তিন দিন পর ড্রেসিংয়ের জন্য অর্থোপেডিক্স বহির্বিভাগে দেখানোর জন্য বলা হয়। কিন্তু বাসায় যাওয়ার পর সাফির হাতের ব্যথা না কমায় দু’দিন পর ২০ জানুয়ারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার ডাঃ মহসিন শিশু সাফিকে ওয়াশরুমে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। এ সময় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় নিজাম ব্যান্ডেজ খুলে আঙ্গুলে রাবার ব্যান্ড দেখে আবারও ডাঃ মহসিনের কাছে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ডাঃ মহসিন হাসপাতালের ডাঃ কাজী সেলিমের কাছে নিয়ে যান সাফিকে। সাফিকে দেখে ডাঃ কাজী সেলিম অর্থোপেডিক্স ও সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ জাবের আহমদকে ডেকে এনে সাফির হাতের অবস্থা দেখান। এতে হতভম্ব ডাঃ জাবের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান সাফিকে। সেখানে আঙ্গুলের রাবার ব্যান্ড কেটে পরদিন আবারও ড্রেসিং করানোর অনুরোধ জানান ডাঃ জাবের। এ সময় চিকিৎসায় অবহেলার কথা স্বীকার করেন ডাঃ জাবের। সাফির পরবর্তী সকল ড্রেসিং নিজের করবেন বলেও জানান ডাঃ জাবের।
×