ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ আমাদের বিশ্বস্ত বন্ধু, দুই দেশ পরস্পরকে ‘স্টেন সাপোর্ট’ দিতে প্রস্তুত চীনা রাষ্ট্রদূত

চীন এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

চীন এখন বাংলাদেশের উন্নয়নের রোল মডেল ॥ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের রোল মডেল হলো চীন। দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনা মডেল অনুসরণ করেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে চায়। এক চীন নীতিতে বাংলাদেশের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ ও চীন একযোগে কাজ করতে পারে। মঙ্গলবার রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) সম্মেলন কক্ষে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এদিকে চীনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও চীন পরস্পর বিশস্ত সহযোগী। এই সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত করতে চায় দেশটি। বিআইআইএসএস-এর উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক : অংশীদারিত্বের ৪০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং। এতে দুই দেশের প্রায় ১০ জন সাবেক রাষ্ট্রদূত বক্তব্য রাখেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীন থেকে বাংলাদেশ শিখতে চায়। চীন বাংলাদেশের রোল মডেল। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চীনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বাংলাদেশের ৮টি বড় সেতু, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি, বড় পুকুরিয়া বিদ্যুত প্রকল্প, বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার ইত্যাদি খাতে চীনের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও আমরা চীনের জাতীয় স্বার্থকে শক্তিশালীভাবে সমর্থন দিয়ে আসছি। বিশেষ করে তাইওয়ান ও তিব্বতের প্রশ্নে বাংলাদেশ এক চীন নীতিতে শক্তিশালী সমর্থন দিয়ে চলেছে। তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে বাংলাদেশ। আর বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ আমদানির উৎস হলো চীন। সেখান থেকে অনেক পণ্য আমদানি হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক, তথ্য প্রযুক্তি, যোগাযোগ, সামরিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্ক গত ৪০ বছরে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। তিনি বলেন, চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে দুইটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোন তৈরি হচ্ছে। এখানে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিনিয়োগও বাড়বে বলে তিনি আশা করেন। সেমিনারে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিং চিয়াং বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪০ বছর পূর্তিতেই এটুকুই বলতে চাই বাংলাদেশ চীনের বিশ্বস্ত বন্ধু। দুই দেশই পরস্পর ‘স্টোন সাপোর্ট’ দিতে প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের আগামী প্রজন্ম দুই দেশের মধ্যে আরও শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরিতে এগিয়ে আসবে। এরমধ্যে দিয়ে দুই দেশই ভবিষ্যতে অনেক লাভবান হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করছি। সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়াং চুংগুই বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক বন্ধনও রয়েছে। চীনের এই সাবেক রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও চীন পরস্পর বিশস্ত সহযোগী। আমরা এই সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারিত করতে চাই। চীন বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করছে। বিদ্যুত, টেলিযোগাযোগ, প্রযুক্তি, তেল-গ্যাস-কয়লা খাতে চীনা বিভিন্ন কোম্পানির বাংলাদেশে বিনিয়োগ রয়েছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ বাড়বে। অনেক চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত রয়েছে বলেও তিনি জানান। ওয়াং চুংগুই বলেন, বাংলাদেশ ও চীন বিসিআইএম অর্থনৈতিক করিডর গঠন কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া দুই দেশই এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও মেরিটাইম সিল্ক রুটের সঙ্গেও যুক্ত। এসবই দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করছে। তিনি বলেন, আমি এদেশে ছিলাম। বাংলাদেশকে খুব ভাল বুঝি। বাংলাদেশকে আমি সেকেন্ড হোম মনে করি। আমরা এখন বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক উচ্চমাত্রায় নিতে আগ্রহী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত চাই জি, বেজিংয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন এ কামাল, বিআইআইএসএস চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, মহাপরিচালক এ কেএম আবদুর রহমান প্রমুখ।
×