ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শেখার আছে

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২৭ জানুয়ারি ২০১৬

শেখার আছে

অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস সুফল আনায় ব্যর্থতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। আত্মবিশ্বাস অবশ্যই ভাল, তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। আর আত্মতুষ্টি বাধা হয়ে উঠতে পারে আত্মোন্নয়নের; আত্মপ্রতিষ্ঠায় সেটি পেছনের দিকেও টেনে ধরতে পারে। লড়াইটা যখন দ্বিপাক্ষিক তখন প্রতিপক্ষকে অবমূল্যায়ন হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর। এসব কথা আসছে হাতের মুঠো থেকে সাফল্য গড়িয়ে পড়তে দেখে। জিম্বাবুইয়ের সঙ্গে টি২০ সিরিজে চার ম্যাচের প্রথম দুটিতে জয়ী হয়েও বাংলাদেশ পরের দুটি ম্যাচে টানা পরাজয় স্বীকারে বাধ্য হয়েছে। এই হার থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়ে ছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা- এমন কথা বরাবরই বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা আছে বটে। সেটি ব্যতিক্রম হিসেবেই চিহ্নিত। অঘটন বার বার ঘটে না। ক্রিকেট শক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই অঘটনের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। স্বদেশে সদ্যসমাপ্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট লড়াইয়ের শুরুর দিকে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই তার অর্জিত শক্তিমত্তার পরিচয় রেখেছিল। তারপরই দলটির ম্যানেজমেন্টকে পেয়ে বসল নিরীক্ষার বিলাসিতা। তৃতীয় ম্যাচে আত্মহননের প্রবল ইচ্ছা কেন পেয়ে বসল স্বাগতিক দলের কোচকে, সেটা কোটি টাকার প্রশ্ন। একটা দল ভাল খেলতে থাকলে, জিততে থাকলে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি বিরূপ পরিস্থিতিতেও পার করে নিয়ে যায়। কিন্তু সেই দলে বিরাট পরিবর্তন আনলে উদ্যম ও টিমওয়ার্কেও পরিবর্তন আসতে পারে। সর্বক্ষেত্রে সেটি ইতিবাচক নাও হতে পারে। যেমন এবার হয়েছে। তৃতীয় ম্যাচে ব্যাখ্যার অতীত এক দল নামিয়ে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ সূচনা করেছেন সেই মহাভুলের। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দুটি সিরিজই হেরে বিপর্যস্ত জিম্বাবুইয়ের কি ক্ষমতা ছিল এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর? আর চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং প্রতিটি অবস্থানেই শোচনীয় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ছক্কা পেটানোর বলে যেভাবে ক্যাচ তুলে দেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হলেন, তাতে মনে হচ্ছে ফুল টস বল কিভাবে খেলতে হবে সেটা তাদের নতুন করে শেখাতে হবে। জিম্বাবুইয়ের কাছ থেকে টাইগারদের শেখার আছে অনেক কিছু। মনোবল ধরে রেখে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগ যে খেলার ফল উল্টে দিতে পারে, সেটা স্মরণে রাখা চাই। ফুটবল প্রসঙ্গেও আমাদের আশার জায়গা রয়েছে। তবে শুধু আশা আর সদিচ্ছাই সব নয়, প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে নিজেদের উন্নীত করার। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে স্বাগতিকরা অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দেশবাসীর আকাক্সক্ষা বেড়েছিল। সাধ থাকলেই তো আর হয় না, থাকা চাই সামর্থ্য। গ্রুপ পর্যায়ে আমাদের ফুটবলাররা নেপালকে হারাতে পারেনি। সেই নেপাল শেষ পর্যন্ত হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। আন্তর্জাতিক ফুটবলে পারদর্শিতা দেখাতে হলে আমাদের ফুটবলের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। আমরা আশা করব, ফুটবলার এবং ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে আগামীতে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি করবেন। ভুলে গেলে চলবে না, ফুটবলই বাংলাদেশের আসল খেলা।
×