ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খালেদাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই মামলা: বিএনপি

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

খালেদাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই মামলা: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই সরকার ‘মিথ্যা’ মামলার আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করা সরকারের ‘ভয়াবহ চক্রান্ত’ হিসেবেও মনে করছে দলটি। খালেদার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এই মামলা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করবার জন্যে হীন উদ্দেশ্যে প্রণোদিত। “গণবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতেই এই ধরনের হীন মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ দেউলিয়া হয়ে এই শাসকগোষ্ঠি মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করবার ভয়াবহ চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা জানাই।” বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে সোমবার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহের এই মামলা করেন। তার মামলা আমলে নিয়ে ঢাকার হাকিম আদালত খালেদা জিয়াকে আগামী ৩ মার্চ হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে নিজের ব্যাখ্যা দিতে বলেছে। গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীতে একটি আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।” তার ওই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া হলেও বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, খালেদা ‘ভুল কিছু’ বলেননি। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল ২১ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের অপব্যাখ্যায় দলের তরফ থেকে দেওয়া বিবৃতির কথা তুলে ধরেন। “সেই বিবৃতিতে আমরা দৃঢ়ভাবে বলেছিলাম, তার বক্তব্যের উদ্ধৃত অংশটি ছিল মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সঠিক সংখ্যা নিরূপনের জন্য, যাতে করে শহীদদের প্রতি যথাযথ মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করা যায়।” তিনি বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, যুদ্ধাকালীন সেক্টর কমান্ডার, বীর উত্তম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী, নিজে দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হাতে কারাবন্দি ছিলেন। তিনি তিনবার দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ও গণমানুষের নেতা। “বেগম জিয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীলই নন, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও মর্যাদা সংরক্ষণ এবং তাদের পরিবারবর্গ ও সন্তানদের সার্বিক কল্যাণের ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলেন, যা অতীতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেও করেনি।” মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস রচনায় শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রকল্প গ্রহণ ছাড়াও খালেদা জিয়ার সরকার সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে সংরক্ষণ করতে স্মৃতিস্থাপনা নির্মাণ করেছিল বলেও দাবি করেন তিনি। খালেদা জিয়াসহ দলের সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×