ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাহিদদের পর এবার পালা বাকি সাতজনের, বাফুফে তদন্ত কমিটির সুপারিশে বাদ দেয়া হচ্ছে অধিনায়ক মামুনুলসহ আট ফুটবলারকে

ঢেলেসাজা হচ্ছে জাতীয় ফুটবল দল

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

ঢেলেসাজা হচ্ছে জাতীয় ফুটবল দল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কথায় আছে, ‘দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল।’ অবশেষে দেরিতে হলেও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সেটা অনুধাবন করতে পেরেছে এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও শুরু করেছে। মাত্রাতিরিক্ত উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য ইতোমধ্যেই জাতীয় দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে উইঙ্গার জাহিদ হোসেনকে। এখানেই শেষ নয়, সাফ ফুটবল ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে বাংলাদেশ জাতীয় দল কেন ব্যর্থ হলো, সেটা খতিয়ে দেখতে যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে বাফুফের কাছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, সেখানে তাদের সুপারিশ থাকবে জাতীয় দলের আট ফুটবলারকে দল থেকে বাদ দেয়া হোক। সম্প্রতি সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের পরই ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দল সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। এই দুই টুর্নামেন্টে বিদায়ের পরই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটি দলের ব্যর্থতার জন্য অধিনায়ক মামুনুল, জাহিদ, এমিলিসহ আট ফুটবলারকে জাতীয় দল থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বাফুফের কাছে এখনও জমা না পড়লেও অনুসন্ধানে জানা গেছে অন্য ফুটবলাররা হলেন : আতিকুর রহমান মিশু, মিঠুন চৌধুরী, ইয়াসিন খান, সোহেল রানা ও শহীদুল আলম সোহেল। ইতিমধ্যে উইঙ্গার জাহিদ হোসেনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে জাতীয় দলের বাইরে। মূলত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের মাঝেই খেলোয়াড়দের ইউরিন টেস্ট করা হয়েছিল। নমুনা মূত্রে এ্যালকোহলের উপস্থিতি ছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাঠের বাইরে বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য খেলোয়াড়রা মাঠে তাদের সেরাটা দিতে পারেননি বলেই দলের এমন দশা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালদ্বীপের বিপক্ষে হেরে সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ। তারপরই বাফুফে ভবনে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার এক বৈঠকে বসেন বাফুফে কর্তারা। সেখানেই জাতীয় দলের ব্যর্থতা অনুসন্ধানের জন্য ইলিয়াস হোসেন, শেখ মো. আসলাম ও আজমল আহমেদ তপনকে নিয়ে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য তদন্ত কমিটির কার্যক্রম রাখা হয়েছিল স্থগিত। ফলে সাফের সঙ্গে হয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের ব্যর্থতার তদন্ত রিপোর্ট। এরপর ঘরের মাঠে বঙ্গবন্ধু কাপে সেমিফাইনালে দুর্বল বাহরাইনের কাছে এক গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় বাংলাদেশ। এরপরই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করে বাফুফে। এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে যে মানের বিদেশী দল অংশগ্রহণ করেছে তাতে করে বাংলাদেশ দলের শিরোপা জেতা উচিত ছিল বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অনেকেই। টুর্নামেন্টের শুরুতে জাতীয় দলের তুলনায় অলিম্পিক দলই বেশি ভাল খেলা উপহার দিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করে। কিন্তু পরের ম্যাচগুলোতে আর সেই মুগ্ধ হওয়ার কোন অবকাশই দেয়নি তারা। কোন জয় ছাড়াই তারা শূন্য হাতে এবং পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থেকে বিদায় নেয়! পক্ষান্তরে জাতীয় দল ভাগ্যের জোরে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে গেলেও তাদের খেলা সেভাবে মন ভরাতে পারেনি বাংলাদেশী ফুটবলপ্রেমীদের। সেমিতে তারা বাহরাইনের কাছে হেরে বিদায় নেয়। অথচ এই বাহরাইনের সঙ্গেই গ্রুপ ম্যাচে ড্র করার কৃতিত্ব দেখিয়েছিল বাংলাদেশ অলিম্পিক দল। ছোটরা হারলো না, আর বড়রা হারলো ... এটা বাংলাদেশ দলের জন্য লজ্জার বলেই মনে করছেন ফুটবলবোদ্ধারা। আর এমন লজ্জাতে আক্রান্ত হন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনও! আট ফুটবলারের নাম প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর ফুটবলাঙ্গনের সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা বলছেন, এদের দিয়ে ফুটবল আর চলে না। তাদের দিয়ে ভাল আর কিছু হবে না। বাফুফের উচিত ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত করা। তরুণ-নবীন ফুটবলারদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে আগামী দিনের জন্য গড়ে তোলা, যাতে তারা সফল হতে পারে। অথচ এদের নিয়েই দলবদল উপলক্ষে বিভিন্ন ক্লাব টানা-হ্যাঁচড়া করে, যা রীতিমতো ন্যক্কারজনক। বাংলাদেশ দলে এখন কোন ফরোয়ার্ডই নেই! তাদের খেলা দেখে দেশবাসী যেখানে হতাশায় বিমূঢ়, তখন কিনা তিনটি দেশীয় ক্লাব তাদের বিবেচনা করলেন ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ হিসেবে! যা ছিল হাস্যকর, বিস্ময়কর, লজ্জাকর! এখন দেখার বিষয়, এই আট ফুটবলারকে জাতীয় দল থেকে বাদ দিয়ে বাফুফে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশংসিত হতে পারে কি না।
×