ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘একুশের গ্রন্থমেলা : প্রকাশনার মানোন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

‘একুশের গ্রন্থমেলা : প্রকাশনার মানোন্নয়ন’ শীর্ষক আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তিন হাজারের বেশি বই। তবে হাজারও বইয়ের ভেতরে মানসম্পন্ন বই খুঁজতে গেলে হিমশিম খেতে হয় মননশীল পাঠককে। গল্প-উপন্যাস, কবিতা থেকে শুরু করে প্রবন্ধ কিংবা গবেষণাধর্মী মানসম্পন্ন বইয়ের সংখ্যা থাকে খুবই নগণ্য। এ প্রেক্ষাপটে চলতি বছরের বইমেলাকে সামনে রেখে মানসম্পন্ন গ্রন্থের প্রকাশনা বিষয়ক আলোচনা সভার আয়োজন করে গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। সোমবার বিকেলে একাডেমির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের সভাকক্ষে অমর একুশে গ্রন্থমেলা : প্রকাশনার মানোন্নয়ন শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। গ্রন্থের মান উন্নয়ন বিষয়ক এ আলোচনায় অংশ নেন লেখক, প্রকাশক, কবি, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রাবন্ধিক ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, প্রকাশনার মানোন্নয়নের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এদেশের জাতীয় মর্যাদা। অথচ প্রতিটি গ্রন্থমেলায় তিন থেকে চার হাজার বই প্রকাশ করাটা এখন বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বইমেলা মানে বাণিজ্যমেলা নয়; এটা বাঙালী জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তাই এমন একটি মেলায় বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের নিজেদের কা-জ্ঞান থাকা উচিত। একইভাবে বই প্রকাশ ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রকাশকদেরও সচেতন হতে হবে। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। একুশের গ্রন্থমেলা ও বাংলাদেশের প্রকাশনার মানোন্নয়ন বিষয়ে লিখিত ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন গবেষক বদিউদ্দিন নাজির। একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেনÑ ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক, ইমেরিটাস প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, চিত্রশিল্পী হাশেম খান, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত, কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ, কবি তারিক সুজাত, লেখক আহমাদ মাযহার, প্রকাশক মিলন কান্তি নাথ, ফরিদ আহমেদ, নিশাত জাহান রানা, আলমগীর সিকদার লোটন, খান মাহবুব, সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, সালাম যুবায়ের, আসিফুর রহমান সাগর প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেনÑ গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সুভাষ সিংহ রায়, প্রকাশক সবিহ উল আলম, জসীম উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, কামরুজ্জামান কাজল, তারিকুল ইসলাম রনি এবং একাডেমির সচিব ও পরিচালকবৃন্দ। বৈঠকের সার্বিক ব্যবস্থানায় ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রকাশনা শিল্প অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। সীমাবদ্ধতা যেগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করা কঠিন নয়। যতœবান হলেই এসব ভুল দূর করা সম্ভব। সামগ্রিক প্রয়াস না থাকায় বই প্রকাশনা অবিমিশ্র কল্যাণকর হচ্ছে না। এজন্য বানান ভুলের মতো বিষয়ে যতœবান হতে হবে। এছাড়া গ্রন্থের মান নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রকাশনার সম্পাদনা পরিষদ থাকা উচিত। ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক বলেন, লেখার মানের দিকে নজর দেয়া ছাড়া উপায় নেই। লেখক-প্রকাশকরা নিজেরা যদি সচেতন না হন তাহলে এই বাজে বই প্রকাশ বন্ধ হবে না। সম্পাদনা ও পা-ুলিপি যাচাই-বাছাই গুটিকয় প্রকাশক ছাড়া আর কেউ করে না। এ ব্যাপারে সরকার, লেখক-প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, কিছু ভাল বই বের হয় সেটা নিশ্চিত। তবে খারাপ বই নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে কিছু ভাল বই যাতে প্রকাশিত হয় সেদিকে নজর দেয়া জরুরী। কতগুলো ধান এলো সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ধানে চিটা কতটুকু হলো সেটা বিবেচ্য নয়। প্রকাশনা সংস্থা ইউপিএলের পরিচালক ইমিরেটাস প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশের লেখার মান একধাপও এগোয়নি। পুস্তক প্রকাশনা চলচ্চিত্র প্রযোজনার মতোই। এখানে কপি এডিটিং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রকাশকদের পৃষ্ঠপোষকতা না করলে বই প্রকাশনার মান উন্নত হবে না বলে মত দেন তিনি। প্রকাশনার উন্নয়নে প্রকাশকদের বিদেশ থেকে আধুনিক প্রকাশনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন এই বর্ষীয়ান প্রকাশক। সূচনা বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা একাডেমি একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের উন্নয়ন ও সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা দেশের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাবনা-বিনিময়ের চিন্তা থেকে এ গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করেছি। আমরা আশা করি এর মধ্য দিয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজনের পাশাপাশি সারাবছর প্রকাশনা শিল্পের সার্বিক উন্নয়নের রূপরেখা খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। আলোচনায় অংশ নেয়া অন্য বক্তারা বলেন, যে বই জনপ্রিয়তার কাছে দাসত্ব করছে সে বই খারাপ বই। যে বই মননকে স্পর্শ করে, ঋদ্ধ করে সে বই ভাল বই। ফলে ভাল বইয়ের সংজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আজেবাজে প্রকাশনার ভিড়ে ভাল বই হারিয়ে যাচ্ছে। তাই মানসম্পন্ন বইয়ের প্রকাশনা ও বিপণন ব্যবস্থায় গতি আনয়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের প্রয়াসে বাংলা একাডেমির পাশাপাশি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে সক্রিয় করতে হবে এবং সরকারী বই ক্রয়ে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ পরিস্থিতিতে সম্পাদনা ও পা-ুলিপি যাচাই-বাছাইসহ মনসম্পন্ন লেখকদের বই প্রকাশ ও লেখক সৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দেন বক্তারা। তারা বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের প্রকাশনা শিল্প সংখ্যাগত দিক দিয়ে উৎকর্ষ লাভ করলেও গুণগত দিকটি গভীরভাবে ভাবনার বিষয়। বিশেষ করে লক্ষ্য করা যায় গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে অতিদ্রুত মানহীন প্রকাশনার তালিকা আমাদের দেশে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এ বিষয়ে একটি যাচাই-বাছাই পরিকাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লেখক ও পাঠক উভয়ই দেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রকৃত বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারেন। বক্তারা আরও বলেন, দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেন মানসম্পন্ন পাঠ্য ও মননশীল বই পৌঁছায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব ॥ ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন সেøাগানে চলছে নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ আয়োজিত এ উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল সোমবার। এদিন রাজধানীর ৪টি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় ৩২টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী সেমিনার। দুই পর্বে বিভক্ত এই সেমিনারের বিষয়Ñ ‘শিশুদের ওপর নির্যাতন’। এ বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক গীতা চক্রবর্তী।
×