ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘এ ত্যাগের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে না’

‘খালেদা মুক্তিযুদ্ধের সময় কারাবরণ করেছিলেন’ তথ্য ফখরুলের

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

‘খালেদা মুক্তিযুদ্ধের সময় কারাবরণ করেছিলেন’ তথ্য ফখরুলের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাকে সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে দেশের রাজনীতি থেকে সরাতে চায় বলেই তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করিয়েছে। বেগম জিয়া বাইরে থাকলে, রাজনীতিতে থাকলে, রাস্তায় বের হলে তাদের টনক নড়ে যায়। তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। সেজন্য তারা বেগম জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে চায়। দেশের মানুষ এ চেষ্টা কোনভাবেই মেনে নেবে না উল্লেখ করেন তিনি। সোমবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সেমিনার হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার এক বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে করা নালিশী মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেন আদালত। তাকে আগামী ৩ মার্চ সশরীরে আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, তিন বারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে একটা পর একটা মিথ্যা মামলা করছে সরকার। দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা, অমুক মামলা করছে। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করা হলো। যিনি ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রের জন্য কারাবরণ করেছেন। যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। যিনি পরবর্তীকালে গণতন্ত্রের জন্য ৯ বছর আন্দোলন করেছেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা পরিহাস ছাড়া কিছু না। মামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে রাষ্ট্রদ্রোহিতার চিহ্নমাত্র ছিল না। বরং তিনি বলেছেন, এটার একটি সঠিক হিসেব হওয়া উচিৎ। এ হিসেব অনুযায়ী আমাদের প্রকৃত শহীদদের মর্যাদা দিতে পারি। যার ব্যাখ্যা আমি একটি বিবৃতি দিয়ে গোটা জাতিকে জানিয়েছি। অথচ ওই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার দেশকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ফেলেছে। গ্রাম পর্যায়েও এ বিভক্তি নিয়ে গেছে। চায়ের দোকানেও দল বিবেচনায় ক্রেতার আগমন ঘটে। গ্রাম্য সালিসেও দল বিবেচনায় বিচার হয়। সরকার সচেতনভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এটা করেছে। পাকিস্তান আমলে আইয়ুবের শাসনের সময়ের চেয়েও দুঃসময় চলছে মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, এখন কথা বললে, মতামত দিলেই অপরাধ। কেউ নিরাপদে নেই। সবকিছু চলছে স্বৈরাচারের ইচ্ছানুযায়ী। তারা যা চাইবে, তাই হবে। ফলে গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দেশের সমৃদ্ধি, মানুষের আয় বৃদ্ধি ও গণতন্ত্রকে বিকশিত করার জন্য অবশ্যই জনগণের একটা ঐক্য দরকার। নেতাকর্মীদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, অধিকার রক্ষায় নিজেদেরই ব্যবস্থা নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এসে সাহায্য করবে না। তিনি বলেন, দেশকে বিভক্ত করে, কথায় কথায় জঙ্গীবাদ বলে মানুষকে হয়রানি করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে জঙ্গীবাদকে ঠেকানো যাবে না। এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই। উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসের কোন স্থান নেই। বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নয় সঙ্গে নিয়ে উগ্রবাদকে ঠেকাতে হবে। তিনি বিএনপিকে উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দল দাবি করে বলেন, আমাদের সংগ্রাম ক্ষমতায় বসার জন্য নয়। এ সংগ্রাম গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে আনার। দেশকে রক্ষা করা, স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদীর হাত থেকে, ভয়ঙ্কর উগ্রবাদ থেকে রক্ষা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম। এ সংগ্রামে জয়ী হতে হবে। এর বিকল্প নেই। এজন্য সবাইকে সংগঠিত করতে হবে। যেভাবে মানুকে ৭১ ও ৯০ সালে সংগঠিত হয়েছিল। যুবদল ও স্বেচ্ছসেবক দল বিক্ষোভ পালন করবে আজ ॥ এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ দেশের প্রত্যেক জেলা ও মহানগরীতে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল ও স্বেচ্ছসেবক দল। কোকোর মৃত্যুর জন্য দায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ॥ বিএনপি নেতারা ॥ এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর জন্য পরোক্ষভাবে এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দায়ী করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেছেন, ওই সরকার কোকোকে গ্রেফতার করে মানসিক নিপীড়ন না চালালে হয়তো এত তাড়াতাড়ি তার মৃত্যু হতো না। সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন।
×