ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘সংযত হয়ে কথা বলুন’ প্রধান বিচারপতির প্রতি সুরঞ্জিত

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

‘সংযত হয়ে কথা বলুন’ প্রধান বিচারপতির  প্রতি সুরঞ্জিত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবসরে যাওয়ার পর বিচারকদের রায় লেখা ‘সংবিধান পরিপন্থী’Ñ প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্য অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এমপি। সোমবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে সদ্য প্রয়াত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্মরণে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সাংবিধানিকভাবে তিনি (প্রধান বিচারপতি) দেশের প্রধান তিন জনের একজন। প্রধান বিচারপতিরা প্রধান বিচার করেন, প্রধান প্রধান কথা বলেন না। তবে এই পদে থেকে সাধারণত প্রধান কথা শুনা যায় না। এই পদে থেকে বর্তমান প্রধান বিচারপতি এমন কিছু কথা বলে ফেলেছেন যা জাতীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। এটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে কথা বলতে বলতে তিনি কোথায় চলে যাচ্ছেন- যাতে এর সীমানা থাকছে না।” তিনি বলেন, “এখন তিনি (প্রধান বিচারপতি) এমন কিছু কথা বলেছেন যা সংবিধানের কোথাও নেই। সংবিধানের কোন্ জায়গায় লেখা আছে বিচারপতিরা অবসরে গেলে রায় লেখা যাবে না? এ কথা সংবিধানের কোথাও লেখা নেই। নিজস্ব কোন্দলের জন্য জাতীয়ভাবে এত বড় একটা উত্তেজনা সৃষ্টি করবেন এটা আমরা আশা করি না। আপনার এ কথা অনাকাক্সিক্ষত, অনভিপ্রেত, যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।” সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে সংযত হয়ে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে এই সংবিধান প্রণেতা বলেন, “আপনার এই কথা কোন রাষ্ট্রীয় সহনশীলতার কথা নয়। আপনারা দুই বিচারপতির মধ্যে গোলমাল, আক্রোশ-বিক্রোশ এটা বাইরে আসবে কেন? আমি এবং তুমি এটা জনগণ জানবে কেন? আপনাদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, আর আপনি সেটা নিয়ে পাবলিকলি কথা বলে অনেককে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এতে আমরা খুবই মর্মাহত। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে সুরঞ্জিত বলেন, “আপনি কথাবার্তা আরও সংযত হয়ে বলুন। এমন কোন কথা বলবেন না যা জাতীয় জীবনে রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে, সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। যত কথা কম বলা যায় ততই ভাল। আপনার এখনও সময় আছে। প্রতিষ্ঠানটির কথা চিন্তা করুন।” আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের প্রতি এমনিতেই আমরা সম্মান একটু বেশি দেখাই। তাই তাদের কথাবার্তায় সাবধানতা থাকা উচিত। তাহলে সম্মান বোধটা কমবে না। ওনি যা বলেছেন এটা তো কোন আইন নয়। ওনি যদি মনে করেন শপথ শেষ হয়ে গেলে আর বিচার দেখতে দেব না- সেটা অবসরে যাওয়ার কতদিন আগ থেকে জাজমেন্ট ঘোষণা করতে হবে? এটাও আইনে আনতে হবে। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু হলে এটা বাতিল করতে পারে হাইকোর্ট। বিচার বিভাগকে সেই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।” সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আরও বলেন, “আপনাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর রাগ-অভিমান, বিদ্বেষ সব ভুলে গিয়ে দেশের জন্য, জাতির জন্য আপনার কাজ করে যাওয়ার কথা। আর আপনি বলে উঠলেন আপনার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। আইনের শাসনের যুগ, আপনারা তো স্বাধীন, আলাদা। সংবিধানে স্পষ্ট লেখা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি এই তিনটি অঙ্গনই একে অপরের পরিপূরক।” এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। তার মানে এই নয়, আজ মামলা হয়েছে, কাল উনাকে (খালেদা জিয়া) হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, উনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন, আবার জামিনের আবেদনও করতে পারেন। বাংলাদেশের কেউ আইনের উর্ধে নয়। তাই আমি তাঁকে (খালেদা জিয়া) বলব- আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
×