ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে শিশুসহ কয়েক হাজার আক্রান্ত

সূর্যের দেখা নেই, তীব্র শীতে কুড়িগ্রামে একজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

সূর্যের দেখা নেই, তীব্র শীতে কুড়িগ্রামে একজনের মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় সারাদেশে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত তিন দিনে সূর্যের দেখা না পাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বিভিন্ন জেলায় ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশুসহ কয়েক হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। প্রচণ্ড শীতে কুড়িগ্রামে মারা গেছে এক বয়োঃবৃদ্ধ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার। কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। ঠাণ্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর হতে বের হচ্ছে না মানুষ। এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঠাণ্ডাজনিত রোগে রৌমারী খাটিয়ামারী গ্রামে সমেজ উদ্দিন (৮৫) নামের এক বৃদ্ধ মারা গেছে। গত ৩ দিন ধরে দিনের বেশিরভাগ সময় সূর্যের দেখা না মেলায় বেড়েই চলেছে শীতের তীব্রতা। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধরা। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে এক শ’ ৫৬ জন রোগী। এদের মধ্যে শিশুর সংখ্যাই বেশি। প্রচ- ঠা-ায় দুর্বল হয়ে পড়েছে গবাদী পশুরা। অনেকে খর-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। উত্তরীয় হিমেল হওয়ায় ঠা-ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় কাজে যেতে পারছে না শ্রমজীবী মানুষরা। এদিকে বোরো মৌসুম শুরু হলেও কনকনে ঠা-ায় মাঠে কাজ করতে পারছে না কৃষি শ্রমিকরা। অনেকে কাজের সন্ধানে বের হলেও কাজ জুটছে না তাদের। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ইনডোরে ডায়রিয়ায় ৩০ ও নিউমোনিয়ায় ৩০ শিশুসহ মোট এক শ’ ৫৬ জনকে ও আউটডোরে প্রতিদিন আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। নওগাঁ ॥ কয়েকদিন ধরে জেলাটিতে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার এ অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ ডিগ্রী সেলনিয়াস। ঠা-াজনিত রোগে চলতি মাসে জেলার ১১টি উপজেলার বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার তিনশ’ ২১ জন এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছয় শ’ ২৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এদিকে শুধু নওগাঁ সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে দুই শ’ ৮০ জন এবং ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সাত শ’ ৩৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাঃ একেএম মোজাহার হোসেন বুলবুল বলেন, চলতি সপ্তাহে জেলার ১১টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং নওগাঁ সদর হাসপাতাল মিলে প্রতিদিন এক শ’ ৩০ থেকে এক শ’ ৫০ রোগী ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। রাজশাহী ॥ শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ৫ দিনে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গড়ে অন্তত ৪০ জনের বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে। গত ৫ দিনে দুই শ’র বেশি শিশু ভর্তি হয়েছে। জানা গেছে, শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস ও ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সোমবার দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠা-াজনিত শ্বাসকষ্টের কারণেই বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে। রামেকের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হাসপাতালের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের (শিশু ওয়ার্ড) ইনচার্জ ডাঃ আজগর আলী জানান, শীতজনিত কারণে কোন শিশু মারা যায়নি। নবজাতকরা অন্য অসুখে মারা যাচ্ছে। তবে এ সময় ঠা-াজনিত রোগে যেমন নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিসে আক্রান্ত শিশু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। যারা মারা যাচ্ছে, তারা বাইরে থেকেই মুমূর্ষু অবস্থায় এসে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসা শুরুর আগেই অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। রংপুর ॥ গত তিন দিনের টানা শৈত্যপ্রবাহ আর ঘন কুয়াশায় উত্তরের জনপদ রংপুর অঞ্চলের জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অচল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক কর্মকা-। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল রাতে যানবাহন এবং ট্রেন চলাচল করছে হেড জ্বালিয়ে। এদিকে আবহাওয়ার এই বৈরিতায় সবচেয়ে বেশি কাহিল হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল এবং খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা। সরকারী বেসরকারীভাবে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। মাগুরা ॥ অব্যাহত শীত ও কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলা কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল। শীতের হাত থেকে বাঁচতে অনেকে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে এ জেলাতেও শিশুরা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। সদর হাসপাতালে শিশুরোগীদের ভিড় বাড়ছে।
×