ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

৩ মার্চের মধ্যে আদালতে হাজির হয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাসহ বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে হবে

খালেদার বিরুদ্ধে সমন

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

খালেদার বিরুদ্ধে সমন

সৈয়দা ফরিদা ইয়াসমিন জেসি ॥ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তিজনক মন্তব্য করার ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমন জারি হয়েছে। আদালত আগামী ৩ মার্চের মধ্যে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ড. মোমতাজউদ্দিন আহমদ মেহেদীর দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় এ আদেশ দেয়া হয়। সম্প্রতি খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা নয়, বরং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ হওয়ার তথ্য নিয়েও তিনি সংশয় ব্যক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্য নিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আসায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এরপরই বাদী রাষ্ট্রদোহ মামলার উদ্যোগ নেন। সোমবার মামলার বাদী ড. মেহেদী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের নেতৃত্বে শতাধিক আইনজীবী নিয়ে মামলা দায়েরের জন্য ঢাকার সিএমএম আদালতে আসেন। তাঁর পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। শুনানিতে তাকে সহায়তা করেন ঢাকা জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর খোন্দকার আব্দুল মান্নান, ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, এ্যাডভোকেট একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, এ্যাডভোকেট সালমা হাই টুনি প্রমুখ আইনজীবীগণ। খালেদার বিরুদ্ধে হাজিরের সমন জারি হওয়ার পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ করেছেন। বাংলাদেশের আইনে যে কোন বিচারপ্রার্থী আদালতে গিয়ে অভিযোগ জানিয়ে প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে কারও বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করতে চাইলে সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়। আইনজীবী নেতা ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট মেহেদীর এ সংক্রান্ত আবেদনের পর গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দেয়। এ্যাডভোকেট মেহেদীর আবেদনের পর রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক মমতাজউদ্দীন আহমেদের আবেদন বিবেচনায় এনে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী আরও বলেন, “এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাদের কাছে এসেছিল। আমরা একটা গাইডলাইন দিয়েছি। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।” মামলা হলে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।” মামলায় দ-বিধির ১২৪ (ক) ধারার রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের পাশাপাশি ১২৩ (ক) ধারায় বাংলাদেশ সৃষ্টির নিন্দা ও তার সার্বভৌমত্ব বিলোপে সমর্থন করার এবং ৫০৫ ধারায় জনগণের অনিষ্ট সাধন সহায়ক বিবৃতি দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। আদালত ৩টি ধারায়ই অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারির ওই আদেশ দেন। মামলার ৩টি ধারার মধ্যে ১২৪ (ক) ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন পর্যন্ত সশ্রম কারাদ- ও সর্বনিম্ন ৩ বছর কারাদ- ও যে কোন পরিমাণ অর্থদ- অথবা শুধু যে কোন পরিমাণ অর্থদ-, দ-বিধির ১২৩(ক) ধারায় সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম কারাদ-সহ অর্থদ- এবং দ-বিধির ৫০৫ ধারায় সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদ- ও অর্থদ- অথবা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। মামলায় দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার প্রকাশক এসএম বক্স কল্লোলসহ ৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। বাদী আদালতে দেয়া জবানবন্দীতে বলেন, গত ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, তিনি তো (বঙ্গবন্ধু) বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ‘আজকে বলা হয়, এত (৩০ লাখ) শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও তো অনেক বিতর্ক আছে।’ এ বক্তব্য পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিস্তারিত প্রকাশিত হয়। বাদী জানান, এমন বক্তব্য রাখার কারণে ২৩ ডিসেম্বর খালেদা জিয়াকে একটি লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে খালেদা জিয়াকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তিনি সাড়া দেননি। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। আবেদন অনুযায়ী গত ২১ জানুয়ারি মামলার অনুমতি প্রদান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাদী আরও বলেন, খালেদা জিয়ার উক্ত বক্তব্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল ঘোষণা পত্রের পরিপন্থীই নয়, দেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে বর্তমান সরকারের প্রতি ঘৃণার সঞ্চায় করেছে- যা দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। যা দ-বিধির ১২৩(ক), ১২৪ (ক) এবং ৫০৫ ধারার অপরাধ। তাই অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হোক। এদিকে মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সমন জারির আদেশ হওয়ার পর বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালত ভবনের সমনে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিক্ষোভ মিছিল করেন। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেছেন, এটা সরকারের একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, এর কোন ভিত্তি নেই, যা ম্যাডাম আইনগতভাবেই মোকাবেলা করবেন। একই অভিযোগে গত ২৭ ডিসেম্বর দ-বিধির ১২৩ (ক) ধারায় বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট মশিউর মালেক একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সরকারের অনুমতি গ্রহণ করে শাহবাগ থানাকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়া একই অভিযোগে নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মানহানির মামলা হয়।
×