ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মঘট প্রত্যাহার, তবে-

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

ধর্মঘট প্রত্যাহার, তবে-

চট্টগ্রামে বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক, চেম্বার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেবাদান বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করেছেন চিকিৎসকরা। অব্যাহত এই ধর্মঘটে দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার রোগী ও তাদের স্বজন। টানা কয়েকদিনের চিকিৎসক ধর্মঘটে চিকিৎসা সেবাবঞ্চিত রোগীরা ছুটেছেন রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহে। রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দু’জন ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলার পর এর প্রতিবাদে চিকিৎসকরা এই কর্মসূচী পালন করেন। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ১০ জানুয়ারি একজন প্রসূতি বাচ্চা জন্ম দেয়ার পর মারা যান। এ ঘটনায় যে দু’জন চিকিৎসক অস্ত্রোপচার করেছেন তাদের আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন ঐ রোগীর পরিবার। অপর এক ঘটনায় চমেক হাসপাতালে অপারেশনের সময় নুরুল আবছার নামে এক কিশোরের অপারেশনের সময় পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক সহকারী রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে পৃথক একটি মামলা করেন ওই কিশোরের বাবা। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান করে বিএমএ। সেবার ব্রত নিয়ে যারা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত আন্দোলনের নামে তাদের এহেন আচরণ প্রত্যাশিত নয়। তবে আশার কথা এই যে, আপাতত ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। প্রায়ই ডাক্তারদের কর্মবিরতি কিংবা ধর্মঘট করতে দেখা যায়। এর পেছনে কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আমলে নেয়ার মতো নয়। কোন্্টি ঠুনকো আবার কোন্্টি হয়ত যুক্তিযুক্ত। কিছুদিন আগে ঢাকা মেডিক্যাল, বারডেম, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ডাক্তারদের কর্মবিরতি পালন করতে দেখা গেছে। সে সময়ও রোগীদের দুর্ভোগের কথা শোনা গেছে। কখনও রাজনৈতিক কারণ কখনওবা রোগীদের স্বজন কর্তৃক ডাক্তারদের লাঞ্ছিত কিংবা মারধরের ঘটনায় ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন। রাজনৈতিক ঘটনাগুলো ডাক্তারদের এড়িয়ে যাওয়া উচিত। দল বা মতের সমর্থন করা দোষের নয়, তবে তাতে যদি চিকিৎসাধীন রোগীদের জীবনহানির আশঙ্কা সৃষ্টি হয় কিংবা রোগীদের নিয়ে স্বজনরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে তবে ডাক্তারদের প্রতি রোগীর আত্মীয়স্বজন আস্থা হারিয়ে তাদের প্রতি ভিন্ন ধারণার সৃষ্টি হবে। যা কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। চট্টগ্রামে এবার যে কারণে ধর্মঘট তা এখন আইনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত। বাদী মামলা না উঠালে তা আইনীভাবেই মোকাবেলা করা সমীচীন। শর্ত বা বলপূর্বক এর সমাধান সঠিকপথ নয়। ডাক্তাররা ভুলের উর্ধে নন। অন্যান্য পেশাজীবীর মতো তাদেরও ভুল হওয়া স্বাভাবিক। সে জন্যই চিকিৎসা পেশাকে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। ডাক্তারের অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত ভুল যেভাবেই হোক যদি কোন রোগীর প্রাণহানি কিংবা অঙ্গহানি হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই রোগীর আত্মীয়স্বজন মানতে চাইবে না। সাধারণ মানুষ চিকিৎসা বা রোগ সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ। চিকিৎসকরা যা বলে তা ভক্তি-শ্রদ্ধা নিয়েই বিশ্বাস করে, সে অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করে। এ কথা সত্য, অনেক সময় চিকিৎসাধীন কোন রোগী অপচিকিৎসায় মারা না গিয়ে স্বাভাবিক কারণে মারা গেলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় রোগী মারা গেছে বলে রোগীর আত্মীয়স্বজন মনে করে। এ কারণে ডাক্তাররা লাঞ্ছিত হয়ে থাকেন। যার কারণে ডাক্তাররা অনশন কিংবা কর্মবিরতিতে বাধ্য হন। তবে যে কারণে চট্টগ্রামে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার যথাযথ তদন্ত করা হোক। চিকিৎসক দায়ী হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক। চিকিৎসক এবং রোগী ও তার স্বজনদের মধ্যে যে সম্পর্ক তা সব সময় সুদৃঢ় থাকুক। রোগীদের জিম্মি করে, সেবা না দিয়ে দুর্ভোগ সৃষ্টি করা কাম্য হতে পারে না।
×