ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ান

শীতে কাতর সারাদেশ। মাঘের শীতে বাঘ পর্যন্ত পালিয়ে বাঁচতে চায় বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। সুন্দরবনের বাঘের অবস্থা এই মুহূর্তে জানা না গেলেও প্রকট শীতে রাজধানীসহ সারাদেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ যে বহুগুণে বেড়েছে, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। গত সপ্তাহে রাজধানীসহ সারাদেশে কমবেশি হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। তখনও দেশজুড়ে জেঁকে বসেছিল শীত। স্বভাবতই অনেকেই আশা করেছিলেন মেঘের কোলে রোদ হাসলেই বুঝি কমে আসবে শীতের প্রকোপ! বাস্তবে ঘটছে এর উল্টো। শীতের মাত্রা আরও বেড়েছে। আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন আরও শীত ও শৈত্যপ্রবাহের। দেশের নদী-নদীর অববাহিকা ও সংলগ্ন এলাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঝুলে থাকে ঘন কুয়াশা। রাজধানীতে দীর্ঘক্ষণ বিরাজ করে মাঝারি থেকে হাল্কা কুয়াশা। আড়মোড়া ভেঙ্গে মহানগরীর ঘুম ভাঙ্গে কিছু বিলম্বে। টাঙ্গাইল, শ্রীমঙ্গল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুমারখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ওপর মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে কয়েকদিন। সে ক্ষেত্রে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার বিস্তার ঘটবে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও। পার্বত্য জেলাগুলোসহ সিলেট বিভাগেও অনুভূত হচ্ছে শীতের তা-ব। তবে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে চা বাগানের গাছগুলোর অবস্থা সজীব ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। হাড়হিম করা বাতাস তথা শৈত্যপ্রবাহের কারণে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে অনেক। বিলম্বে সূর্যের মুখ দেখা যাওয়ায় গাছপালা, তরুলতা, বিরাণ প্রান্তর ও নদ-নদীগুলো উত্তাপ ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। শীতের প্রকোপ বৃদ্ধির এটিও একটি অন্যতম কারণ। আপাতত তাপমাত্রা সর্বোচ্চ টেকনাফে ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী এবং রাজশাহী, সৈয়দপুর ও চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। রাজধানীতে যথাক্রমে ২০ দশমিক ৮ ও ১৩ দশমিক ২ ডিগ্রী। শীতকালে শীত পড়বে, এটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। হাল্কা-পাতলা বৃষ্টিপাত, ঘন ও মাঝারি কুয়াশা এবং মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও অপ্রত্যাশিত নয়। তবে হঠাৎ করে তাপমাত্রার হেরফের হওয়ায় এবার বুঝি শীত অনুভূত হচ্ছে কিছু বেশি। ঘরে ঘরে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি-কাশি-হাঁচি-জ্বর, হুপিংকাশিসহ শীতকালীন ডায়রিয়ায়। শীতের অসুখ-বিসুখের মধ্যে সর্বাধিক প্রাণঘাতী হলো নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস- বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য। কক্সবাজারে ১৭ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত মারা গেছে অর্ধশতাধিক। হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরও আছে। তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় বেড়ে যায় মৃতের সংখ্যাও। নৌপথে ব্যাহত হয় নৌযান চলাচল। অকাল বৃষ্টিতে চা বাগানের পাতা তরতাজা ও পরিপুষ্ট হলেও উপকূলে শুঁটকি ও লবণ উৎপাদন হয় ব্যাহত। শাকসবজি ও রবিশস্যের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। পাশাপাশি সরকার, এনজিও, বেসরকারী ব্যাংক ও সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে শীতবস্ত্রসহ কম্বল বিতরণের খবরও আছে। তবে আমরা আশা করব আগামীতে এহেন তৎপরতা যেন আরও বেড়ে যায়। শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর এটাই প্রকৃষ্ট সময়। আকস্মিক তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধিসহ শৈত্যপ্রবাহের জন্য অনেকাংশে দায়ী বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে এ যাবত স্মরণকালের ভয়াবহ তুষারপাত ও তুষারঝড়ের খবর পাওয়া গেছে। মৃত্যুর খবরসহ খবর আছে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির। উপমহাদেশেও আবহাওয়ার ভাবগতি বিশেষ সুবিধার নয়। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, হিমাচল প্রদেশসহ উত্তর খ-ে চলছে শীতের তা-ব। হিন্দুকুশ ও হিমালয় পর্বতমালা থেকে ধেয়ে আসছে ঘন কুয়াশামালা সুতীব্র হিমেল প্রবাহ। আসমুদ্র হিমাচল এখন শৈত্যপ্রবাহকবলিত। শীতে কাতর মানুষের অতঃপর প্রার্থনা, কবে আসবে বসন্ত!
×