ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষিদ্ধ গাইড বই পড়ানো হচ্ছে

ডোনেশনে গাইড বই

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

ডোনেশনে গাইড বই

নিজস্ব সংবাদদাতা, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ, ২৪ জানুয়ারি ॥ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের রমরমা ব্যবসা। এতে লাভবান হচ্ছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। উপজেলার ৭৪৬টি প্রাথমিক কিন্ডারগার্টেন, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সিলেবাস বহির্ভূত ব্যাকারণ বই, গ্রামার ও নিষিদ্ধ গাইড বই পড়ানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে প্রকাশনা সংস্থা ও লাইব্রেরীর মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা এসব নিষিদ্ধ গাইড বই পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করেছে। গফরগাঁওয়ে ইসলামিয়া লাইব্রেরী, ফরিদ বুক ডিপো, মিতালী লাইব্রেরীসহ কয়েকটি লাইব্রেরী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিষিদ্ধ গাইড বই ও সিলেবাস বহির্ভূত গ্রামার ও ব্যাকারণ সরবরাহ করছে। উপজেলার ৩০টি বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, প্রাইমারী স্কুল, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ঘুরে শিক্ষক ও অভিভাবক ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রাথমিক ও কিন্ডারগার্টেনে প্রথম থেকে ৫ম শ্রেণীতে অনুপম, জুপিটার পাবলিকেশন, রেখা প্রকাশনী দিগন্ত, পুথি নিলয়, পাঞ্জেরী, দ্বিপ শিখা পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীতে এডভান্স প্রকাশনী, পাঞ্জেরী, অনুপম, লেকচার, মাস্টার্স প্রকাশনী গ্রামার, হাসান পাবলিকেশনের গ্রামার ও ব্যাকারণ বই পড়ানো হচ্ছে। আর মাদ্রাসায় ২য় থেকে ৯ম শ্রেণীতে আল বারাকা, ইন্তেহাস প্রকাশনীর গাইড ও গ্রামার পড়ানো হচ্ছে। গফরগাঁও উপজেলার সদরে আদর্শ নিকেতনের অধ্যক্ষ আব্দুস সাত্তার বলেন, গাইড বই ছাড়া বাচ্ছাদের জিপিএ ৫ পাওয়া সম্ভব নয়। তাই ক্লাসে মাঝেমধ্যে গাইড পড়ানো হয়। গত বছর একটি লাইব্রেরী আমার প্রতিষ্ঠানকে ৮০টি চেয়ার দিয়েছিল। এ বছর এখনও কিছু দেয়নি। মাইজবাড়ী হাতেম তাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, সরকার যে ইংরেজী গ্রামার ও বাংলা ব্যাকারণ বই পাঠ্য করেছে তা মানসম্মত নয়। তাই সহায়ক হিসেবে আমাদের প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কাছে এডভান্স গ্রামার বই পাঠ্য করার চিন্তা করছে। বামনখালী আলিম মাদ্রাসার সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইন্তেহাস প্রকাশনী বইগুলো মাদ্রাসা ছাত্রদের জন্য ভাল। সরকারী গ্রামারগুলো নিম্নমানের। বামুনখালী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী কামরুল নাহার জুয়েনা, সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, স্যারেরা আমাদের বাংলা ব্যাকারণ, ইংরেজী গ্রামার এবং প্রতি বিষয়ে একটি করে গাইড স্যারদের পছন্দ মতো কিনতে বাধ্য করছেন। অথচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বাংলা ব্যাকারণ ও ইংরেজী গ্রামার সরকার বিনামূল্যে দিয়েছে আর বিদ্যালয়ে গাইড বই পড়ানো সরকারীভাবে নিষিদ্ধ থাকলেও সেটা অমান্য করে গাইড কিনতে প্রতিদিন চাপ দিচ্ছে স্যারেরা। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের বলেন, স্কুলের জন্য কিছু ডোনেশন নিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কিছু সহায়ক বই প্রকাশনা সংস্থাগুলো আমাদের দেয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, মাধ্যমিক পর্যায়ে গ্রামার ও ব্যাকারণ বই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। আলাদাভাবে গ্রামার ও ব্যাকারণ বই ক্রয় করার প্রয়োজন নেই। অপরদিকে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নোট ও গাইড নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিক্ষকরা যদি নোট গাইড পড়তে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করেন তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি আরও বলেন, ইউএনও চাইলে এ বিষয়ে অভিযান চালাইতে পারে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু বলেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উদ্যোগ নিলে অভিযান চালানো হবে। পাথরঘাটায় বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন সংবাদদাতা, পাথরঘাটা, বরগুনা থেকে জানান, পাথরঘাটায় নিষিদ্ধ নোটগাইড বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পৌর শহরের শেখ রাসেল স্কয়ারে রবিবার সকালে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, আইনজীবী, জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজসহ দেড় সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। পাথরঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে মক্তব্য রাখেন সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, আমিন সোহেল, জাফর ইকবাল, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান, নবনির্বাচিত পৌর কাউন্সিলর মুনিরা ইয়াসমিন খুশি, মোসাফেফর হোসেন বাবুল, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা মিলন, আইনজীবী নূরুল ইসলাম, শিক্ষক আবুল বাশার আজাদ, রক্তের বন্ধনের সভাপতি রুহি আনান দানিয়াল প্রমুখ।
×