ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আপ্রাণ চেষ্টা করব স্বর্ণপদক জয়ের’

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

‘আপ্রাণ চেষ্টা করব স্বর্ণপদক জয়ের’

রুমেল খান ॥ একই অঙ্গে দুই রূপ। কখনও তিনি ফুটবলার হিসেবে মাঠে নেমে ব্যর্থ করে দেন প্রতিপক্ষ দলের ফরোয়ার্ডদের গোলপ্রচেষ্টা। কখনও আবার কাবাডি মাঠে দেখা যায় রেইডারের ভূমিকায়। তাহলে কোন্টা তার আসল পরিচয়? ‘আমি দুটো খেলাই খেলি। কাবাডিই আমার বেশি পছন্দ। তবে কাবাডি খেলায় আমার ক্যারিয়ার খুব বেশিদিনের নয়।’ কথাগুলো মাসুরা পারভীনের। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভারতে অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমস। এতে বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে অংশ নেবে বাংলাদেশ। তার মধ্যে ফুটবল এবং কাবাডিও আছে। তবে ফুটবলে বাংলাদেশের পুরুষ দল অংশ নিলেও মহিলা দল অংশ নেবে না। তবে কাবাডিতে পুরুষ-মহিলা উভয় দলই খেলবে। আর এই মহিলা কাবাডি দলের হয়ে খেলবেন পঞ্চদশী মাসুরা। সাতক্ষীরার মেয়ে মাসুরা জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে। সেই সঙ্গে জাতীয় দলের হয়ে কাবাডিও খেলতে যাচ্ছেন এসএ গেমসে। বিজেএমসিতে কর্মরত মাসুরাকে জাতীয় দলে নিয়ে আসেন কোচ আবদুল জলিল, ‘২০১৫ সালে বিচ কাবাডি গেমসে অংশ নেই বিজেএমসির হয়ে (২০১৩ সাল থেকে বিজেএমসিতে কর্মরত)। সেখানে আমার খেলা দেখে জলিল স্যার আমাকে জাতীয় দলে ডাকেন।’ মাসুরার ভাষ্য। এর আগে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসে অংশ নিয়েছেন মাসুরা। আসন্ন এসএ গেমসে লক্ষ্য কি? ‘আগে নিশ্চিত করব ব্রোঞ্জপদক জেতা, তারপরের লক্ষ্য রৌপ্যপদক জেতা। সবশেষে আপ্রাণ চেষ্টা করব স্বর্ণজয়ের। যদিও কাজটা খুবই কঠিন, কেননা প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত অনেক শক্তিশালী। কাবাডি নিয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য, ‘নিজেকেও ভাল খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং দলীয় অনেক সাফল্য অর্জন করা।’ যাদের আদর্শ কাবাডি খেলোয়াড় হিসেবে মানেন, সেই মালেকা, বেবি, পলিরাই আজ তার সতীর্থ। এ প্রসঙ্গে মাসুরার অভিমত, ‘তারা শুধু আমাকে খেলা নিয়ে টিপস-ই দেন না, মাঠে ও মাঠের বাইরে যে কোন বিষয়ে পরামর্শ দেন, সাহায্য করেন এবং ভুল ধরিয়ে দেন। তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’ কোচ জলিল প্রসঙ্গে মাসুরার মূল্যায়ন, ‘জলিল স্যার অনেক ভালমানের কোচ। আমি তো আগে এ খেলায় কিছুই জানতাম না, পারতাম না। জলিল স্যার আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছেন, শেখাচ্ছেন।’ দলে এই মুহূর্তে আছে ১২ মহিলা কাবাডি খেলোয়াড়। এদের চারজন একেবারেই নতুন। মাসুরা বাদে বাকিরা হলেন কোহিনূর, স্মৃতি এবং রেখা। এ প্রসঙ্গে কোচ আবদুল জলিল বলেন, ‘প্রথমে দলে নেয়া হয়েছিল ১৬ জনকে। পরে ধাপে ধাপে বাছাই করে ১২ জনকে রাখা হয়েছে। এটাই আমাদের এসএ গেমসের মূল দল।’ যদিও মহিলা কাবাডি দলকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য গত বছরের শেষদিকে ভারতের বলবিন্দর কৌরকে আনা হয়েছিল। কিন্তু গুরুতর চোটের কারণে তাকে চলে যেতে হয়। কাবাডি ফেডারেশন তখন দ্বারস্থ হয় জলিলের, যিনি বাংলাদেশের কাবাডি ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। জলিলের সহকারী হিসেবে আছেন তাঁরই ছোট ভাই জিয়াউর রহমান, যিনিও বাংলাদেশের আরেক কাবাডি নক্ষত্র। দায়িত্ব নিয়েই জলিল প্রথমে যে কাজটি করেন, তা হলো দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। দলের প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘অনুশীলন ভালমতোই চলছে। দলে কোন ইনজুরি নেই। তবে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ঘাটতিটা থেকেই যাচ্ছে। তারপরও এসএ গেমসে আমরা ভাল ফল করার ব্যাপারে আশাবাদী।’ এস এ গেমসে আগের আসরে রুপা জিতলেও এবার স্বর্ণজয়ের জন্য লড়াই করবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রধান প্রতিপক্ষ ভারত ও দ্বিতীয় দলটি হলো শ্রীলঙ্কা। ফাইনাল খেলতে হলে লঙ্কানদের হারাতেই হবে। ২০১০ আসরে আমরা লঙ্কাকে হারিয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৪ বিচ গেমস কাবাডিতে লঙ্কার কাছে হেরে যাই। এবার আমরা তাদের হারিয়ে প্রতিশোধ নিতে চাই।’ জলিলের আত্মবিশ্বাসী উচ্চারণ। এসএ গেমসের কাবাডিতে বাংলাদেশের মেয়েদের যাত্রা শুরু ২০০৬-এ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একেবারে আনকোরা দলটি সেবার তেমন সুবিধা করতে পারেনি। তবে পরের আসরে নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে রুপা জেতে বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর সাউথ এশিয়ান বিচ কাবাডিতে ব্রোঞ্জ জয় এবং এশিয়ান গেমসে ২০১০ ও ২০১৪ সালে ব্রোঞ্জ জেতে বাংলাদেশের নারী কাবাডি দল। এছাড়া ২০১২ বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে পঞ্চম স্থান পায় বাংলার নারীরা। এবারে তাদের সামনে মিশন ভারতে অনুষ্ঠেয় ২০১৬ এসএ গেমস। সেখানে কেমন করবে তারা?
×