ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুরোটাই ভোগ করছে মালিকপক্ষ

বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক॥ সেচ পাম্পে ভর্তুকি

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষক॥ সেচ পাম্পে ভর্তুকি

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ বছরে কৃষি খাতে সরকার কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিলেও এর সিংহভাগ অর্থ যাচ্ছে বিদ্যুতচালিত সেচ পাম্প মালিকদের পকেটে। মণিরামপুর উপজেলায় বছরে প্রায় কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে অথচ তার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেন না প্রান্তিক চাষীরা। সরকারী এ সুবিধার পুরোটাই ভোগ করছেন মালিকপক্ষ। অবাক ব্যাপার হলো, অনেক কৃষক জানেনই না তারা ভর্তুকির টাকা পেয়ে থাকেন। শুধু ইরি মৌসুমে এ উপজেলায় বিদ্যুতচালিত দুই হাজার ৮শ’ ১০টি সেচ পাম্পের আওতায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকি না থাকায় সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বিদ্যুতচালিত ২শ’ ৫০টি গভীর নলকূপ, দুই হাজার ৫শ’ ৩০টি শ্যালো মেশিন ও ৩৪টি পাওয়ার পাম্প রয়েছে। বোরো মৌসুমে প্রতিটি গভীর নলকূপের আওতায় স্থানভেদে ১২০ থেকে দেড় শ’ বিঘা, প্রতিটি শ্যালো মেশিনের আওতায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা ও পাওয়ার পাম্পের আওতায় ১৫০ থেকে ২০০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ হয়। ২০০২ সাল থেকে মোটরচালিত সেচ পাম্পে মোট বিলের ওপর শতকরা ২০ ভাগ ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার, যা প্রতি মাসে বিলের সঙ্গে সমন্বয় করা হয় বলে যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ (যপবিস-২) সূত্রে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিটি সেচ পাম্পের আওতায় কয়েক শ’ কৃষক তাদের ধানক্ষেতে পানি নিয়ে থাকেন। উপজেলার লাউড়ী গ্রামের কৃষক মশিয়ার রহমান জানান, বোরো মৌসুমে ধান রোপণ থেকে ধান কাটার আগ পর্যন্ত তার জমিতে পানি দেয়া বাবদ সেচ পাম্প মালিকের সঙ্গে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতক) দুই হাজার টাকা টুক্তি রয়েছে। যপবিস-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সালাউদ্দিন আল বিতার জানান, গত ২০১৪ সালে চার কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ১৩২ টাকা বিদ্যুত বিলের বিপরীতে ৮২ লাখ ১৪ হাজার ২২৬ টাকা ভর্তুকি প্রদান করেছে সরকার। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে তিন কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ১১৭ টাকা বিদ্যুত বিলের বিপরীতে ৭৩ লাখ ৯৫ হাজার ৪২৩ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিপুল অঙ্কের টাকা ভর্তুকি দেয়া হলেও পুরো সুবিধা ভোগ করেছে সেচ মালিকপক্ষ। এর এক কানাকড়ির সুবিধা পাননি প্রান্তিক কোন কৃষক। এ বিষয়ে উপজেলার সেচ পাম্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকের ভর্তুকি সুবিধা না পাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, বেশিরভাগ সেচ পাম্পের মালিক কৃষকদের ভর্তুকির সুবিধা থেকে কৌশলে বঞ্চিত করছেন। উপজেলার আটঘরা গ্রামের ডিপ টিউবওয়েল মালিক আব্দুস সাত্তার মোড়ল জানান, প্রান্তিক কৃষকরা কয়েক কিস্তিতে তাদের চুক্তিকৃত টাকা পরিশোধ করেন। শেষ কিস্তিতে কৃষকদের কাছ থেকে ভর্তুকির টাকা বাবদ কম নেয়া হয়। উপজেলার জালালপুর গ্রামের ডিপ মালিক সুনীল কুমার ঘোষ বলেন, তার জানামতে কোন সেচ পাম্প মালিক ভর্তুকির টাকা কৃষকদের দেয় না। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, সেচ পাম্পের ভর্তুকির অর্থের বিষয়ে তার অফিসের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভর্তুকি সুবিধাবঞ্চিত কৃষক তার কাছে অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×