ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতার দোলায়িত ছন্দে চিত্রকরের ছবি আঁকা

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

কবিতার দোলায়িত ছন্দে চিত্রকরের ছবি আঁকা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক আয়োজনে উপস্থাপিত হলো যুগলবন্দী পরিবেশনা। কবি ও আবৃত্তিশিল্পীরা পাঠ করলেন মুক্তিযুদ্ধ ও প্রেমের কবিতা। কবিতার সেই দোলায়িত ছন্দের তালে তুলির আঁচড়ে ক্যানভাস রাঙালেন চিত্রশিল্পী। সব মিলিয়ে কবিতার ভাষায় যেন অবয়ব খুঁজে নিল চিত্রপট। কবি ও বাকশিল্পীরা বলে গেলেন কবিতা, সেই প্রেরণায় ছবি আঁকলেন চিত্রকর। কবিতার শরীর ধরে শিল্পীর রেখার টানে ক্যানভাসে মূর্ত হলো নারীর মুখশ্রী, পাখির অবয়বসহ নানা কিছু। আর এভাবেই ছবি এঁকে শিল্পানুরাগীদের আরেকবার মুগ্ধ করলেন শিল্পী কালিদাস কর্মকার। দ্বিমাত্রিক শৈল্পিক উপস্থাপনাটি অনুষ্ঠিত হলো রবিবার শীতের বিকেলে। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ ছিল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়। কালিদাস কর্মকারের ‘পাললিক প্রাণ, মাটি ও প্রতীক’ শীর্ষক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর সমাপনী আয়োজনটি এভাবেই হয়ে রইল স্মরণীয়। ‘কবিতার ছন্দ ও রেখাঙ্কন’ শীর্ষক এই ভিন্নধাঁচের অনুষ্ঠানটি দারুণ উপভোগ্য হয়ে ধরা দেয় রাজধানীর শিল্পরসিকদের জন্য। আয়োজনের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দেন নন্দিত কবি নির্মলেন্দু গুণ। স্বকণ্ঠে কবিতা পাঠ করে এই কবি স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেন অনুষ্ঠানে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তিতে অংশ নেন আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবেক সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, ভাস্কর রাশা, ডালিয়া আহমেদ ও সামিউল ইসলাম পোলাক। এই বাচিকশল্পীরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ সরকারসহ দুই বাংলার বিভিন্ন কবির কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কালিদাস কর্মকার। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান রাশিদুর রহমান শাহীন। এছাড়াও গ্যালারি কসমসের পক্ষ থেকে শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানান তাহমিনা এনায়েত। ড. গওহর রিজভী বলেন, কালিদাস শিল্পী হিসেবে বাঙালী জাতির গৌরব। তার ছবি একই সঙ্গে বাংলাদেশের ও আন্তর্জাতিক মাত্রাকে স্পর্শ করে। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, চিত্রকর্মের সঙ্গে পারফর্মিং আর্ট যুক্ত হয়ে এ প্রদর্শনী ভিন্নমাত্রা অর্জন করেছে। এ শিল্পী শিল্পের সকল শাখাকে সমন্বয় করে নতুন কিছু যোগ করছেন। শিল্পীর এই নিরীক্ষাধর্মী কাজই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তুলেছে। এনে দিয়েছে খ্যাতি। কালিদাস কর্মকার বলেন, ফরাসী দেশে সব শিল্প সংমিশ্রিত হয়েছে বলেই সেখানে শিল্প বিপ্লব ঘটেছে। বাংলাদেশে তেমনটা দেখা যায় না। আমরা যদি সব শিল্পের সম্মিলন ঘটাতে পারি তবে তা নতুন কিছু সৃষ্টি করবেই। এভাবে বাংলা শিল্পধারা বৈশ্বিক মাত্রা পেতে পারে। গত ৩ জানুয়ারি শিল্পীর ৭১তম জন্মদিনে এ প্রদর্শনী শুরু হয়। এতে এ্যাক্রেলিক, মিশ্র মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে আঁকা ৫২টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। এছাড়াও চলমান সময়ের নিরিখে নির্মিত দুটি স্থাপনাশিল্পও প্রদর্শিত হয়। ষাটের দশকের গণজাগরণবিষয়ক গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ রবিবার ২৪ জানুয়ারি ছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান দিবসের ৪৭তম বার্ষিকী। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হলো শেখর দত্ত রচিত ‘ষাটের দশকের গণজাগরণ ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থ। বইটি প্রকাশ করেছে সমাজ বিকাশ প্রকাশনী। রবিবার বিকেলে রাজধানীর মনি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্ট ভবনের ছাদে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য সামসুদ্দোহা, ঊনসত্তরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদ মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ মণি সিংহ-ফরহাদ স্মৃতি ট্রাস্টের ট্রাস্টি মুকুল চৌধুরী ও মাহবুব জামান। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই ঊনসত্তরের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। এরপর কবি শামসুর রাহমানের ‘আসাদের শার্ট’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন অনন্যা গোস্বামী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, ষাটের দশক হলো সোনালি অধ্যায়। ওই সময়টাতে আমরা জাতীয়তাবাদ ও সাংস্কৃতিক জাগরণসহ সার্বিক জাগরণ পেয়েছি, যা ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ওই আন্দোলনের আসল নায়ক জনসাধারণ, যাদের নাম ইতিহাসে মনে রাখা হয় না। ছাত্রনেতাদের কৃতিত্ব যে তারা ঐক্য গড়েছিলেন। যেটি পরে জাতীয় ঐক্যে পরিণত হয়। তোফায়েল আহমেদ বলেন, মনে আছে ঊনসত্তরের আন্দোলনের সময় নিজের নাম-ঠিকানা কাগজে লিখে পকেটে রাখতাম। কারণ সর্বদা মৃত্যুকে সঙ্গী করেই ঘুরতে হতো। ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ছিল তেমনি একটা উত্তাল সময়। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে আজ (গতকাল) ২৪ জানুয়ারি দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই দিনেই আইয়ুব খানের পতনের বীজ বপিত হয়। এই আন্দোলনের পথ বেয়েই আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলাম। আজকের এই দিনে আসাদ, সার্জেন্ট জহুরুল হক, মতিউর, মুকবুল, রুস্তম, আলমগীরসহ ঊনসত্তরের সকল শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। অনুভূতি প্রকাশ করে গ্রন্থের লেখক শেখর দত্ত বলেন, আমি বাংলাদেশের গ্রামবাংলার নানা জায়গায় ঘুরেছি। কিন্তু দেখলাম ষাটের দশকের গণআন্দোলনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের কোন ধারণাই নেই। সে কারণেই বইটি লেখার প্রতি উদ্বুদ্ধ হই। বইটি বঙ্গবন্ধুসহ সে সময়কার সকল নেতাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। আমি দরদ দিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। তাই কিছু ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। সকলের সহযোগিতায় পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে। তিনি আর বলেন, এখন যে অবস্থা তাতে আরেকটা গণজাগরণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় দিন ॥ ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ সেøাগানে চলছে নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। রবিবার ছিল এ উৎসবের দ্বিতীয় দিন। চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত উৎসবের দ্বিতীয় দিনে তিনটি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয় ২৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ প্রায় হাজারখানেক দর্শক উপভোগ করেন নানান দেশের নানান ভাষার শিশুতোষ চলচ্চিত্রগুলো। গ্রন্থমেলাবিষয়ক গোলটেবিল বৈঠক আজ ॥ অমর একুশে গ্রন্থমেলাকে সামনে রেখে বাংলা একাডেমি আজ সোমবার ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা : প্রকাশনার মানোন্নয়ন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন করেছে। বিকেলে একাডেমির ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ ভবনের চতুর্থ তলার সভাকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে লেখক, প্রকাশকসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করবেন। ফরিদপুরে জাতীয় নজরুল সম্মেলনের সমাপ্তি ॥ ‘নজরুল মূলত সমন্বয়বাদী লেখক। তিনি সকল ধর্মের মূল সত্যকে এক জায়গায় এনে প্রকাশ করেছেন। এ সমন্বয় সাধন অত্যন্ত বিরল কাজ। নজরুল গবেষণার মাধ্যমে এ সত্য দিন দিন বের হয়ে আসছে। তাই একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে নজরুল চর্চার কোনো বিকল্প নেই।’ জনকণ্ঠের ফরিদপুর সংবাদদাতা অভিজিৎ রায় জানান, ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত জাতীয় নজরুল সম্মেলনের সমাপনী দিনে ‘বাংলাদেশে নজরুল : প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহীত-উল-আলম। রবিবার বিকেলে শহরের অম্বিকা ময়দানে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
×