ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

থাকছে খেলাধুলার ব্যবস্থাসহ নানা অনুষঙ্গ

একুশে গ্রন্থমেলায় এবার ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হবে শিশু কর্নার

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

একুশে গ্রন্থমেলায় এবার ভিন্ন আঙ্গিকে সাজানো হবে শিশু কর্নার

মনোয়ার হোসেন ॥ আর মাত্র ছয় দিন পরই শেষ হচ্ছে জানুযারি মাস। আসছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। পয়লা ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এবারের বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। অন্যান্য বছরের চেয়ে বাড়ছে মেলার পরিসর। প্রায় ৫ লাখ বর্গফুট স্থানে ১৫টি গুচ্ছে আয়োজিত মেলায় এবার শিশু কর্নারটি সাজবে নবরূপে। শিশুতোষ বইয়ের বিকিকিনির পাশাপাশি শিশুদের জন্য থাকছে খেলাধুলা করার ব্যবস্থাসহ নানা অনুষঙ্গ। এছাড়াও এ অংশে মন রাঙাতে থাকছে বিশেষ আলোকসজ্জা। এ বছর শিশু কর্নারটি থাকছে মেলার মূল অংশ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে। উদ্যানের মেলা অংশে একটি বটবৃক্ষের চার পাশজুড়ে শিশুবান্ধব করে গড়া হচ্ছে কর্নারটি। শিশু কর্নার প্রসঙ্গে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান জনকণ্ঠকে বলেন, শিশু সাহিত্যিক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে এ অংশটি। আমরা চেষ্টা করছি বইয়ের প্রদর্শনী ও বিক্রির পাশাপাশি ভিন্ন আঙ্গিকে যেন উপস্থাপন করা যায় কর্নারটিকে। তাই এখানকার সাজসজ্জায় থাকবে ভিন্নতা। উন্মুক্ত পরিসরে শিশুরা যাতে খেলাধুলার সুযোগ পায়Ñ এ বিষয়টি ভাবনায় নেয়া হয়েছে এ অংশের সাজসজ্জায়। শিশুদের আকৃষ্ট করতে বিশেষভাবে আলোকিত করা হবে এ অংশে। তিনি আরও জানান, এবার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন বাংলার ভাষার দুই বিদেশী গবেষক যুক্তরাজ্যের জো উইন্টার ও চেক প্রজাতন্ত্রের রিবেক মার্টিন। সেই সঙ্গে বিশ্বের বৃহৎ বইমেলা ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার আয়োজকদের দুইজন প্রতিনিধিও উপস্থিত থাকবেন। তারা ফ্রাঙ্কফুট ও অমর একুশে গ্রন্থমেলার অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। শিশু কর্নারের বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বলেন, প্রকাশকরা গত কয়েক বছর ধরেই শিশু কর্নারকে মেলার উদ্যানে অংশে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। সে প্রেক্ষিত্রেই এবার শিশুদের প্রকাশনা সংস্থাগুলো নিয়ে উদ্যানে একটি পৃথক গুচ্ছ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে শুধুই বইয়ের বেচাবিক্রি থাকবে না। শিশুদের খেলার মাধ্যমে শেখারও উপকরণ থাকবে। ইতোমধ্যেই একটি শিশুতোষ প্রতিষ্ঠানকে গুচ্ছটি সাজানো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা মেলা শুরুর আগেই গুচ্ছটি সজ্জার কাজ শেষ করবে। তিনি আরও জানান, পাঁচজন ভাষা শহীদ, ৬ জন শহীদ বুদ্ধিজীবী ও ৪ জন শিশু সাহিত্যিকের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে ১৫টি গুচ্ছ। উদ্যানে মেলার রমনা কালী মন্দির পার্শ্ববর্তী স্থানে শিশু কর্নার তৈরি করা হচ্ছে। সেখানকার একটি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে চার পাশ ঘিরে শিশুতোষ প্রকাশনা সংস্থাগুলোর স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বট গাছের পাশে শিশুদের জন্য ছোট্ট করে খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বট গাছকে ঘিরে থাকবে আলোকসজ্জা। সেই সঙ্গে শিশুদের জন্য শিক্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়সহ নানা অনুষঙ্গ থাকবে শিশু কর্নারে। এবারই প্রথমবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতিতে স্টলসজ্জা করছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। ুিশশু কর্নারে মোট ৩৯টি শিশু প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে তিন ইউনিটের স্টল রয়েছে ৩টি, দুই ইউনিটের ১০টি এবং এক ইউনিটের স্টল থাকবে ২৬টি। তবে শিশু কর্নারে কোন প্যাভিলিয়ন থাকছে না। প্যাভিলিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গায় শিশুদের জন্য খেলার স্থান রাখা হচ্ছে। একাডেমি সূত্রে জানা যায, এবারের মেলায় সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে ৩১৪টি প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে। যার মধ্যে ১৩টি প্যাভিলিয়ন, ১৮টি চার ইউনিট, তিন ইউনিটের ৩৩টি, দুই ইউনিটের ১১১টি এবং এক ইউনিটের স্টল রয়েছে ১৩৯টি। বৃহস্পতিবার লটারির মাধ্যমে স্টলের স্থান বুঝে পাওয়ায় জোরেসোরে স্টল সজ্জার কাজ শুরু করেছেন প্রকাশকরা। একাডেমির বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময় ২৬ জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রকাশকদের। তবে সময়সীমা আরও দু’য়েকদিন বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন জালাল আহমেদ। তিনি আরও জানান, মেলার পরিসর বৃদ্ধি পাওয়ায় মেলাকে নান্দনিকভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। মেলা প্রাঙ্গণের খোলা জায়গায় ফুলের গাছ দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি স্থাপন করা হবে ফোয়ারাও। রাতের বেলা যেখান থেকে বের হবে রঙ-বেরঙের পানির ছটা। রবিবার মেলার উদ্যান অংশে গিয়ে দেখা যায়, একাডেমির নির্মিত কাঠামোর মধ্যে তুমুল গতিতে স্টলসজ্জার কাজ শুরু করেছেন প্রকাশকরা। এখানে কথা হয় কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী এ কে এম নাছিরউদ্দিন সেলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনও বাংলা একাডেমি স্টল তৈরি করছে। স্টল তৈরি না হলে তো আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। তারপরও চেষ্টা করছি, যেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে। তবে আরও দুই-তিনদিন বাড়ালে ভাল হয়। এ বিষয়ে তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্রকাশক তরিকুল ইসলাম রনি বলেন, আমরা আশা করছি ২৬ জানুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ হবে। সেই লক্ষ্যে স্টলসজ্জার কাজ চলছে।
×