ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নালিশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

নালিশ

বিএনপি আবারও বাংলাদেশ নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে। তাদের কাজই হচ্ছে যখন তখন যে কোন বিষয়ে নালিশ করা যার তার কাছে। দেখা যায়, পৌর নির্বাচনের আগে ও পরে তারা বিদেশী কূটনীতিকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে নালিশ জানিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে। ব্যর্থতা ঢাকতেই দলটি নালিশনির্ভর রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সেনাছাউনিতে গড়ে ওঠা দলটির বয়স প্রায় চার দশকের কাছাকাছি হলেও গণতান্ত্রিক রাজনীতিচর্চা থেকে বিরত রয়েছে। দলের অভ্যন্তরে নেই গণতান্ত্রিক বিধি বিধানের বালাই। দলপ্রধান খেয়ালখুশী মতো যাকে ইচ্ছে তাকে দলীয় পদে নিয়োগ বা বাতিল করেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলেও দল এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। এসব ব্যর্থতা ঢাকতে তোতা পাখির মতো আওড়ে যাচ্ছে ভাঙ্গা রেকর্ডের ভাঙ্গা ভাষ্য। জানা নেই তাদের জনগণের চোখের ভাষা, মুখের ভাষা। সে কারণেই দেখা গেছে, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশজুড়ে সন্ত্রাস, নাশকতা, নৃশংসতা, নির্মমতা, অমানবিকতা, বোমা মেরে জীবন্ত মানুষ হত্যার মতো জঘন্য কাজগুলো অনায়াসে অবলীলায় চালিয়ে যেতে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের কবলে নিজেদের আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে দলটি। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও চালিয়েছে চোরাগুপ্তা পথ ধরে। সবই নিষ্ফলে পরিণত শুধু নয়, দলটির খোল নলচেও বদলে গেছে। অনেক নেতাকর্মী দল ছেড়ে গেছে শুধু নয় নয়া দলও গঠন করেছে। অতীতে বিদেশীদের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে যেমন চেয়েছে তেমনি এখন ক্ষমতায় যাবার জন্য বিদেশীদের কাছে ঝর্ণা দিয়ে বেড়াচ্ছে। ভারতবিরোধিতা যে দলটির প্রধান এজেন্ডা সেই দল ভারতের ‘কৃপা’ লাভে উঠেপড়ে লেগেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে সাক্ষাতলাভের জন্য নানা কিসিমের দেন দরবারও করেছে। বিএনপি ভারত অসন্তুষ্ট হয় এমন কাজ বা উদ্যোগ থেকেও বিরত রয়েছে। ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতের সমর্থন পেতে এমনই মরিয়া হয়ে উঠেছেন পৌর নির্বাচনের আগে দলের তিন জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নির্বাচনের পর দুই উপদেষ্টা ভারত সফর করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে এসেছে। ভারতসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন পছন্দ করে না বলে এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছে যে, জামায়াতকে তারা এড়িয়ে চলছে আর সেই কারণেই পৌরনির্বাচনে জামায়াতকে কোন ছাড় দেয়নি। কিন্তু পাকিস্তান তথা আইএসআইকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য ২০ দলীয় জোট থেকে জামায়াতকে বিতাড়িত করছেন না। দ্বৈতনীতিতে চলা বিএনপির পুরনো রোগ। দলটি এখনও নিজেদের কর্মকৌশলকে যতটা না গুরুত্ব দিচ্ছে; তার চেয়ে ঢের বেশি উদ্যোগী বিদেশীদের সহায়তা লাভের জন্য তীর্থের কাকের ভূমিকা পালন। দুর্বল রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারক-বাহক হিসেবে বিএনপি নিজেদের সমস্যা নিজেরা না মিটিয়ে রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশীদের শরণাপন্ন হচ্ছে। ঠুনকো দেশপ্রেম বলেই ওটা সম্ভব হচ্ছে। কূটনীতিকদের সহানুভূতি পেতে মরিয়া বিএনপি গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এবং চলতি মাসের ২০ জানুয়ারি কূটনীতিকদের কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব তুলে ধরে সরকারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ দলিল দস্তাবেজ তুলে দিয়েছে। যেন তারা এদেশের রক্ষাকর্তা। যা বিদেশীদের দেশের বিষয়ে নাক গলাতে সাহায্য করছে। বিদেশীদের পানে চেয়ে বিএনপি লবিস্ট ফোরামও নিয়োগ করেছে। বিদেশে দেন দরবার করে যাচ্ছে তারা। ফলাফল কিছু মিলছে হয়ত, কিন্তু তা সার্বভৌম দেশের জন্য অসম্মানজনক। বিএনপির উচিত গণতান্ত্রিক বিধিবিধান মেনে এসব নালিশ বিদেশীদের কাছে নয়, জনগণের কাছে পেশ করা। কারণ জনগণই সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণের মালিক। এটা বিএনপিকে ভুলে গেলে চলবে না।
×