ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাজারদর আন্তর্জাতিক দামের ১০ শতাংশ কমবেশি হতে পারে

জ্বালানি তেলের দাম কমাতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

জ্বালানি তেলের দাম কমাতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ জ্বালানি তেলের দাম কমাতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করার ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কমিটির সুপারিশক্রমে নির্বাহী আদেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হতে পারে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ার পরও দেশে দাম কমানো হয়নি। এতে দীর্ঘদিন জ্বালানি তেলে যে লোকসান দেয়া হয়েছে, তা সমন্বয় করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নিজেই জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তাই তার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। বিপিসির কাছে এ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে কিছু করণীয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী ও প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে একটি চিঠি দেন। এতে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন তিনি। চিঠিতে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম নিয়ে আমাদের কিছু করণীয় আছে। মনে হচ্ছে যে, জ্বালানি তেলের দরপতন বেশ কিছুদিনের জন্য স্থায়ী হবে। এটা স্বীকার করতেই হবে যে, দরপতন হয়েছে ব্যাপক। আমাদের এ খাতে অনেক ভর্তুকি দিতে হয়েছে। সে কারণে তেল শোধনকারী প্রতিষ্ঠান অথবা জ্বালানি বিতরণ প্রতিষ্ঠান নানাভাবে দুর্ভোগের মধ্যে ছিল। আমরা সব সময় নিয়মমতো ভর্তুকি দিইনি। তারাও নিয়মমতো কর-ভ্যাট ইত্যাদি আদায় করেনি। বর্তমানে এইসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা বেশ ভাল। চিঠিতে বলা হয়েছে, এখন আমাদের বাজারদর নিয়ে চিন্তা করা যথোপযুক্ত হবে। আমরা এই মুহূর্তে মোটামুটি ১৪ লাখ টন ক্রুড অয়েল আমাদের রিফাইনারিতে রিফাইন করি। এতে যে বিভিন্ন পেট্রোলজাত পণ্য উৎপন্ন হয় সেটাও আমাদের চাহিদার অতি সামান্য অংশ পূরণ করে। আমাদের চাহিদা অবশ্য দুটি পেট্রোলজাত পণ্যের ক্ষেত্রে খুব বেশি। সেগুলো হচ্ছে ডিজেল এবং ফার্নেস অয়েল। আমরা সম্ভবত বছরে ১ কোটি টন পেট্রোলজাত দ্রব্য ব্যবহার করি। তার সিংহভাগ আমদানি করি এবং বিভিন্ন সরকারী কোম্পানির মাধ্যমে বিতরণ করি। আগে সমুদয় ক্রুড অয়েল এবং পণ্যাদি একমাত্র সরকারই আমদানি করত। বর্তমানে বিদ্যুত উৎপাদনকারী ব্যক্তিমালিকানা খাতের প্রতিষ্ঠানও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য আমদানি করে। প্রথমেই বর্তমান হ-য-ব-র-ল অবস্থাকে বিশ্লেষণ করা দরকার। আমি জেনেছি যে, বিপিসি আমদানিকৃত পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যাদির দাম ৩০ ডলারে হিসাব করে। আমরা হিসাব করতাম ৮০ ডলারে এবং সম্ভবত ১১০ ডলারেও হিসাব করেছি। অর্থমন্ত্রী তার চিঠিতে বলেন, আমাদের প্রথমেই ভাবতে হবে, আমরা পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম কমাব কি না? বর্তমানে যে দামে পেট্রোল সরবরাহ করা হয়, তাতে সম্ভবত আমাদের হিসাব হলো- ১১০ ডলারে এক ব্যারেল। আমাদের দ্বিতীয় যে বিষয় নজর দিতে হবে তা হলো- আমরা ক্রুডের যে আমদানি মূল্যের ভিত্তিতে হিসাব করব, সেটা যেন সব প্রতিষ্ঠানে একই রকম হয়। অর্থাৎ ইস্টার্ন রিফাইনারি, বিপিসি দুটি প্রতিষ্ঠানই যাতে একইভাবে হিসাব করে। তৃতীয় বিষয়টি হবে, আমরা এই মুহূর্তে বাজার দাম কত ঠিক করব। আমরা নিশ্চিত যে, বাজারদর কমালে আপাতত কোন ভর্তুকির প্রয়োজন হবে না। তবে আমরা একেবারেই বাজারদর সঙ্গে আমাদের সরকার নির্দিষ্ট দাম একপর্যায়ে নাও রাখতে পারি। ইতোমধ্যেই আমাদের এক সিদ্ধান্ত আছে যে, আমাদের বাজারদর আন্তর্জাতিক বাজার দামের ১০ শতাংশ কমবেশি হতে পারে। সেই ফর্মুলা প্রয়োগ করলে আমাদের পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম বেশি কমাতে হবে। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, সমুদয় বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। এ জন্য তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন, যে প্রথমেই জ্বালানি মন্ত্রণালয় পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের বর্তমান অবস্থা এবং দেশের সার্বিক জ্বালানি চাহিদা ও সরবরাহের বর্তমান অবস্থা নিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে। প্রতিবেদন প্রণয়নকালে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সেই প্রতিবেদনে তারা পরবর্তী কর্তব্য সম্পর্কে সুপারিশ করবেন। এই প্রতিবেদনের সুপারিশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বিবেচনা করতে পারি। এখানে সব মন্ত্রণালয় অর্থনৈতিক কমিটিতে আছেন এবং যেসব মন্ত্রণালয় ক্রয় কমিটিতে আছেন তারা যৌথভাবে আমন্ত্রিত হতে পারেন। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের সবচেয়ে বেশি চাহিদা যোগাযোগ, বিদ্যুত এবং কৃষি খাতে। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে মোট জ্বালানি তেলের ৪৬ শতাংশ চাহিদা রয়েছে। এর পরেই আছে বিদ্যুত খাত। যেখানে ২৫ শতাংশ তেলের ব্যবহার হয়। আর কৃষি উৎপাদনে প্রয়োজন পুরো চাহিদার ১৭ শতাংশ জ্বালানি তেল।
×