ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

চলে গেলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ মৃত্যুর আগে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাকরখানি ও চা খেতে চেয়েছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ। কিন্তু তা খাওয়ার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন রাজপথের এই ত্যাগী নেতা। বকশীবাজার এলাকার হোসেনি দালান সংলগ্ন নিজ বাসভবনে শনিবার দুপুরে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে যান তিনি। দ্রুত তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগে আনার কিছুক্ষণ পরেই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগের এই জনপ্রিয় নেতা (ইন্নালিল্লাহি...রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরেই হৃদরোগে ভুগছিলেন এম এ আজিজ। কিন্তু ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই তাঁর ছিল সরব উপস্থিতি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই রাজনীতিকের শেষ সময়ের কথা তুলে ধরে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আবদুস ছালাম সাংবাদিকদের জানান, ‘পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তিনি আমার কাছে বাকরখানি ও চা চেয়েছিলেন। আমি নিয়ে আসতে আসতেই তিনি হেলে পড়ে যান। বাকরখানি আর চা খেতে পারলেন না তিনি। পড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যারকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি।’ প্রয়াত রাজনীতিক এম এ আজিজ স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। বাদ মাগরিব বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রথম নামাজে জানাজা এবং বাদ এশা বকশিবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়। দুটি জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠানেই ছিল শোকার্ত রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ঢল। হাসপাতালের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর মরদেহ তাঁর হোসেনি দালানের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্ষীয়ান রাজনীতিক এম এ আজিজের মৃত্যুর খবরে তাঁর পুরান ঢাকার নিজ বাসভবনে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। বিকেলে ওই বাসভবনে গিয়ে প্রথমেই এম এ আজিজের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রয়াত এই নেতার দোতলার বাসায় গিয়ে সেখানে শোকার্ত পরিবারের সদস্যদের সান্ত¡না ও সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রায় আধাঘণ্টা সেখানে অবস্থান শেষে গণভবনে ফিরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে এম এ আজিজের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। পৃথক শোক বার্তায় তাঁরা মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত, ত্যাগী এবং নিবেদিতপ্রাণ একজন নেতাকে হারাল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকা-ের পরবর্তী দুঃসময়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে পুনরায় সংগঠিত করতে এম এ আজিজের ভূমিকা ছিল অপরিসীম। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মরহুমের সাহসী ভূমিকার কথা জাতি চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এছাড়া এম এ আজিজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদের চীফ হুইপ আ স ম ফিরোজ প্রমুখ। আজিজের মৃত্যুর খবর পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকার সাবেক সংসদ সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি মোঃ সেলিমসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা হাসপাতালে ছুটে যান। ঢাকায় আওয়ামী লীগকে সক্রিয় রাখতে এম এ আজিজের অবদান স্মরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ধ্যার আগে এম এ আজিজের মরদেহ বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হলে সেখানে অনেক নেতাকর্মীই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সেখানে অনুষ্ঠিত জানাজা ও শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আইপিইউ’র প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, নগরের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, শাহে আলম মুরাদ, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, যুবলীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, হারুনুর রশিদসহ হাজার হাজার শোকার্ত নেতাকর্মী। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নেয়া হয়। সেখানে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে আজিমপুর গোরস্তানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাখা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে গত আট বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন এম এ আজিজ। ১৯৮৭ সালে মোজাফফর হোসেন পল্টুর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ২০০৩ সালে সম্মেলনে সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ঢাকা মহানগরের সভাপতি নির্বাচিত হলে ওই কমিটিতে সহ-সভাপতি হন আজিজ। ২০০৭ সালে মোহাম্মদ হানিফ মারা যাওয়ার পর এম এ আজিজকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১২ সালে কাউন্সিল হলেও নতুন কমিটি গঠিত না হওয়ায় এম এ আজিজ আগের মতোই ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এম এ আজিজের বাবা পুরান ঢাকার বিলুপ্ত পঞ্চায়েতের নেতা পেয়ারু সরদার ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় প্রথম শহীদ মিনার তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন। তাঁর বড় ছেলে উমর বিন আবদুল আজিজ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত কাউন্সিলর।
×