ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাতীয় গণগ্রন্থাগারে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

জাতীয় গণগ্রন্থাগারে আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শীতের বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগার আঙিনায় বাজছে ঢাকের আওয়াজ। সেই ঢাকের তালের সঙ্গে কর্মযজ্ঞে মেতেছে চলচ্চিত্র অন্তঃপ্রাণ একঝাঁক শিশু শিক্ষার্থী। চোখে পড়ছিল তাদের তুমুল ব্যস্ততা। স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা পালন করে নানা রকমের গুরুদায়িত্ব। কারণ একটি বিশাল আয়োজনে দর্শক হওয়ার পরিবর্তে এই শিক্ষার্থীরা হয়েছে আয়োজক। তাদেরই তত্ত্বাবধানে শনিবার থেকে শুরু হলো সপ্তাহব্যাপী নবম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ সেøাগানে শিশুদের সংগঠন চিলড্রেন্স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে উৎসবটি। এবার রাজধানী ঢাকার সঙ্গে একযোগে রাজশাহী ও সিলেটে এ উৎসবের সূচনা হয়। সারাদেশের মোট ১৫টি ভেন্যুতে দেখানো হবে ৩০টি দেশের দেড় শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ৩৭টি চলচ্চিত্র। সেগুলোর মধ্যে আবার ৩৩টি ছবি নির্মাণ করেছেন এদেশের খুদে ফিল্ম মেকাররা। ছবি প্রদর্শনীর সঙ্গে উৎসবে থাকছে কর্মশালা ও চলচ্চিত্রবিষয়ক সেমিনারসহ নানা আয়োজন। ঢাকার উৎসবে দেশের নানাপ্রান্ত থেকে অংশ নিচ্ছে ৭১ জন প্রতিনিধি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল দুই পর্বে বিভক্ত। প্রথম পর্বটি হয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত চত্বরে। শুরুতেই গাওয়া হয় উদ্বোধনী সঙ্গীত। সোসাইটির শিশুশিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনায়Ñ আলো আমার আলো, ওগো আলোয় ভুবন ভরা...। এরপর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উত্তোলন করেন জাতীয় পতাকা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উৎসব পতাকা এবং আয়োজক সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী। পতাকা উত্তোলন শেষে অতিথিরা আকাশে উড়িয়ে দেন পায়রা ও বর্ণিল বেলুন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় শওকত ওসমান মিলনায়তনে। এ পর্বের শুরুতেই মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন করেন অতিথিরা। এখানে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সাবেক উৎসব পরিচালক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। উৎসবের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন উৎসব পারিচালক রায়ীদ মোরশেদ ও উপ-পরিচালক আবীর ফেরদৌস। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন উৎসবের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কর্মকর্তা এ কে এম মঈনুল ইসলাম মঈন। সমাপনী বক্তব্য রাখেন মুনিরা মোরশেদ মুন্নী। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেখানো হয় জার্মানির চলচ্চিত্র ‘মাই ফ্রেন্ড রাফি’। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এবারের উৎসবে গত বছরের চেয়ে কম ছবি প্রদর্শিত হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছেÑ এবারের উৎসবে বাংলাদেশের নির্মিত ছবির সংখ্যা বেড়েছে। এটা আমার কাছে ভাল লেগেছে। আশা করি এ আয়োজনটি নিয়মিতভাবে চলবে। তিনি আরও বলেন, চলচ্চিত্র মানেই শুধু বিনোদন নয়, এর মাঝে রয়েছে অনেক শিক্ষণীয় বিষয়। বিনোদনের ভেতর থেকেই পাওয়া যায় শিক্ষামূলক অনেক কিছু। সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র দেখে নানা বিষয়ের সঙ্গে পরিচিত হন দর্শকরা। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এ উৎসবের নয় বছরে পদার্পণ একটা বড় ঘটনা। এ ধরনের উদ্যোগ যত বেশি নেয়া হবে সমাজের জন্য তত বেশি কল্যাণ হবে। এছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য এমন আয়োজন খুব একটা চোখে পড়ে না। এ উৎসবের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের বিশাল কর্মযজ্ঞের দেখা মেলে। এর মাধ্যমে বিকশিত হচ্ছে শিশুদের সুকুমার বৃত্তি। শিশুদের কাঁধে শুধু বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিলে হবে না। গান, কবিতা, নাটক, চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মতৎপরতায় যুক্ত করে তাদের মননকে শাণিত করে গড়ে তুলতে হবে। সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, শিশুদের ঠিকভাবে গড়তে না পারলে দেশ গড়া সম্ভব নয়। সৃজনশীল চলচ্চিত্র মানুষের মনকে প্রসারিত করে। শিশুদের সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশে এ উৎসব সহায়তা করবে। চলচ্চিত্রকার মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ২০০৮ সালে আমরা এ উৎসব শুরু করেছিলাম। তখন শিশুদের পেছনে আমরা ছিলাম। গত বছর থেকে শিশুরাই এ উৎসবের আয়োজন করছে। শিশুরা নিজেরাই এ উৎসবের আয়োজন করবেÑ এটাই আমাদের স্বপ্ন ছিল, আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গ্রন্থাগারকে মূল ভেন্যু করে রাজধানীর পাঁচটি ভেন্যুতে উৎসব চলবে। গ্রন্থাগার ভেন্যুতে প্রতিদিন বেলা ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায় প্রদর্শনী হবে। অন্য চার ভেন্যু জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবি দেখানো হবে বেলা ১১টা, দুপুর ২টা ও বিকেল ৪টায়। উৎসবের সকল প্রদর্শনী অভিভাবকসহ শিশুদের জন্য উন্মুক্ত। বড়দের জন্য ৩০ টাকার বিনিময়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। উৎসবের বিভিন্ন ভেন্যুতে স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার জন্য থাকবে বাসের ব্যবস্থা। এবারও উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বাংলাদেশী শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগটি। এ বিভাগে জমা পড়া ৮০টি চলচ্চিত্রের মধ্যে নির্বাচিত ৩৩টি ছবি প্রদর্শিত হবে। এর মধ্যে ৫টি ছবি পুরস্কৃত হবে। পুরস্কার হিসেবে থাকছে স্মারক, সনদপত্র ও আর্থিক প্রণোদনা। পুরস্কারের জন্য গঠিত ৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের সবাই শিশু-কিশোর। ছোটরাই বাছাই করবে তাদের নির্মিত শ্রেষ্ঠ ছবিগুলো। আরও থাকছে বড়দের নির্মিত শিশুতোষ চলচ্চিত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এ বিভাগে বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, চলচ্চিত্র সমালোচক সাজেদুল আউয়াল ও জাকির হোসেন রাজু। এছাড়া তরুণ নির্মাতাদের জন্য থাকছে ইয়ং বাংলাদেশী ট্যালেন্ট এ্যাওয়ার্ড ও সোস্যাল ফিল্ম এ্যাওয়ার্ড। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী সেমিনার। দুই পর্বে বিভক্ত এ সেমিনারের বিষয় ‘শিশুদের ওপর নির্যাতন’। ২৭ জানুয়ারি থাকছে চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ক কর্মশালা। এটি পরিচালনা করবেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা। উৎসবের সমাপনী ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি হবে ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টায় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে। অনুষ্ঠানে সকল বিভাগের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান করা হবে। ঢালী আল মামুনের শিল্পকর্ম প্রদর্শনী ॥ ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে শুরু হলো শিল্পী ঢালী আল মামুনের স্থাপনা শিল্পের প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘টাইম, কো-ইন্সিডেন্স এ্যান্ড হিস্টরি’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীতে স্থাপনা শিল্পকর্ম ছাড়াও স্থান পেয়েছে ড্রইং, ভাস্কর্য ও চলমান চিত্রকল্প। প্রদর্শনীতে আলো, বয়ন-বিন্যাস এবং অবয়বের স্তরান্তরের মধ্য দিয়ে মামুন জটিল ও নাটকীয় অভিজ্ঞতার রূপক নির্মাণ করেছেন। মামুনের এই প্রয়াস এ অঞ্চলের ইতিহাস ও অতীত স্মৃতির ওপর আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে উদ্বোধন করা হয় এ প্রদর্শনী। উদ্বোধনী পর্বে বক্তব্য রাখেন শিল্পী ঢালী আল মামুন, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং উপ-পরিচালক সাদিয়া রহমান। ঢালী আল মামুনের স্থাপনাশিল্পগুলোয় নাটকীয়ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে বিষয়। অপরিণামদর্শী সভ্যতার অগ্রগতি উঠে এসেছে শিল্পীর কাজে। সবুজ পৃথিবীকে কঙ্কালসার নগরে পরিণত হয়ে উঠছে তাও তিনি বলছেন। আবার নিসর্গের নিঃশব্দ সৌন্দর্যেও তিনি উদ্বেলিত হয়েছেন। আগ্রাসী অর্থনীতির অশুভ চক্রে অবহেলার শিকার মানুষ এবং তার দলিত ও নিষ্পেষণের গল্প শিল্পীকে পীড়িত করে। রাজনীতির ‘রাজার নীতি’ হয়ে উঠার অপয়া গল্প তার হতাশাকে দীর্ঘ করে। প্রদর্শনীতে ড্রইং, ভাস্কর্য, স্থাপনা ও চলমান চিত্রকল্প মাধ্যমে সৃজিত মোট শিল্পকর্মের সংখ্যা ১১টি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ১৯ মার্চ পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শিশু একাডেমিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা-২০১৬ এর পদক প্রদান ও সমাপনী অনুষ্ঠান শনিবার বিকেলে একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে শিশুদের সৃজনশীলতা, মেধা ও মনন অন্বেষণে ১ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০১৬ শুরু হয়। উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে জেলা ও অঞ্চল (বিভাগীয়) পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যে সকল শিশুরা সফল হয়েছে তারা ১৯ জানুয়ারি থেকে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বিজয়ী শিশুদের মধ্যে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীদের ৫৩টি বিষয়ে যথাক্রমে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ১৫৯টি পদক এবং সনদপত্র প্রদান করা হয়। ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের বাঁশিসন্ধ্যা ॥ শনিবার সন্ধ্যায় বাঁশির সুরে মায়াজাল ছড়িয়েছেন ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে বসে এই বাঁশিসন্ধ্যা। পরিবেশনার শুরুতে রাগ ঝনঝাটি দিয়ে ধ্রুপদী পরিবেশেন করেন শিল্পী। এতে ছিল আলাপ, জোড় এবং ঝালা। প্রায় ঘণ্টাখানেক ঝাঁপতাল, সেতারখানি এবং তিনতালে গৎ বাজান শিল্পী। তারপর বিভিন্ন রাগের সংক্ষিপ্ত পরিবেশনার পর দোতারা সহযোগে পরিবেশন করেন ভাটিয়ালী ধুন।
×