ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সম্পাদকদের সহায়তা চাইলেন আনিসুল হক

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সম্পাদকদের সহায়তা চাইলেন আনিসুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুন্দর ও আগামীর ঢাকা গড়তে জনসচেতনতা তৈরিতে পত্রিকার সম্পাদকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। একই সঙ্গে নাগরিকদের মাঝে অধিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রতিটি পত্রিকার নির্দিষ্ট একটি স্থানে নিয়মিতভাবে জনসচেতনতামূলক সেøাগান তুলে ধারার আহ্বান জানান। যাতে এসব সেøাগান দেখে সহজেই নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে রাজধানী থেকে প্রকাশিত স্বনামধন্য জাতীয় সকল পত্রিকা সম্পাদকদের সঙ্গে ডিএনসিসির উন্নতিকল্পে করণীয় সম্পর্কে জানতে এক মতবিনিময় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সকল পত্রিকা সম্পাদকের কাছে তিনি দৈনিক অন্তত ২ ইঞ্চি স্থান জনসচেতনতার জন্য বরাদ্দ চান। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা আমাদের ঢাকাকে একটি প্রকৃতই বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়তে চাই। আমাদের জন্য না হোক অন্তত পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হলেও ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। বর্তমানে ঢাকা হচ্ছে অনেকটা বাসের অযোগ্য শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এজন্য অবশ্যই মিডিয়াকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রিন্ট মিডিয়ার সহযোগিতা অতি গুরুত্বপূর্ণ। মেয়র বলেন, দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ রাজধানীর ট্রাফিক সমস্যার সমাধানে উন্নত বিশ্বের ন্যায় ইউলুপ তৈরিতে বিশেষ গবেষণা কার্য সম্পন্ন করেছেন। যানজট কমাতে বিভিন্ন তথ্যসহ এ সংক্রান্ত সিডি আমাদের কাছে রয়েছে। যানজট নিরসনে তার প্রদত্ত এ পরিকল্পনাকে কাজে লাগাতে উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আমরা ২১টি ইউলুপ তৈরি করছি। আশা করি আমরা আগামী জুন মাসের মধ্যেই এসব ইউলুপ তৈরি করে বর্তমান যানজট ৬০ ভাগের বেশি কমাতে সক্ষম হব। এসব ইউলুপের মাধ্যমে টঙ্গী থেকে মহাখালী পর্যন্ত কোন প্রকার রাইট টার্ন থাকবে না বিধায় যানজট অনেকাংশে কমে আসবে। এজন্য তিনি জনকণ্ঠ সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা নাগরিক সেবা বৃদ্ধিতে গত আট মাসে বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আবার কিছু কাজও সম্পন্ন করেছি। আবার কিছু কাজ চলমান রয়েছে। তিনি প্রতিদিনকার নাগরিক সমস্যা নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট প্রকাশ করায় পত্রিকা সম্পাদকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা চাই ঢাকা হোক নাগরিকদের জন্য সবুজ শহর। যেখানে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক থাকবে। নিরাপত্তার প্রকৃত নগরী হিসেবে ঢাকাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। যে শহরের রাস্তায় কোন প্রকার ময়লা আবর্জনা রাস্তায় পরে থাকবে না। থাকবে না কোন প্রকার ট্রাফিক জ্যাম। পাবলিক টয়লেট থাকবে অফুরন্ত। রাস্তার কোথাও অপরিকল্পিত বা অবৈধ বিলবোর্ড থাকবে না। এমন ঢাকাই আমরা গড়তে চাই। আর আমরা এমন ঢাকা গড়তে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। আনিসুল হক বলেন, শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আমরা আগামী এপ্রিলের মধ্যেই বড় বড় রাস্তার উপর থেকে সকল প্রকার ময়লার ডাষ্টবিন সরিয়ে নেব। ফলে এরপর থেকে কেউ আর রাস্তার উপরে ময়লার ডাস্টবিন চোখে দেখতে পারবেন না। নাকে রুমাল চেপে কাউকে আর রাস্তা পার হতে হবে না। আমরা শহরকে সুন্দর রাখতে ইতোমধ্যে আমাদের কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক সহায়তার ছোট বড় প্রায় বিশ হাজার বিলবোর্ড সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি। কিছুদিন পর রাস্তায় বা গাছের মধ্যে অনুমোদনহীন কোন প্রকার বিলবোর্ড থাকবে না। এসব বিলবোর্ড সরাতে আমাদের অনেক বড় বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে ও নাগরিকদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই আমরা এসব বিলবোর্ড সরিয়েছি। এখন থেকে যত্রতত্র বিলবোর্ড বা ব্যানার স্থাপন করতে দেব না। নির্দিষ্ট স্থানে ও নিয়ম মেনে বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য আমরা বিলবোর্ড নীতিমালা তৈরি করছি। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই তা তৈরি করা হবে। আমরা এখন থেকে যত্রতত্র কোন প্রকার পোস্টার লাগাতে দেব না। এজন্য বাসস্টপেজের সাথে বা এলাকার নির্দিষ্ট একটি স্থানে পোস্টার লাগানোর জন্য নির্ধারিত করে দেয়া হবে। সেখানেই শুধুমাত্র পোস্টার লাগাতে হবে। কেউ এ নিয়ম না মানলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্ষাকাল এলেই রাজধানী জলজটে আটকে যায় এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমরা রাজধানীর সৃষ্ট সকল প্রকার জলজট কমাতে কাজ করছি। তবে পানি সরতে যেসব ছোট ড্রেন রয়েছে সেগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু বড় বড় সকল ড্রেন ওয়াসার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে খাল উদ্ধার বা জলজট নিয়ন্ত্রণে আমরা ওয়াসাকে আমাদের আওতায় আনতে চাই না। আমরা ওয়াসার একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ চাই। যার মাধ্যমে সকল ড্রেনকে পানি চলাচলের উপযোগী করা হবে। ওয়াসা যদি এসব বড় বড় ড্রেনের পরিষ্কারের দায়িত্ব আমাদের উপর ছেড়ে দেয় তাহলে আশা করি আগামী ২ বছরের মধ্যেই ঢাকার জলজট বন্ধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, রাজধানীতে ছোট ছোট মোট ২৭টি পার্ক রয়েছে। যেগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু বড় বড় সকল পার্কের নিয়ন্ত্রণ করে রাজউক। আমরা এসব পার্ক রাজউকের কাছ থেকে বুঝে নিতে চাই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রাজউকের কাজ হচ্ছে নগর উন্নয়নে পরিকল্পনা করা পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ করা নয়। চলমান যানজট কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা ডিএনসিসি এলাকার মোহাম্মদপুর, আব্দুল্লাহপুর, কাওরানবাজারের ভেতরের রাস্তা, মিরপুর বাসস্ট্যান্ড, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মহাখালী ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ডসহ মোট ১০টি স্থানকে পার্কিং ফ্রি ও দখলমুক্ত করেছি। বর্তমানে এসব স্থানে নির্বিঘেœ বাস ট্রাক চলাচল করছে। এছাড়া ২১টি ইউলুপ আগামী জুনের মধ্যেই তৈরি করা সম্ভব হবে। এর ফল কিছুদিন পরই আপনারাই দেখতে পাবেন। এছাড়া বসুন্ধরার সামনে, এয়ারপোর্ট রোডের মাথায় ও কল্যাণপুরে রাইট টার্ন বন্ধ করে দিয়েছি। ফলে এসব স্থানে কোন প্রকার যানজট চোখে পড়ছে না। অবশ্য এজন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অল্প বেশি পরিমাণ রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে। বর্তমানে ২ সিটির ট্রাফিক কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রণ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণ হলে বা কোন প্রকার উন্নয়ন কাজ শুরু হলে এ ট্রাফিক জ্যাম আরও ভয়ানক আকার ধারণ করবে। এসব বিষয় ভেবে নিয়ে সকল উন্নয়ন কাজ করতে হবে। নয়ত নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে। রাস্তার উপর সকল প্রকার অবৈধ পার্কিং বন্ধ করা ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার বিষয়ে সুপারিশ করে মেয়র বলেন, শুধুমাত্র আবাসিক এলাকা গুলশানে ছোট-বড় মোট ১৬৮টি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলো একদিনেই উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। এসব হোটেল উচ্ছেদ করলে নানা সমস্যারও সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার আগে বিষয়টির সঠিক সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এদের প্রাথমিকভাবে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা যেতে পারে বা স্থাপনা সরাতে সময় দেয়া যেতে পারে। আমরা আবাসিক এলাকায় কোন প্রকার বাণিজ্যিক কর্মকা- পরিচালনার জন্য ২০০৭ সালেল পর থেকেই কোন প্রকার ট্রেড লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখেছি। এরপরও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট করে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। এ বিষয়ে অতি দ্রুত একশানে যাওয়ার চিন্তা রয়েছে। মেয়র বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোট ৯টি স্থানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ’ ছাত্রের সমন্বয়ে গবেষণায় দেখা গেছে, এসব স্থানে পেট্রোল, অকটেন পুড়ানো, বায়ু দূষণ, পরিবেশের ক্ষতি, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যানজট তৈরি হলে বছরে প্রায় ১ হাজার ৬৮ কোটি টাকার অপচয় হয়। আমরা ইতোমধ্যে ডিএনসিসির গুরুত্বপূর্ণ মোট ১০টি সড়ক দখলমুক্ত করেছি যার ফলে নাগরিকদের কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। ফুটপাথ সম্পর্কে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, আমরা আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ডিএনসিসির সকল বড় রাস্তার উপর থেকে ফুটপাথ দখল উচ্ছেদ করব। এছাড়া যদি ফুটপাথে বসতেই হয় তবে তা অত্যন্ত সুবিন্যস্তভাবে বসতে দেয়া হবে। এছাড়া নাগরিক উন্নয়নে গৃহীত প্রায় সকল উন্নয়ন কাজ বা পরিকল্পনা আগামী তিন মাস পিছিয়ে দিয়েছি। রাস্তার ময়লার ডাষ্টবিন রাখতে মোট ৭২টি সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) তৈরি করতে চাইলেও আটটি সরকারী বিভিন্ন দফতরের জমি হওয়ায় তা অধিগ্রহণে তিন মাস পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। বস্তি সমস্যা একটি বৃহৎ সমস্যা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বস্তিবাসীকে সঠিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের লে-অন দিতে রাজি হয়েছে। আমরা তাদের কর্মসংস্থানের পর কিভাবে এসব বস্তি উচ্ছেদ করব তা নিয়ে ভাবছি। পরিবহন সঙ্কটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে আমরা ঢাকার রাস্তায় বাসের রুটের সংখ্যা বর্তমানের ১৮৯টি থেকে মাত্র পাঁচটি কোম্পানিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি। বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ঢাকার রাস্তায় নতুন তিন হাজারটি আধুনিক বাস নামানো হবে, যার মধ্যে এক হাজারটি এসি বাস রয়েছে। বাস ক্রয়ের জন্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এজন্য লোন দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আশা করি আগামী বছরের মধ্যেই এসব বাস রাস্তায় দেখা যাবে। বাসস্ট্যান্ডের বা যাত্রী ছাউনির এক পাশে বিলবোর্ড অপর পাশে পোস্টার লাগানোর ব্যবস্থা করা হবে। এরপরই আমরা কেবল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে জোড় ও বিজোড় সংখ্যার বাস নামানোর চিন্তা করব। নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে গৃহীত পরিকল্পনার বিষয়ে মেয়র বলেন, আমরা ডিএনসিসির প্রতিটি রাস্তা ও বাড়িকে নিরাপত্তার আওতাভুক্ত করতে চাই। বর্তমানে মাত্র ৯০টি শক্তিশালী সিসি ক্যামেরা রয়েছে, যার মাধ্যমে উক্ত এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ অপরাধ কমে এসেছে। সমগ্র ডিএনসিসি এলাকায় দুই হাজার ৫০০টি অত্যন্ত শক্তিশালী ক্যামেরা বসানো হবে। এর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি অপরাধ করে পার পাবেন না। তাকে ধরে ফেলা হবে। জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে এসব ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। আমরা শুধু ট্রাফিক বিভাগের কাজটি করব। ইতোমধ্যে গুলশান এলাকাসহ চারটি সোসাইটিকে নিয়ে নিরাপত্তা বাড়াতে ও যানজটমুক্ত করতে বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। নাগরিকদের টাকায়ই নতুন করে সিসি ক্যামেরা কেনা হচ্ছে। নিজস্ব কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যেই আমরা ১১শ’ ক্যামেরা স্থাপন করব। এসব ক্যামেরার মাধ্যমে ডিএনসিসি এলাকার কমপক্ষে ৬০ ভাগ অপরাধ কমানো সম্ভব হবে। আমরা প্রায় এক লাখ লোককে সমাহিত করতে রায়েরবাজারে এশিয়ার বৃহত্তম কবরস্থান তৈরি করেছি। উন্নয়নকাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করেছি। নতুন এক শ’টি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তায় ওপর কোন প্রকার ময়লা না ফেলতে উৎসাহিত করতে দোকানের সামনের রাস্তায় পাঁচ হাজার ডাস্টবিন বসানো হবে। এছাড়া রাস্তার আলো স্বাভাবিক রাখতে নতুন করে ৪৬ হাজার এলইডি বাতি বসানো হবে। এসব বাতি একদিনের জন্যও নিভতে পারবে না। একটি কোম্পানির সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করা হচ্ছে। আনিসুল হক ঢাকাকে গ্রীন, ক্লিন ও বাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব ঢাকা গড়তে পত্রিকা সম্পাদকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। অনুষ্ঠানে জনকণ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ বলেন, রাজধানীতে ফুটপাথ উচ্ছেদে বিশেষ উদ্যোগ হাতে নিতে হবে। একটি স্থানে একবার উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার পর কমপক্ষে ১৫ দিন পর পর পুনরায় একই স্থানে উচ্ছেদ চালাতে হবে। এতে করে উচ্ছেদকৃত ব্যক্তির বার বার একই স্থানে দোকান বসাতে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বিধায় উক্ত স্থানে পুনরায় বসতে আগ্রহী হবেন না। এতে করে ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখা অনেকাংশে সম্ভব হবে। বর্তমানে শুধুমাত্র অবৈধ দখলের কারণে রাজধানীর মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি পার্কিংয়ের কোন স্থান খুঁজে পাওয়া যায় না। মতিঝিল এলাকার প্রায় শতভাগ ভবনের কোন প্রকার কার পার্কিং না থাকা যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া ডিএনসিসিকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার মতো বিশেষ পদ্ধতিতে গৃহস্থালি বর্জ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক স্থাপনা সরানোকে অত্যন্ত কঠিন কাজ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ঢাকাকে প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের প্রস্তাবিত মেট্রোপলিটন সিটিতে রূপান্তর করতে হবে। সকল সংস্থাকে সমন্বয় করতে হবে। রাজউক ঢাকাকে গড়তে ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা নিলেও সিটি কর্পোরেশনকে সঙ্গে রাখেনি বা তাদের মতামত পর্যন্ত নেয়নি, যা বর্তমানে সৃষ্ট সমস্যার অন্যতম কারণ। এছাড়া বিলবোর্ড উচ্ছেদ ঐতিহাসিক বটে। ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, নাগরিকদের সচেতনতার জন্য পাঠ্যপুস্তকে ময়লাকে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে ও শহরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। এছাড়া বায়ু ও শব্দদূষণ বন্ধে উন্নত বিশ্বের ন্যায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মেয়রের ঘোষিত বিভিন্ন স্বপ্ন কাগজে নয় বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা তা বাস্তবায়নে মেয়রকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান মেয়রের গৃহীত সকল উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সুন্দর ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সকলের সঙ্গে সহযোগিতা করতে চাই। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল কাজের সঙ্গে আমরা আছি ও থাকব। মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তার ওপর বর্তমানে ভূমি জরিপ অধিদফতরের সামনে রাতে ট্রাকের কারণে ব্লক হয়ে থাকে। অনেক যুদ্ধ করে উক্ত রাস্তাটি দখলমুক্ত করা হলেও বর্তমানে তা আবার দখলের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া যানজটের অন্যতম কারণ রিক্সার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে। বর্তমানে কোন মেয়রই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন না। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, যানজট নিয়ন্ত্রণ, ময়লা-আবর্জনা, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটির মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। অন্যথায় পরবর্তীতে আবার বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। তাই বিষয়টির প্রতি মেয়রদের লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বসবাসের অযোগ্য এ ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলুন। বিশেষ করে তিনি ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ করা, সঠিকভাবে রাস্তার বাতি জ্বালানো ও নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ ও সংরক্ষণের প্রতি জোর দেন। অনুষ্ঠানে ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক কাজী আনিস মাহমুদ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ, এশিয়ান এইজের সম্পাদক নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহ, বার্তা সংস্থা ইউএনবির চীফ অব নিউজ মাহফুজুর রহমানসহ বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক তাদের মতামত তুলে ধরেন।
×