ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিতাসের ৬ সদস্যের সিন্ডিকেট ॥ সকাল ৮টা থেকে রাত একটা পর্যন্ত বৈধ সংযোগে সরবরাহ বন্ধ

গাজীপুরে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ, বৈধরা গ্যাস পাচ্ছে না

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

গাজীপুরে হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ, বৈধরা গ্যাস পাচ্ছে না

রশিদ মামুন ॥ তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছয় সদস্যের দুর্নীতিবাজ শক্তিশালী সিন্ডিকেট গাজীপুর এবং আশপাশের এলাকায় হাজার হাজার অবৈধ সংযোগ দিয়ে বৈধ সংযোগে সকাল আটটা থেকে রাত একটা পর্যন্ত সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। শিল্পমালিকরা সঙ্কটের কথা জানালে উল্টো হয়রানি করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট গ্যাস বিলের অতিরিক্ত অর্থ ঘুষ না দিলে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সরবরাহ। গ্রাহক হয়রানি ও অবৈধ বাণিজ্য বন্ধে তিতাস বোর্ড গঠিত কমিটির টানা চার মাসের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ভয়াবহ এসব দুর্নীতির চিত্র। কমিটির খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিতাসের শীর্ষ পর্যায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ছয় সদস্যের একটি সিন্ডিকেট। হোতাদের নেতৃত্বে চলছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, মিটার টেম্পারিং গ্রাহক হয়রানি। বছরে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তদন্ত কমিটির প্রধান তিতাস বোর্ডের পরিচালক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক শনিবার জনকণ্ঠের কাছে তদন্ত করার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সখ্যতা পাওয়া গেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে জানিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়ার আগেই আর কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তিতাসের তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে গাজীপুরে কিছু এলাকায় গত এক সপ্তাহ জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে ভয়াবহ জালিয়াতির চিত্র উঠে এসেছে। গত কয়েকদিন গাজীপুরের এসব এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে হরিতকি তলা, ডাইনকানি, চন্দ্রা এবং আশপাশের এলাকা, কালিয়াকৈরের চেকপোস্ট, গোয়াল পাঠান এলাকায় শত শত কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন বসানো হয়েছে। তিতাসের স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঠিকাদারের সহায়তায় অবৈধ গ্যাস লাইন স্থাপন করে গ্যাস বিতরণ করছে। সেখানকার অবৈধ লাইনে গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে বৈধ লাইনের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। দিনের বেলা বাধ্য হয়ে শিল্প উৎপাদন বন্ধ রাখেন উদ্যোক্তারা। ডাইনকানির অলিউর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, এখানে বৈধ গ্যাস সংযোগের চেয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাওয়া সহজ। বৈধ গ্যাস সংযোগে গ্যাস না থাকলেও অবৈধ সংযোগে সব সময় গ্যাস পাওয়া যায়। যেহেতু তিতাসের কর্মকর্তারা সরাসরি এ গ্যাস বিল সংগ্রহ করে থাকেন তাই অবৈধ সংযোগের গ্রাহকরা যাতে ঠিকঠাক গ্যাস পায় সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করে থাকেন। ওই এলাকার একজন শিল্পমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫০ পিএসআই চাপের লাইন থেকে আমাদের শিল্পকারখানাটির সংযোগ নেয়া হয়েছে। এ সরবরাহ লাইনে রাত ২টা থেকে সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত সাত পিএসআই গ্যাসের চাপ থাকে। সকাল সাড়ে আটটা গ্যাসের চাপ একেবারে শূন্যে নেমে আসে। এতেই বোঝা যায় কেউ হয়তো ইচ্ছা করে গ্যাস লাইনের সরবরাহে বিঘœ ঘটাচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে বারবার তিতাসের স্থানীয় অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোন সুহারা হয়নি। তিতাস কর্তৃপক্ষ শীত মৌসুম, আশুগঞ্জে বিদ্যুত সরবরাহ বৃদ্ধি, অবৈধ সংযোগ বৃদ্ধিসহ এক একবার এক এক অজুহাত দিচ্ছে। কিন্তু সম্প্রতি আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি অবৈধ সংযোগে গ্যাস দিতেই বৈধ এ ৫০ পিএসআই চাপের সরবরাহ লাইনে গ্যাস কমিয়ে অন্যত্র তা সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। আবার এখানে ১৫০ পিএসআই চাপের পৃথক লাইনে কোন সময় প্রেসার কমে না। গ্যাস না থাকলে সেখানেও চাপ কম থাকার কথা। আমরা ১৫০ পিএসআই চাপের সরবরাহ লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত হতে চাইলে আমাদের প্রস্তাব অনুমোদন না করে বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব এলাকায় এখনও দেদারছে অবৈধ সংযোগ বসছে। এসব বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিতাস অবৈধ সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। তবে আলোচনা থেমে গেলে ফের তা বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। যেহেতু তিতাসের শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত তাই এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাউকে তোয়াক্কা করেন না। এ প্রসঙ্গে হরিতকি তলার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের এখানে অন্তত ২০০ রাইজার আছে। যার একটিও বৈধ না। তিতাসের কর্মকর্তা কর্মচারীরাই এসব লাইন বসিয়ে দিয়ে গেছে। এখান থেকে কোন বিল সরাসরি তিতাসে দিতে হয় না। ঠিকাদারের লোকজন এসে মাস শেষে বিল নিয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। তিতাসের তদন্ত কমিটির কাছেও একই ধরনের অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এসব অভিযোগে দেখা যায়, তিতাসের গ্যাসের অশুভ সিন্ডিকেটকে যেসব শিল্প মালিকেরা ঘুষ না দেন তাদের মিটার নষ্ট এ অজুহাতে কেটে দেয়া হয়। আর চাহিদা অনুযায়ী ঘুষ দিলে গ্যাসের বিলও তারা কমিয়ে দেন। একাধিক শিল্পমালিক তদন্ত কমিটির কাছ এমন অভিযোগ করেছেন। একটি অভিযোগে দেখা যায়, তিতাসের সিন্ডিকেটটি এতোই বেপরোয়া যে ঘুষের টাকা নিজের ব্যাংক এ্যাকাউন্টেই লেনদেন করছেন। দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ভান্নারায় উর্মি নিটওয়ারে একটি বৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন সময় তিতাসের ভালুকা জোনের ব্যবস্থাপক মশিউর, ফুতুল্লা জোনের ব্যবস্থাপক শহিরুল ও চন্দ্রার ডেপুটি ম্যানেজার তোরাব আলী ঘুষ দিতে বাধ্য করায়। এ প্রতিষ্ঠানটির এর আগে নিয়মিত ঘুষ দিয়ে সংযোগ অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু সম্প্রতি ঘুষের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ না দেয়ায় গত বছরের ২০ মে মিটার নষ্ট এমন অজুহাতে লাইনটি কেটে দেয় তিতাস। হাইকোর্ট থেকে আদেশ নিয়ে ৩৫ দিন পর সংযোগটি আবার ফিরে পায় উর্মি নিটওয়ার। যদিও এতে ক্ষিপ্ত হয় সিন্ডিকেট সদস্যরা। ভালুকা জোনের ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান উর্মি নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে হুমকি দিয়ে বলেন, আমাদের ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিব। কোর্টের আদেশ নিয়ে এলেও কাজ হবে না। আমরা এমডির লোক। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিখিত অভিযোগে বলেছেন, মশিউর রহমানকে এর আগে উর্মি নিটওয়ার গত বছরের ১২ জুলাই ও ২৩ সেপ্টেম্বর দুই দফায় ৫ লাখ টাকা করে মোট ১০ লাখ টাকা দিয়েছে। সংযোগ বহাল রাখতে জনৈক জাকিরের নামে ১২ লাখ টাকার একটি এক ১৩ লাখ টাকার আরেকটি চেক তিতাসের ফতুল্লা জোনের ম্যানেজার শহিরুলের কাছে জমা দেন উর্মি নিটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ইলিয়াস হোসেন। এছাড়া সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য চন্দ্রার ব্যবস্থাপক তোরাব আলীকে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে গত বছরের মার্চ পর্যন্ত পাঁচ কিস্তিতে দিয়েছেন ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। এসব টাকা তোরাব আলী নিয়েছেন ব্যাংকের মাধ্যমে। ওই লিখিত অভিযোগে বলা হচ্ছে তোরাব আলী ২০১৪ সালের ১৬ জুলাই ডাচ-ব্যাংলা ব্যাংকের এ্যাকাউন্ট নম্বর ১৪৪১০১১৯০৭৩ এ নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া বাকি সাত লাখ ৭৭ হাজার টাকার পাঁচটি লেনদেন করেছেন যথাক্রমে ১২ নবেম্বর ২০১৪, ৭ ডিসেম্বর ২০১৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ও ১১ মার্চ ২০১৫ সালে যমুনা ব্যাংকের ০০৭৮০৩১০০১৮৯৮৫ এ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ বিষয়ে তোরাব আলীর বক্তব্য জানতে চাইলে শনিবার তিনি বলেন, আমি একটা অনুষ্ঠানে আছি এ বিষয়ে এখন কথা বলা সম্ভব না। তিতাস সূত্র জানায়, অবৈধ গ্যাস সংযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত অক্টোবরে তিতাস বোর্ড সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন তৎকালীন তিতাসের চেয়ারম্যান জ্বালানি সচিব আবু বক্কর সিদ্দিক। বোর্ড সভায় ওই সময় সচিব জানান আমার ওপরে নির্দেশ থাকার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি করে দিচ্ছি। ওই কমিটির প্রধান করা হয় তিতাসের পরিচালক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাককে। কমিটিতে অন্য সদস্যরা হলেনÑ বোর্ডের আরেক পরিচালক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া এবং পেট্রোবাংলার জিএম জাবেদ পাটোয়ারী। সূত্র বলছে, কমিটি অনুসন্ধান শেষে ছয় সদস্যের একটি সিন্ডিকেট খুঁজে পেয়েছে। সিন্ডিকেটের সদস্য হলেনÑ ভালুকার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান ঝন্টু, গাজীপুরের ব্যবস্থাপক আ ম সাইফুল ইসলাম, ফতুল্লার ব্যবস্থাপক শহিরুল, চন্দ্রার উপ-ব্যবস্থাপক তোরাব আলী, সিবিএ নেতা ফারুক হাসান। তদন্ত কমিটি মনে করছে, সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম। তদন্ত কমিটি এ সিন্ডিকেটের পরিচয় সম্পর্কে প্রতিবেদনে লিখেছেন, মশিউর রহমান ঝন্টু মিটার টেম্পারিংয়ের গুরু। তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপি নেতা মন্টুর ভাই জামায়াতপন্থী দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মিটার টেম্পারিং করেই শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এছাড়া আ ম সাইফুল ইসলাম গাজীপুরে স্থানীয় বিএনপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত, শহিরুল ফতুল্লা বিএনপির সঙ্গে জড়িত, তোরাব আলী গাজীপুর বিএনপি নেতা। সাবেক সিবিএ নেতা ফারুক হাসান জোয়ারদার বর্তমানে অবসরে থাকলেও তিনিও মিটার টেম্পারিংয়ের প্রধান গুরু নামে পরিচিত। এছাড়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী নওশাদুল ইসলাম সম্পর্কে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি বিএনপি-জামায়াত আমলে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোঃ মোশারফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের লোক হওয়ায় জয়দেবপুর ও নারায়ণগঞ্জে পোস্টিং নিয়েছিলেন। সেখান থেকে তার উত্থান শুরু। খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তদন্ত কমিটি সুনির্দিষ্ট কয়েকটি অভিযোগের তদন্ত শেষে বলেছে বর্তমান সরকার দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের তোয়াক্কা না করেই তারা এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হয়রানি করে অবৈধ পন্থায় শত শত কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। এদের প্রায় সকলেই ট্রুথ কমিশনে গিয়ে নিজের অবৈধ সম্পদের কথা স্বীকারও করে এসেছিল। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহককে হয়রানি করে বিপুল পরিমাণ বিত্ত বৈভবের মালিক বনে গেলেও দুর্নীতির দায় চাপাচ্ছে সরকার এবং সরকারপন্থীদের ওপর। তদন্ত সূত্র জানায়, গাজীপুরের শ্রীপুরে ভিয়েলা স্পিনিং লিমিটেড একটি বৈধ সংযোগ রয়েছে যার ঘণ্টাপ্রতি লোড হলো ১৪ হাজার ৪৭০ ঘনফুট। এটিকে সম্প্রতি গ্যাস সংযোগ কমিটি লোডবৃদ্ধি করে এক লাখ ৫ হাজার ৬০০ ঘনফুটে উন্নীত করে। এ গ্রাহকের আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে গাজীপুর জোনে ভিয়েলা স্পিনিং লিমিটেড ইউনিটÑ২ নামে। কিন্তু ইউনিটÑ২ এর গ্যাস সংযোগের অনুমতি নেই। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ এটিকে গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। এক্ষেত্রে গ্যাস সংযোগ উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন না নিয়ে সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে খসড়া তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়। তদন্তে দেখা গেছে সাভারের আশুলিয়াতে দ্যাটস ইট নীট লিমিটেডের একটি শিল্পসংযোগ রয়েছে যার ঘণ্টাপ্রতি গ্যাসের লোড ৩০ হাজার ঘনফুট অনুমোদন রয়েছে। এ উদ্যোক্তার টঙ্গীর নিশাতনগরে ক্রিয়েটিভ কালেকশান লিমিটেড নামের গার্মেন্টস রয়েছে যেখানে গ্যাস সংযোগের অনুমোদন নেই। সেখানেও উপদেষ্টা মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে এখানে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটি মনে করছে দ্বিতীয় সংযোগের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে অর্থ আদান-প্রদান হয়েছে। খসড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গাজীপুরে ফার সিরামিকস, নরসিংদীর পাঠান সিএনজি, নারায়ণগঞ্জের সরকার হোসিয়ার, গাজীপুরে মেসার্স পার্টেক্স প্লাস্টিক, ভালুকায় এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইল, নরসিংদীতে মেসার্স শিল্পি ডাইংসহ এ রকম ৫০টিরও বেশি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অনুমোদনের বেশি গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। অনুমোদনের বেশি গ্যাস ব্যবহারের কারণে এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে বড় অঙ্কের অর্থ টাকা ঘুষ দিচ্ছে তিতাসের এ সিন্ডিকেটকে। তিতাস বোর্ড কর্তৃক গঠিত অবৈধ গ্যাস সংযোগ তদন্ত কমিটির কাছে আঞ্চলিক ডিভিশন গাজীপুরের ব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন অনুমোদনের বাইরে অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকারও করেছেন বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে তালহা ফেব্রিক্সকে অনুমোদনহীন ১৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের বিশাল পাইপ লাইন স্থাপন করে দিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। ফলে এ প্রতিষ্ঠানটি হিসেবে বাইরে লাখ লাখ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করছে। এছাড়া জেনারেল ফার্মাসিটিউক্যালস লিমিটেড, আকবর কটন, গাজীপুরের ডালাস ফ্যাশন, ডংব্যাং ডাইয়িংকে অনুমোদিত গ্যাস লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহারের অবৈধ সুযোগ করে দিয়েছে তিতাসের এ সিন্ডিকেটটি। তদন্ত কমিটি সিন্ডিকেটের মূল হোতা হিসেবে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে দায়ী করছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
×