ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঘের শীতে কাঁপছে দেশ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। শনিবার শীতজনিত কারণে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে শীতজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে কক্সবাজারেই মারা গেছে ১৭ শিশু। শনিবারও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে নতুন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। এদিন দিনভর বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। উত্তরাঞ্চলে দিনের বেলাতেও অব্যাহত থাকে ঘন কুয়াশা। হ্রাস পায় দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঘন কুয়াশায় জল ও সড়ক পথে যান চলাচল চরম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় গত কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এতে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে ধানের চাতালগুলো। দাম বেড়েছে শীতবস্ত্রের। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আজ রবিবারও রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে। গত তিনদিন ধরে দেশের অধিকাংশ জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। হ্রাস পেতে পেতে শনিবার অধিকাংশ সেন্টারের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যায়। তাপমাত্রা হ্রাস হওয়া অবস্থায় দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে, ততই শীতের তীব্রতা বাড়বে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গত কয়েক বছরে দেশের সব ক’টি সেন্টারে একযোগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার এমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। শনিবার দেশের সব ক’টি সেন্টারে এই পার্থক্য ৭ থেকে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করে। বিগত বছরে কয়েকটি সেন্টার ছাড়া সব ক’টি সেন্টারেই এই পার্থক্য ১১ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেন্টারের নিচে নামেনি। বর্তমানে কনকনে শীত অনুভূত হওয়ার এটিও অন্যতম প্রধান কারণ। আবহাওয়াবিদরা জানান, গত কয়েকদিন কুয়াশা ও ঠা-া বাতাসের কারণে দেশে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। তাপমাত্রা হ্রাস পেয়ে শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আর দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়েই চলেছে, যা শীতের তীব্রতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে প্রায় ১শ’ ৩৩ জন । তীব্র শৈত্যপ্রবাহে জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও মৃতের বড় চাচা মজিবুর রহমান জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় খানসামা উপজেলার পাকেরহাটের ডিস লাইন ব্যবসায়ী হাসানুল হক সুজন (২৯) বন্ধুদের নিয়ে পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানে চা পান করছিল। এ সময় প্রচ- শীতের কাঁপুনিতে সে চেয়ার থেকে পড়ে যায়। বন্ধুরা তাকে দ্রুত পাকেরহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শনিবার বাদ জোহর সুজনের জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, একদিনের ব্যবধানে রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা কমেছে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ফলে শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে মৃদু শৈতপ্রবাহ। উত্তরের হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠা-াজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে গত দুইদিনে। শুক্রবার শীতে বাগমারার দেউলিয়া গ্রামের বুলবুলের শিশুপুত্র সাম (৮) নামের একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্লিনিকে শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধ বলে জানা গেছে। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বাড়তি যতœ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। নিজস্ব সংবাদদাতা সীতাকু- (চট্টগ্রাম) থেকে জানান, সীতাকু-ে শীত নিবারণ করতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ হয়ে আঞ্জুমান (২০) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। গত শুক্রবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত গৃহবধূ উপজেলাধীন কদমরসুল এলাকার ওসমান আলীর স্ত্রী। সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ ঘরে শীত নিবারণ করতে গেলে অগ্নিদগ্ধ হয় গৃহবধূ আঞ্জুমান। দগ্ধ পরবর্তী গৃহবধূ দগ্ধ যন্ত্রণায় চিৎকার-চেচামেচি করতে থাকলে পার্শ্ববর্তী লোকজন এসে গৃহবধূকে উদ্ধার করে রাতেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩৬নং বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে শুক্রবার রাতেই মৃত্যুবরণ করেন। সীতাকু- থানার ওসি (তদন্ত) রিয়াদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নিহত গৃহবধূর অভিভাবকের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের অনুমতিক্রমে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার পঞ্চগড় থেকে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত অনেক শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে। গত তিনদিনে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। স্টাফ রিপোর্টার কক্সবাজার থেকে জানান, কক্সবাজারে ঠা-াজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
×