ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে হবে’

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

‘অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে হবে’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্মসন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। জঙ্গীরা শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরই নয়, নিজের ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককেও হত্যা করছে। প্রাকৃতিক কারণে পৃথিবীতে যত মানুষ মারা গেছে, ধর্মের নামে যুদ্ধে তারচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ শান্তি ও ধর্ম পরস্পর অবিচ্ছেদ্য। প্রত্যেক ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে, বাচন-ভঙ্গি ভিন্ন হলেও প্রতিটি ধর্মের সারমর্ম এক ও অভিন্ন। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরে অসাম্প্রদায়িকতা চর্চার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শান্তি স্থাপন করতে হবে। ‘নিজের ধর্মই উৎকৃষ্ট’ মনোজগতের এই ধারণা থেকে বের হয়ে এসে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী বাঙালীকেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে হবে। জীবন দিয়ে হলেও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা অসাম্প্রদায়িকতাকে রক্ষা করতে হবে। শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে আহ্মদীয়া মুসলিম জামাত আয়োজিত ‘সাম্প্রদায়িতা ও জঙ্গীবাদ দমনে চাই সমন্বিত উদ্যোগ’ শীর্ষক শান্তি সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন। লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ হওয়া খুব জরুরী। প্রত্যেক ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। আবার প্রত্যেক ধর্মের ভেতরই কিছু মৌলবাদী ও উগ্রবাদী রয়েছে। জঙ্গীরা শুধু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরই নয়, নিজের ধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোককেও হত্যা করছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ধর্মীয় নেতাদের ও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে ভালবাসতে হবে। তিনি বলেন, জামায়াত-জঙ্গী-মৌলবাদের আস্ফালন ক্রমাগত আমাদের সহ্য করতে হচ্ছে, এদের কাছে রাষ্ট্রও যেন জিম্মি হয়ে আছে। ৭২’র সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ধর্ম অত্যন্ত পবিত্র বিষয়, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করতেই বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। ‘আমাদের ধর্ম শ্রেষ্ঠ, অন্য ধর্ম নিকৃষ্ট’ মনোজগতের এই নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষ মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। ড. কামাল বলেন, অসাম্প্রদায়িকতা বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য। বাংলাদেশে আহমদীয়া জামাতের ১০৩ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ন্যায়ের পক্ষে আমরা একবার নয়, বহুবার বিজয়ী হয়েছি। সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যারা আমাদের শোষণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে বার বার লড়াই করেছি। ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িকতার পরাজয় ঘটেছিল, অসাম্প্রদায়িকতার বিজয় হয়েছিল। একাত্তরের শহীদরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য জীবন দিয়েছে, আমরা জীবন দিয়ে হলেও অসাম্প্রদায়িকতা রক্ষা করব। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ধর্মসন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। তাদের আমি এবং আমরা সবাই ঘৃণা করি। সংবিধান অনুযায়ী কোন সংগঠন যদি সাম্প্রদায়িকতার সম্প্রীতি বিনষ্ট করে তারা বাংলাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার অধিকার রাখে না। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মোবাল্লেগ ইনচার্জ মাওলানা আব্দুল আউয়াল খান চৌধুরী বলেন, ইসলামে আত্মরাক্ষার জন্যে যুদ্ধের কথা বলা হলেও আজ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানোর জন্য ইসলামের নাম ব্যবহার করে জিহাদের বিকৃত ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। মুসলিমদের বিপদগামী করা হচ্ছে। উগ্রবাদ ও জঙ্গীবাদ ইসলাম সমর্থন করে না। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তিনি জঙ্গীদের অর্থের উৎস বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে আদর্শিক লড়াই জারি রাখার আহ্বান জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান ফাদার তপন ডি রোজারিও বলেন, প্রতিটি ধর্মেই শান্তির কথা বলা হয়েছে। আহমদীয়া মুসলিম জামাতের জাতীয় আমির মোবাশ্বের উর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের কাজল দেবনাথ, ব্রাদার গিওম, শিয়া সম্প্রদায়ের মাওলানা সাইয়েদ হাবিব রেজা হোসাইনী, দি নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি জুলফিকার আলি মানিক, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মে. জে. আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
×