ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হতাশ সহস্রাধিক চাষী

দুই হাজার একর জমি অনাবাদি ॥ বরিশালে সেচ সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:১১, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

দুই হাজার একর জমি অনাবাদি ॥ বরিশালে সেচ সঙ্কট

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ একমাত্র পানি বিক্রেতাদের খামখেয়ালিপনার কারণে পানি সঙ্কটে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার গৌরনদী উপজেলার ২৫টি ব্লকের প্রায় দু’হাজার একর জমি অনাবাদি রয়েছে। বছরের বারো মাসের খাবার সংগ্রহের একমাত্র উৎস জমিতে এবার ইরি-বোরো ধান চাষ করতে না পেরে কৃষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। এজন্য কৃষকরা পানি বিক্রেতা ও ব্লক ম্যানেজারদের খামখেয়ালিপনাকেই দায়ী করেছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়নের উত্তর ও দক্ষিণ চাঁদশী, বালিয়ারপাড়, বাদামতলা, গোবরদ্ধর্ণ, কুমারভাঙ্গা, দক্ষিণ-পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণ শিহিপাশা এবং শাওড়া গ্রামের ২৫টি ব্লকের প্রায় দু’হাজার একর জমির ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ওই সব গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার। এসব ব্লকে বোরো চাষের জন্য পানি সরবরাহ করা হতো গয়নাঘাটা খালের মুখের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন আল-আমিন টেকনিক্যাল কলেজের পাশের পালরদী নদীর শাখা খাল থেকে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন আগে খালের মুখে অপরিকল্পিতভাবে সøুুইসগেট ও সরকারী খালের একটি অংশ অবৈধভাবে দখল করে টেকনিক্যাল কলেজের ভবন নির্মাণ করায় খরস্রোতা খালটি তার জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে ব্লকে পানি সরবরাহের জন্য দীর্ঘদিন থেকে স্থানীয় শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার খালের মুখে বৈদ্যুতিক সেচপাম্প বসিয়ে খালে পানি সরবরাহ করত। বিভিন্ন ব্লকের ম্যানেজার তাদের কাছ থেকে ব্লকের জমি অনুযায়ী পানি ক্রয় করে পুনরায় সেচপাম্পের সাহায্যে স্ব-স্ব ব্লকে পানি সরবরাহ করতেন। ব্লক ম্যানেজারদের কাছ থেকে চড়ামূল্যে পানি ক্রয়ের পর জমিতে বোরো চাষ করে বাম্পার ফলন ফলিয়ে বারো মাসের খাবার মজুদের পর উদ্বৃত ফসল বিক্রি করতেন চাষীরা। উত্তর চাঁদশী গ্রামের চাষী শেখ শামীম, দক্ষিণ চাঁদশী গ্রামের শাহীন সরদার, মাহাবুব সরদার ও শাওড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানসহ অসংখ্য চাষী জানান, প্রতি বছর তারা প্রতি বিশ শতক জমিতে পানি উত্তোলন বাবদ ব্লক ম্যানেজারদের ছয় শ’ টাকা করে পরিশোধ করতেন। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে অতীত বছরের ন্যায় পানি সরবরাহের কথা ছিল। সে মতে তারা বোরো চাষের বীজতলা তৈরিসহ সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে ভরা মৌসুমে ব্লক ম্যানেজাররা পানি সরবরাহ না করায় তাদের বীজতলার বীজ নষ্টসহ সব জমি অনাবাদি রয়েছে। এতে তারা খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন বলেও উল্লেখ করেন। ব্লক ম্যানেজার হিরন ফরিয়া ও শেখ এনামুল হক জানান, তারা প্রতি বছর আল-আমিন কলেজের পাশ থেকে খালে পানি সরবরাহ করা শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদারের কাছ থেকে প্রতি বিশ শতক জমির জন্য ৩শ’ টাকা দরে পানি ক্রয় করে খাল থেকে পুনরায় সেচপাম্পের সাহায্যে চাষীদের জমিতে পানি সরবরাহ করে আসছিলেন। চলতি মৌসুমেও একই ভাবে পানি সরবরাহের কথা থাকলেও জনৈক শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার খালে পানি সরবরাহ না করায় তারা ব্লকের জমিতে পানি সরবরাহ করতে পারেননি। তারা আরও অভিযোগ করেন, জনৈক শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদারের কাছে মোটা অঙ্কের বিদ্যুত বিল বকেয়া থাকায় চলতি মৌসুমে স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত অফিস থেকে তাদের বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ দেয়া হয়নি। এজন্য তারা (শাহ আলম ও হাবুল তালুকদার) বৈদ্যুতিক সেচপাম্প বসিয়ে খালে পানি সরবরাহ করতে না পারায় ব্লকের জমি অনাবাদি রয়েছে। অভিযোগ স্বীকার করে শাহ আলম সরদার ও হাবুল তালুকদার জানান, ২৫টি ব্লকের অধিকাংশ ম্যানেজার সঠিকভাবে টাকা পরিশোধ না করার কারণেই বিদ্যুত বিল বকেয়া রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। টাঙ্গাইলে সহস্রাধিক একর বিঘা জমি অনাবাদি নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল থেকে জানান, পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে বিএডিসির ‘অচল নলকূপ সচল কর্মসূচী’ মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ায় সহস্রাধিক একর জমি অনাবাদী থেকে যাচ্ছে। জানা যায়, বাড়তি খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকার বিএডিসির সহযোগিতায় টাঙ্গাইলে ৫০ কোটির টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় বিএডিসি ২০১৪ সালে গোপালপুর উপজেলার চাতুটিয়া ও নিয়ামতপুর গ্রামে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি গভীর নলকূপে ভূগর্ভস্থ সেচনালাসহ অবকাঠামো নির্মাণ করে। কিন্তু সেচ মৌসুম শেষ হওয়ার অজুহাতে পল্লী বিদ্যুত গত মৌসুমে সংযোগ দেয়নি। চাতুটিয়া ১১৮নং গভীর নলকূপের ম্যানেজার মাওলানা আব্দুল হামিদ অভিযোগ করেন, গত মৌসুমে সংযোগ না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এবার মৌসুমের শুরুতেই গোপালপুর জোনাল অফিসে যোগাযোগ করে। কিন্তু ঘুষ না দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এবারও টালবাহানা করছে। বিএডিসির ওই প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, টাকা জমার মানি রিসিট বিএডিসি এক বছর আগেই পল্লী বিদ্যুত অফিসে সরকারীভাবে জমা দিয়েছে। আসলে পল্লী বিদ্যুত ফাইল হারানোর অজুহাত তুলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কৃষকদের হয়রানি করছে। গোপালপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, বোরো চারা রোপণের সময় প্রায় শেষ। সংযোগ না পাওয়ায় সরকারী প্রকল্পের বোরো চাষীরা ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পল্লী বিদ্যুতের গোপালপুর ম্যানেজার আবুল বাশার জানান, ঘুষ চাওয়া হয়নি।
×