ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মূসক আইনের দোহাই দিয়ে ছবিসহ সতর্কবাণীতে গড়িমসি

বাণিজ্য কমার আতঙ্কে কোম্পানিগুলো

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬

বাণিজ্য কমার আতঙ্কে কোম্পানিগুলো

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ বাণিজ্য কমার আতঙ্কে দিন কাটছে তামাক কোম্পানিগুলোর। এ কারণেই মাকজাত পণ্যের মোড়কে যাতে ছবিসহ সতর্কবাণী ছাপতে না হয়, সে জন্য নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে তারা। উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য এবং আইন মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠির পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের দাবি আইন মানার জন্য এক বছরের সময়সীমাটি কম, এটা ১৮ মাস হলে ভাল হতো, তাছাড়া এই সতর্কবাণী মোড়কে নিচের দিকে ছাপানোর বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছে এবং বান্ডরোলের অযুহাতসহ নানা অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তবে এখনও নিজের অবস্থান থেকে সরেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের অবস্থান ধরে রেখে তামাক কোম্পানিগুলোর অপকৌশলের ফাঁদে পা না দিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রতি সতর্ক থাকার আহব্বান জানিয়েছেন তামাক নিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনের দায়িত্বশীলরা। এ বিষয়ে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের আহ্বায়ক এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহুল কুদ্দুস তালুকদার জনকণ্ঠকে বলেন, এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিজের অবস্থানেই আছে। আমরা আশা করছি সময় অনুযায়ীই আমরা এর বাস্তবায়ন দেখব। তিনি বলেন, বিধি অনুযায়ী ১৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সিগারেট ও অন্য তামাকের প্যাকেটের গায়ে এসব সচিত্র বাণী থাকবে। সচিত্র সতর্কবাণী এমনভাবে মুদ্রণ করতে হবে যেন স্ট্যাম্প বা ব্যান্ড রোলের নিচে চাপা না পড়ে। সূত্র জানায়, বর্তমান আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সিগারেটের প্যাকেটসহ অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের মোড়কে আগামী ১৯ মার্চ থেকেই সচিত্র সতর্কবাণী যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর ১০ নং ধারায় তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র সতর্কবাণী মুদ্রণের কথা বলা হয়েছে। প্যাকেটের গায়ের ৫০ শতাংশে থাকবে এই সতর্কবাণী সম্বলিত ছবি। ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে যে ৬টি সচিত্র সতর্কবাণীর কথা আইনে বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক, ধূমপানের কারণে হৃদরোগ হয়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয় এবং ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে যেসব ছবির কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে, তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মুখে ও গলায় ক্যান্সার হয়, তামাকজাত দ্রব্য সেবনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। এছাড়াও বিধির মাধ্যমে অন্য একটি সতর্কবাণী নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদেরের কাছে লেখা চিঠিতে বলা হয়েছে, আইনে আছে, সচিত্র সতর্কবাণী এমনভাবে ছাপাতে হবে, যেন তা স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল কিংবা অন্য কোন কারণে ঢেকে না যায়। মূসক আইনে স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল যেভাবে লাগাতে বলা হয়েছে, তাতে করে ছবি ঢাকা পড়ে যাবে। তাদের দাবি, ছবির নমুনা বিধিমালা পাস হওয়ার ছয় মাস পরও তাদের হাতে তা পৌঁছায়নি। ছবি হাতে পাওয়ার পর তারা বলেছে, এই ছবিগুলো ছাপানোর কারিগরি দক্ষতা নেই। সতর্কবাণী ছয় মাস পরপর পরিবর্তন হবে। কাজেই মাঝামাঝি সময়ে দুই ধরনের সতর্কবাণী পাওয়া যেতেই পারে। এছাড়া আইন মানার জন্য এক বছরের সময়সীমাটি বড্ড কম, এটা ১৮ মাস হলে ভালো হতো ইত্যাদি। বিভিন্ন সূত্র বলছে তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ছবিসহ সতর্কবাণী প্রকাশের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ আনার একটা আইনী লড়াইয়ের মধ্যেও যেতে পারে।
×