ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘একুন তো তোর কামে যাওয়ার সুমায় নাই বাবু’

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

‘একুন তো তোর কামে যাওয়ার সুমায় নাই বাবু’

হ্যালো...হ্যালো...কি বলছেন... কে? কে...? আরে বাবু তুই। এখন কেনে ফুন করলিরে বাবু। আমিতো ক্ষেতে ধান কাটার কাজ করছি। একুন তো তোর কামে যাওয়ার সুমায় নাই বাবু। এখন ধান (আমন) কাটার সুমায়- (সময়) তো অন্যকামে (পৃথক কাজ) যেতে পারবোনারে বাবু। তু পরে ফুন দিস...। রাজশাহীর তানোরের কৃষ্ণপুর গ্রামের ক্ষেতে সারিবদ্ধভাবে আমন ধান কাটার সময় মোবাইল ফোন বেজে ওঠার পর কোমর থেকে সেটি বের করে হাসিমুখে এভাবেই নিজের ভাষায় কথা বলছিলেন আদিবাসী শ্রমিক বিধাতা রানী। তার ফোনে কথা বলার সময় অন্যরাও পাশ থেকে সায় যোগাচ্ছিলেন বলে দিচ্ছিলেন নিজেদের কথা। এমন দৃশ্য এখন আর কল্পনা নয়। বাস্তবতায় দেখা মেলে হরহামেশা। মাঠের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মোবাইল ফোনেই এখন সেরে নেয়া যায় প্রয়োজনীয় সবকিছু। ধান কাটার কিংবা রোপণের অথবা নিড়ানী সব কাজের ফাঁকে প্রয়োজনে মোবাইলের ব্যবহার হচ্ছে সমানে। এতে কাজের গতিও বেড়েছে। মাঠ থেকেই আরেক মাঠের কাজের চুক্তি হয়ে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। শহরে তো বটেই এখন গ্রামের মেঠোপথে কিংবা সবুজ ক্ষেতের আইল মাড়িয়ে পা ফেললেই দুই একজনকে দেখা যাবে যারা মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। কৃষক হোক কিংবা কৃষি শ্রমিক সবার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের সেরা মাধ্যম হয়ে উঠেছে এখন মোবাইল ফোন। একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময় থেকে শুরু করে সব ধরনের খোঁজ-খবর নাগালের মধ্যে মুহূর্তে এনে দিয়েছে মোবাইল ফোন নামের ক্ষুদ্র এ যন্ত্র। গতি এনেছে কাজকর্মে। গ্রামের অনগ্রসরতার মূলে অশিক্ষাকে দায়ী করা হলেও গত তিন দশকে মোবাইল ফোনের কল্যাণে অনেক অগ্রসর হয়েছে। গ্রামের মানুষও এখন ঘরে বসে খুব সহজেই খবর রাখছেন সবকিছুর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। মোবাইল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলেছে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রাও। গ্রামে বসে দেশের সব খবরের পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই খবর রাখতে পারছেন বিশে^র। রাজশাহী নগরীর অলকার মোড়ের চায়ের দোকানে মোবাইল নিয়ে কথা হচ্ছিল, পানের দাকানি বাক্কারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা আজব এক যন্ত্র ভাই। দূরের মানুষকে খুব সহজেই কাছে এনে দেয়। এটার উপকার অনেক। সবকাজেই ব্যবহারের কারণে চরম জনপ্রিয় হয়ে মোবাইল ফোন ছাড়া এখন অন্ধ মনে হয়। শহরের পাশাপাশি গ্রামে যে প্রযুক্তির হাওয়া বইতে শুরু করেছে তা এখন আর শহরের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। গ্রামের মানুষের কাছে পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট এখন নতুন শব্দ নয়। মোবাইলের মাধ্যমেই ইন্টানেটে প্রবেশ করে সেরে নিচ্ছেন সব কাজ। মোবাইল ফোনের বিস্তৃত ব্যবহার তার উদাহরণ। তানোরের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, মোবাইলের ব্যবহার আজ গ্রামাঞ্চলের মানুষকে করেছে গতিশীল এবং জীবনকে করেছে সহজ। গ্রামীণ জীবনের অচলায়তন ভাঙতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। শুধু মোবাইল ফোনের ব্যবহারে এখন কৃষকরা খুব সহজেই বোতাম চেপেই জেনে নিতে পারছেন প্রতিদিনের বাজারদর এবং প্রয়োজনীয় সব তথ্য। এই মোবাইলের মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ। এক কথায় প্রযুক্তির আশীর্বাদ মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে চাষাবাদে, ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য সেবায়, প্রবাসী আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষায় এবং আরও নানাভাবে দৈনন্দিন কাজে। গ্রামের মানুষের কাছে এখন ইন্টারনেটও পরিচিতি লাভ করছে। মোবাইলেই রেডিও বার্তা থেকে গান শোনা সব কাজই হচ্ছে অনায়াসেই। Ñমামুন-অর-রশিদ রাজশাহী থেকে
×