ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল হাতে নারী বেড়েছে খবরদারি

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

মোবাইল হাতে নারী বেড়েছে খবরদারি

হাওড়দ্বীপ খালিয়াজুরির এক প্রত্যন্ত গ্রামের গৃহবধূ নিলুফা আক্তার। স্বামী সাজেদুল হক গাজীপুরে গার্মেন্টসে কাজ করেন। নিলুফা বাড়িতে মাসভিত্তিক কৃষিশ্রমিক রেখে কিছু জমি চাষাবাদ করান। দরকার পড়লে মোবাইল ফোনে স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে নেন তিনি। আর ওদিকে বাড়িতে টাকা-পয়সার দরকার পড়লে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন সাজেদুল। এভাবেই স্কুল পড়ুয়া দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন নিলুফা। হাতে মোবাইল ফোন থাকায় সংসার পরিচালনায় তার খুব একটা অসুবিধা হয় না। একই এলাকার সীমা রাণী সরকারের দুই ছেলেমেয়ে নেত্রকোনা শহরে থেকে লেখাপড়া করে। আর তিনি বাড়ি সামলান। মোবাইল ফোনের সাহায্যে বাড়িতে থেকেই নিয়মিত সন্তানদের খোঁজ-খবর নিতে পারেন ওই মধ্যবয়স্কা নারী। ছেলেমেয়েরা কি খাচ্ছে, কিভাবে কি রান্না করতে হবেÑ তারও নির্দেশনা দিতে পারছেন বাড়িতে বসেই। এ সবই সম্ভব হচ্ছে মোবাইল ফোনের কল্যাণে। এছাড়াও মোবাইল ফোন আরও এক কাজে লাগে তার। একটু অবসরে, অথবা একাকিত্ব কাটাতে মেমোরি কার্ডের সাহায্যে পছন্দের গানও শোনেন তিনি। ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী রাশেদা সংসারের অসচ্ছলতার কারণে শহরের কলেজে ভর্তি হতে পারেনি। কিন্তু গ্রামে থেকেই সে মোবাইল ফোনের সাহায্যে ফেসবুকে নিয়মিত শহরের কলেজে ভর্তি পুরনো সহপাঠী বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাদের কাছ থেকে নোট, পরীক্ষার সাজেকশনস্ আনে। এটিও সম্ভব হচ্ছে হাতে মোবাইল ফোন থাকাতে। টিউশনির তিন হাজার টাকায় মোবাইল সেটটি কিনেছে এই তরুণী। একটি মোবাইল, আর তার সঙ্গে ইন্টারনেট সংযোগ পুরো পৃথিবীকে যেন হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে তার। এ তো গেল মোবাইল ফোনের সাধারণ কয়েকটি ব্যবহার মাত্র। আরও অনেক কাজে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষুদ্র এই ডিজিটাল ডিভাইস। এটি অনেক সহজ করে দিয়েছে গ্রামীণ নারীর জীবনযাত্রাকে। চটজলদি ফোন করেই বহু দূরের কোন গাঁয়ে বিয়ে হওয়া নারী সহজেই জেনে নিতে পারছেন তার বাবার বাড়ির খোঁজ খবর। ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ীরা বাজারে ফোন করে জানতে পারছেন জিনিসপত্রের দর-দাম। দিতে পারছেন পণ্যের অর্ডার। সামাজিক কুসংস্কারের কারণে যে কিশোরীরা তার প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করেন; তারাও অনায়াসে গুগলে সার্চ দিয়ে জেনে নিচ্ছে সুরক্ষার উপায়। অথবা হটলাইনে ফোন করে নিয়ে নিচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ। কর্মজীবী নারী কর্মস্থল থেকে এক মিনিটে জেনে নিতে পারছেন বাসা-বাড়ির খবর। এক কথায় মোবাইল এখন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। এর বহুমুখী ব্যবহার নারীদের জীবনযাত্রাকে করেছে সহজ। প্রসারিত করেছে তাদের যোগাযোগ, চিত্তবিনোদন ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্র। অথচ আজ থেকে দেড় যুগেও অনেকের কাছে তা ছিল স্বপ্ন বা অকল্পনীয় কোন বিষয়। তাই বলা চলে, নারী-পুরুষ উভয়ে মিলেই ঘটিয়েছে বাংলাদেশের মোবাইল বিপ্লব। Ñসঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে
×