ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুন্দরবনে বাঘ কমার কারণ সন্ধানে চলছে জরিপ

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

সুন্দরবনে বাঘ কমার কারণ সন্ধানে চলছে জরিপ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে বাঘের আবাসস্থল, চিত্রল হরিণসহ বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও খাল জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের বাঘ প্রকল্পের আওতায় ইউএসএআইডি ও বন বিভাগের ওয়াইল্ড টিমের বিশেষজ্ঞরা ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে সরেজমিন জীববৈচিত্র্যসহ বন্যপ্রাণী ও খালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জরিপ ও গণনার কাজ করছেন। বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে এ জরিপকাজে ইউএসএআইডি এক কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে। এই গণনা বা জরিপের কাজ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে বলে খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনের মোট আয়তনের স্থলভাগের পরিমাণ চার হাজার ১৪৩ বর্গকিলোমিটার যা সমগ্র সুন্দরবনের ৬৮.৮৫ অংশ। এ বনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অরকিট রয়েছে। বিশ্বের গর্ব সুন্দরবনে বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শূকর, উটবিড়াল, বন মোরগ, বানরসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। এখানে আরও তিন শতাধিক প্রজাতির পাখি রয়েছে। এক হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার বা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ এলাকায় প্রায় সাড়ে ৪শ’ নদী-খাল জালের মতো ছড়িয়ে আছে। সুন্দরবনের বিশাল এই জলভাগে মৎস্যসম্পদের মধ্যে রুপালি ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, এক প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক রয়েছে। আছে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ছয় প্রজাতির ডলফিন, কচ্ছপ, গুঁইসাপ, লোনা পানির কুমির, হাঙ্গর ও অজগরসহ বিভিন্ন প্রকার সাপ। এসব বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্যের মধ্যে সুন্দরবনের পাহারাদার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জরিপ বা গণনার কাজ শেষ হয়েছে। সর্বাধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে ওই বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা চার শতাধিক থেকে কমে আশঙ্কাজনক হারে এসে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। এ নিয়ে সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। এরই প্রেক্ষাপটে বাঘ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বাঘের আবাসন্থল ও চলাচলের গতিপথ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও খালের সঠিক সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা হালনাগাদ জানতে ইউএসএআইডি ও বন বিভাগ সুন্দরবনে জরিপ বা গণনার কাজ শুরু করেছে। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহিদুল কবির জানান, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জরিপের পাশাপাশি এই বনের খালগুলো গণনাসহ হালনাগাদ প্রকৃত অবস্থা জানতে জরিপ শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে এক হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটার নদ-নদী ও খাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমুদ্রের পলিবাহিত জোয়ারের পানির পলিমাটি জমে সুন্দরবনের খালগুলোর বর্তমান অবস্থা কোন্ পর্যায়ে রয়েছে হালনাগাদ সেসব তথ্য জানতে এই ম্যানগ্রোভ বনজুড়ে সরেজমিন জরিপ বা গণনার কাজও পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূলজুড়ে বড় বড় চর জেগে ওঠার পর প্রাকৃতিকভাবে সেখানে ম্যানগ্রোভ বনের সৃষ্টি হয়েছে। এসব নতুন বন এলাকায়ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন খাল। এসব খাল রয়ে গেছে সুন্দরবন বিভাগের জরিপ বা গণনার বাইরে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে সুন্দরবনের বাঘ প্রকল্পের আওতায় রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল, চিত্রল হরিণসহ বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও খাল গণনা বা জরিপের কাজ শুরু হয়। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এসব জরিপ বা গণনার কাজ শেষ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
×