ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছড়িয়ে পড়ছে রোগ

জেঁকে বসেছে মাঘের শীত

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

জেঁকে বসেছে মাঘের শীত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দুই দিনের বৃষ্টির পর বেড়েছে শীত। কমেছে তাপমাত্রা। জবুথবু হয়ে পড়েছে রাজশাহী, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর ও ঈশ্বরদী এলাকার মানুষ। বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ায় হঠাৎ করেই জেঁকে বসেছে তীব্র শীত। গত দু’দিনের হাড়কাঁপানো শীতে মানুষ এখন জবুথবু। শুক্রবার সকাল থেকে সারাদিন আকাশ ছিল গোমরা। অব্যাহত কনকনে ঠা-া আর তীব্র শীতে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছে না। তবুও শীতকে উপেক্ষা করে কেউ কেউ বের হতে বাধ্য হচ্ছে। ঠা-ায় শিশু ও ছিন্নমূল-খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। বিভিন্ন বস্তি ও রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে হতদরিদ্র মানুষকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার ভিড় জমাচ্ছে পুরনো কাপড়ের দোকানগুলোতে। মানুষের পাশাপাশি প্রচ- শীতে এখানে গবাদিপশুও কষ্ট পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে হালকা ধরনের বৃষ্টিপাতের মধ্য দিয়ে এখানে বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। রাজশাহী ॥ দুই দিন আগে বৃষ্টির পর রাজশাহী অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শুক্রবার দুপুরের পর মেঘ কেটে ক্ষণিক সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিললেও বেড়েছে শীত। তিন দিন আগেও অনেকে বলছিলেন এবার শীত পড়ল কই, সময় চলে গেল, কিন্তু শীতের দেখা মিলল না। তবে হঠাৎ করেই রাজশাহী অঞ্চলে দেখা মেলেছে শীতের। মাঘের বৃষ্টির পর এ অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আফরোজা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। রাজশাহীতে সর্বমোট ৪২ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাজশাহী অঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে যায়। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এর আগের দিন বুধবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ছিল ১৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর শুক্রবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কাছাকাছি চলে আসায় শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিন দিন পর রাজশাহী অঞ্চলে সূর্যের দেখা মিলেছে শুক্রবার বেলা দুপুর ২টার দিকে। এর কিছুক্ষণ পর তা আবার মেঘে ঢেকে যায়। দিনাজপুর ॥ শৈত্যপ্রবাহে দিনাজপুরের জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনাজপুরের আবহাওয়া অফিসের সহকারী তজিবর রহমান জানান, শুক্রবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাত থেকে বাতাসের কারণে শৈত্যপ্রবাহ বইছে। শীতের তীব্রতার ফলে জনজীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে দরিদ্র ও দিনমজুরদের কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। ঈশ্বরদী ॥ গত দু’দিনের তুষার বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে ঈশ^রদীর মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। সূর্যের আলো না থাকা এবং শৈত্যপ্রবাহের কারণে মানুষ অনেকটা গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রচ- ঠা-ায় মানুষ ঠক ঠক করে কাঁপছে। বিশেষ করে রেলস্টেশন ও চরাঞ্চলের বস্ত্রহীন এবং ভাসমান মানুষগুলোর অবস্থা খুবই শোচনীয়। ঈশ^রদী চালকল মালিক গ্রুপের শতাধিক কম্বল বিতরণ ছাড়া এখানে কোন সংগঠন বা সরকারীভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। শুক্রবার ঈশ^রদী আবহাওয়া অফিস সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে। প্রচ- শীতের কারণে শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দিকাশিসহ নানা রোগের শিকার হচ্ছে। প্রতিদিনই হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পশুকুলেও একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের দেয়া তথ্যমতে, বাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহনেও যাত্রীসংখ্যা কম হচ্ছে। চাল উৎপাদনের বৃহৎ মোকাম বলে খ্যাত ঈশ^রদীর সাত শতাধিক ধান চাতালের প্রায় নব্বই ভাগ চাতাল বন্ধ রয়েছে। নওগাঁ ॥ নওগাঁ অঞ্চলে কনকনে শীত জেঁকে বসেছে। শুক্রবার নওগাঁয় তাপাঙ্ক বেশ নেমে গেছে। গত তিনদিন ধরে এ অঞ্চলে সূর্যের দেখা মেলেনি। একে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, তার ওপর ভোর থেকে উত্তরের হিমেল হাওয়া শীতের তীব্রতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কনকনে শীতে এখানে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। এদিন শহরের চা দোকানগুলোতে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। গরম চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিয়ে অনেককেই একটু উষ্ণতা লাভের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে খড়-কুটো জড়িয়ে আগুনে শরীর তাপাতে দেখা যায়। কর্মজীবী মানুষ অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। মাঠে বোরো চাষের জমি তৈরির কাজও ব্যাহত হয়ে পড়েছে। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে ছুটির দিন হলেও শহরের গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে বেশ ভিড় দেখা যায়।
×