ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অভিভাবকদের

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

চট্টগ্রামে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অভিভাবকদের

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে তৃতীয় শ্রেণীর এক স্কুল শিক্ষার্থীর ওপর নির্মাণ শ্রমিকের লোলুপ দৃষ্টির জের ধরে পুলিশের পক্ষপাতিত্বের বিষয়টি চরম ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অভিভাবকদের দাবি, নির্মাণ শ্রমিকের বিচার দাবি করা হয়েছিল নগরীর সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কাছে। গত সোমবারের ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত গড়ালেও অভিভাবক মহল অনড় থাকায় কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আজ শনিবার স্কুলের পক্ষ থেকে গড়ে দেয়া ৭ সদস্যের কমিটি একটি তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, শিশু নির্যাতনের আশঙ্কায় থাকা অভিভাবকরা স্কুল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে উল্টো পুলিশী হয়রানির শিকার হয়েছে। নারী অভিভাবকদের সরাতে কোতোয়ালি থানার পক্ষ থেকে যেসব পুলিশ ব্যবহার করা হয়েছে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা নারী অভিভাবকদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অভিভাবক মহল। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। জানা গেছে, কোতোয়ালি থানা থেকে মাত্র কয়েকশ’ গজ দূরে অবস্থান সেন্ট স্কলাস্টিকা স্কুল। গত সোমবার স্কুল প্রাঙ্গণেই এক নির্মাণ শ্রমিক তৃতীয় শ্রেণীর এক ছাত্রীকে আটকে রাখার চেষ্টা করে। ওই সময় শিক্ষার্থী আর্তচিৎকার করতে করতে শ্রেণীকক্ষের দিকে ছুটে যায়। ওই সময় কয়েক অভিভাবক শিশুদের দৌড়ে পালানোর বিষয়টিও লক্ষ্য করেছেন। শিশুটিও বাড়ি ফেরার পর তার মাকে জানায়। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি কয়েক অভিভাবক প্রধান শিক্ষিকা রেনু মারিয়া পালমারকে অবহিত করেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। বরং অভিভাবকদের দিকে আঙুল তুলে কক্ষ থেকে বের করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর থেকে অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিচার দাবি করে বুধবার সকাল থেকে অভিভাবকরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে স্কুল সংলগ্ন সড়কে অবস্থান কর্মসূচী ও মানববন্ধন পালন করেন। বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনকালে শিশু নির্যাতনের চেষ্টায় প্রশ্রয়দাতা হিসেবে প্রধান শিক্ষিকার ও নির্মাণ শ্রমিকের বিচার দাবি করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষিকার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলে স্কুলের পক্ষ থেকে কোতোয়ালি থানাকে পুলিশ প্রেরণর অনুরোধ জানানো হয়। মিথ্যা অজুহাতে ও প্রধান শিক্ষিকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে কোতোয়ালি থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সেখানে গিয়ে অভিভাবকদের ওপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে মহিলা অভিভাবকরা পুরুষ কর্তৃক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ফটো সাংবাদিকরাও পুলিশের ধাক্কার শিকার এমন প্রমাণ মিলেছে। তবে পুলিশের পুরুষ সদস্য কর্তৃক নারী অভিভাবকদের হয়রানির বিষয়টি অস্বীকার করছেন কোতোয়ালি থানার ওসি। এমনকি মিডিয়াকে তথ্য দিতেও নারাজ পুলিশ কর্মকর্তারা। অভিযোগ উঠেছে, কোতোয়ালি থানা পুলিশ নির্মাণ শ্রমিকের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন নাকি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার নির্দেশনায় চলছেন। শিশু নির্যাতনের চেষ্টার বিচার চেয়ে শেষ পর্যন্ত পুলিশী নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে নারী অভিভাবকদের। তারা আরও অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষিকা কথা বলার চেষ্টা করলেও পুলিশ অভিভাবকদের সরিয়ে দিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। ফলে অভিভাবকরা কথা বলার সুযোগ পায়নি, বরং উল্টো পুলিশের হাতে নাজেহালের শিকার হয়েছেন তারা। এদিকে, গত কয়েকদিন আগেও সিআরবি এলাকায় সন্ত্রাসী কর্তৃক ভূমি দখলের ঘটনায় নারীদের ওপর চড়াও হয়েছিল পুলিশ। সিআরবির পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যদের হাতে পায়ে ধরেও ঘটনাস্থলে আনতে পারেনি ভুক্তভোগী শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা। এমন ঘটনায় কোতোয়ালি থানার এ ওসি এমনকি ডিউটি অফিসারও মামলা নেয়নি। বরং কারসাজি করে নিবন্ধন নম্বর ছাড়া এজাহার দায়ের করেছেন ডিউটি অফিসার থানার মুন্সির মাধ্যমে। অবশেষে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিভাবক জিয়াউল আলমের আর্জির প্রেক্ষিতে গত বুধবার এ ঘটনায় চট্টগ্রাম আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক পত্রিকার প্রতিবেদন পড়েই মামলা নথিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
×