ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সুরে সুরে ছায়ানটে সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

সুরে সুরে ছায়ানটে সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২৭ জানুয়ারি সঙ্গীতজ্ঞ ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পথিকৃৎ ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণবার্ষিকী। বিশুদ্ধ জীবনচর্চার পথপ্রদর্শক এই গুণী মানুষটি পেশায় সাংবাদিক হলেও নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন মানুষ ও মানবতার কল্যাণে। সংস্কৃতিকে শাণিত হাতিয়ার করে লড়েছেন অশুরের বিরুদ্ধে। প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে অনুসরণীয় এই বরেণ্য ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করা হলো শুক্রবার। গীতি শ্রদ্ধার্ঘ্য শীর্ষক স্মরণানুষ্ঠানে গান ও কথায় নিবেদন করা হলো শ্রদ্ধাঞ্জলি। শীতের সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির ওয়াহিদুল হকের স্নেহধন্য কিছু কণ্ঠশিল্পী। যাঁরা ওয়াহিদুল হকের কাছে সরাসরি সঙ্গীত শেখার সুযোগ পেয়েছে, গাইতে শিখেছে ও গাইবার ভাবটা রপ্ত করেছেন। গান শুরুর আগে শিল্পীরা বলেন, রবীন্দ্র দর্শন ও রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জীবনের পাথেয় মেনেছিলেন ওয়াহিদুল হক। তার গানকে অবলম্বন করে জীবনভর মানুষ হওয়ার কথা বলেছেন সবাইকে। সংক্ষিপ্ত কথান শেষে ওয়াহিদুল হকের প্রিয় গান দিয়েই শ্রদ্ধা ও স্মরণ করা হয় তাঁকে। সুরের আশ্রয়ে গাওয়া হয়Ñ আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে/কে আছ জাগিয়া পুরবে চাহিয়া...। উদ্বোধনী এ সঙ্গীত শেষে শিল্পী মিতা হক বলেন, গানের ভিতর দিয়ে বাংলার মানুষকে আলোর দিশা দিয়েছেন ওয়াহিদুল হক। দেখাতে চেয়েছেন মানবতার পথ, মানুষের উত্তীর্ণ হওয়ার পথ। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদের উত্থানের কালে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। হতাশার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আলোর দিকে এগিয়ে চলার যে শক্তি তার মাঝে ছিল তা আজকের এই ক্রান্তিকালে বড় বেশি প্রয়োজন। ‘গীতি শ্রদ্ধার্ঘ্য’ শীর্ষক স্মরণানুষ্ঠানে ছয় শিল্পীর সমবেত পরিবেশনার সঙ্গে ছিল একক কণ্ঠের গান। অনুষ্ঠানের অন্য শিল্পীরা হলেন বুলবুল ইসলাম, পার্থ তানভীর নভেদ, ইলোরা আহমেদ শুক্লা, তানিয়া মান্নান ও লাইসা আহমেদ লিসা। বুলবুল ইসলাম গেয়ে শোনান ‘আমার খেলা যখন ছিল’, ‘কাহার গলায় পরাবি’ ও ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’; পার্থ তানভীর নভেদ শোনান ‘নিভৃত প্রাণের দেবতা’, ‘নিশীথে কী কয়ে গেল মনে’ ও ‘এমনি করেই যায় যদি দিন’, ইলোরা আহমেদ শুক্লা গেয়ে শোনান ‘হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল’, ‘ভালবেসে সখী নিভৃত যতনে’ ও ‘দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়’; তানিয়া মান্নান গেয়ে শোনান ‘তুমি যে চেয়ে আছ’, ‘কে বলেছে তোমায় বঁধু’ ও ‘খেলার সাথী বিদায় দ্বার খোলো’; লাইসা আহমেদ লিসা ‘প্রভু আমার প্রিয় আমার’, ‘বড়ো বেদনার মতো বেজেছে’, ও ‘আমার নাইবা হলো পারে যাওয়া’। এছাড়াও সমবেত কণ্ঠে শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘গানগুলি মোর শৈবালেই দল’, ‘মোরা সত্যের পরে মন’ ও ‘এ শুধু অলস মায়া। শিল্পীদের সঙ্গে এস্রাজ বাজিয়েছেন অসিত বিশ^াস, তবলা এনামুল হক ওমর ও সুবীর ঘোষ এবং মন্দিরায় ছিলেন প্রদীপ রায়। শিল্পকলায় জাতীয় পিঠা উৎসব শুরু ॥ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আঙিনায় শুরু হলো জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪২২। একাডেমির কফি হাউসের সামনের উন্মুক্ত স্থানে আট দিনব্যাপী এ উৎসবের সূচনা হয় শুক্রবার। বিকেল থেকেই ঢোলের তাল আর বাঁশির সুর ভেসে বেড়ায় উৎসব আঙিনা। শহুরে জীবনে আবহমান বাংলার শিকড় তুলে ধরা এ উৎসবের আয়োজক জাতীয় পিঠা উৎসব উদ্্যাপন পরিষদ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ই-বুক প্রকাশনা ॥ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ই-বই প্রকল্পের মাধ্যমে সারা বিশ্বের বাংলাভাষী পাঠকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায় বাংলা বই। এই ই-বই ব্যবহার করে যে কোন পাঠক চিরায়ত ও সমকালীন বাংলা সাহিত্য খুব সহজেই পাঠ করতে পারবেন। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী মিলনায়তনে শুক্রবার ছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ই-বইয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি ॥ রেইনবো ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত নয় দিনব্যাপী ১৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব শেষ হলো শুক্রবার। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সমাপনী বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। শীতের ভোরে রমনা পার্কে রসের মেলা ॥ শুক্রবার শীতের ভোরে রাজধানীর রমনা উদ্যানের (পার্কে) শুরু হলো ‘রসের মেলা’ শীর্ষক বিশেষ আয়োজন। ভিন্নধর্মী এ অনুষ্ঠানের আয়োজক রঙ্গে ভরা বঙ্গ নামের সংগঠন। এই রসের মেলায় শীতের ভোরে তাজা খেজুর রস পানের চিরকালীন গ্রামীণ নির্মল আনন্দে রসের রসিকেরা জমিয়েছেন তুলেছেন রসের আড্ডা। সেই খেজুর রসের গন্ধে ভরে ওঠা উদ্যানের নিসর্গের সঙ্গে যেন গ্রামীণ আবহে মেতেছিল নাগরিক মন। রসের মেলায় গান গেয়ে শ্রোতাদের মন রাঙান কবিয়াল সাইদুর রহমান বয়াতি। গেয়ে শোনান ‘ও রসে যার মন ডুইবাছে’। এছাড়া মেলায় রসের গান গেয়েছেন বাউল আলি আহমেদ বয়াতি ও মালেক সরকার। বাদ্যযন্ত্র রসের কলস। আয়োজকরা জানান, প্রতিবছর একবার রসমেলার আয়োজন করা হলেও এবার হবে দু’বার। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি ডেমরায় শুধুমাত্র মিডিয়ার বন্ধুদের জন্য আয়োজিত হবে ‘বন্ধু আড্ডায় খেজুরের রস’। ফরিদপুরে জাতীয় নজরুল সম্মেলন উদ্বোধন ॥ নজরুল যে চেতনায় বিদ্রোহী কবিতা রচনা করেছিলেন তার পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের মূল সেøাগান ‘জয় বাংলা’ নজরুলের অবদান। নজরুলের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণ করাই আমাদের লক্ষ্য। ফরিদপুরে তিন দিনব্যাপী জাতীয় নজরুল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জনকণ্ঠের ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার বিকেল চারটায় শহরের অম্বিকা ময়দানে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসে সভাপতিত্ব করেন নজরুল ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইমেরিটাস রফিকুল ইসলাম। খন্দকার মোশাররফ বলেন, বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় যুগস্রষ্টা কবি নজরুল। তিনিই একমাত্র কবি যিনি বাঙালী চেতনাকে পরিপূর্ণভাবে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতির প্রধান রূপকার নজরুল। তিনি আজীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। মন্ত্রী বলেন, আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক এই কবির লেখায় হিন্দু-মুসলমানের পারস্পরিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। সে চেতনা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বলেন, যে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সে স্বপ্ন পূরণ করতে, সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আমাদের নজরুলের চেতনাকে ধারণ ও লালন করে এগিয়ে যেতে হবে। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কবির নাতনি ও নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খিলখিল কাজী, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর। মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে জাতীয় নজরুল সম্মেলন উপলক্ষে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি মুজিব সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে অম্বিকা ময়দানে এসে শেষ হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ঢাকা ও ফরিদপুরের শিল্পীবৃন্দ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালাউদ্দিন আহমেদ, ইয়াকুল আলী খান এবং নজরুল ইনস্টিটিউট ও ফরিদপুরের শিল্পীবৃন্দ। একক আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ।
×