ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি

সরকারী কলেজের শিক্ষকরা আবারও এক মাসের আল্টিমেটাম দিলেন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

সরকারী কলেজের শিক্ষকরা আবারও এক মাসের আল্টিমেটাম দিলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পে স্কেলে মর্যাদাহানি ও বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে এবার বৃহত্তর কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন সারাদেশের সরকারী কলেজের শিক্ষক-কর্মকর্তারা। নয় মাস ধরে দাবি জানিয়েও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় শুক্রবার রাজধানীতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির জরুরী সাধারণ সভা থেকে দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে এক মাসের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের ৩১০ সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করা হবে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যভুক্ত এ শিক্ষকরা বলেছেন, এটা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নয়। এটা শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায়ে আগামী ২৬ থেকে ২৮ জানুয়ারি সারাদেশে ৩১০ সরকারী কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি ক্লাস বর্জন, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষকরা। এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতি। শুক্রবার সকালে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বসে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভা। সভা হলেও সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সভা পরিণত হয় সমাবেশে। কয়েক হাজার শিক্ষক এতে অংশ নেন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন বেগমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মহাসচিব মোঃ আই কে সলিমুল্লাহ খন্দকার, শিক্ষক নেতা সাহেদুল খবীর চৌধুরী, মাসুদা বেগম, ফজলে রাব্বী প্রমুখ, আবদুল হান্নান খন্দকার, কালাচাঁদ শীল, শফিকুল ইসলাম, ফারুক এ আজম, শাহ আলমগীর, নেছাওয়ার মিয়া, আবুয়াল কায়ছার, মো. আসাদুজ্জামান, মোঃ ইদ্রিস আলী প্রমুখ। সূচনা বক্তব্যে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, চলমান আন্দোলন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও এর গতিপ্রকৃতি বর্ণনা করা হয়। তারা অভিযোগ করেন, বেতন বৈষম্য নিরসনে গঠিত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা হয়নি। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহালেরও কোন পদক্ষেপ নেই। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, সরকারের অনুমোদিত ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটি ও ১৯৮৭ সালের সমীক্ষা কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পদ সৃষ্টি না করায় অনার্স-মাস্টার্সে পাঠদানকারী সরকারী কলেজসমূহ ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, পাশাপাশি শিক্ষকদের পদোন্নতির সঙ্কটও তীব্র আকার ধারণ করেছে। সুপার নিউমারারি পদ সৃষ্টি করে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি, সকল যোগ্যতা পূরণ সাপেক্ষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তনের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অষ্টম বেতন কাঠামোতে সরকারী কলেজের শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে মন্তব্য করে শিক্ষকরা বেতন বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের সাড়ে ১৫ হাজার সদস্যের মর্যাদা ও বেতন সমুন্নত রাখার দাবি জানান। শিক্ষক নেতারা আরও বলেছেন, সারাদেশে পে স্কেল নিয়ে ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যেই বৈষম্য নিরসন কমিটি করা হলো। সকলে আশা করেছিলেন অবশ্যই শিক্ষকদের বৈষম্যের অবসান হবে। কিন্তু তার কোন প্রতিফলন দেখা গেল না। এতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে বলেও হতাশা প্রকাশ করেন শিক্ষকরা। শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। এর আগে ২২ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বেতনবৈষম্য নিরসন, টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালের জন্য সরকারকে চূড়ান্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সংগঠনটির নেতারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ৪ ও ৫ জানুয়ারি পূর্ণদিবস কর্মবিরতিরও ঘোষণা দেয়া হয়েছিল সংবাদ সম্মেলন থেকে। সেই ঘোষণা অনুযয়ী দুদিন কর্মবিরতি পালন করেন সকল সরকারী কলেজ, সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ১৫ হাজার ২৮৯ জন বিসিএস শিক্ষক ও কর্মকর্তা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষাসমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলছিলেন, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী এ সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
×