ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যর্থ-অচল ফুটবলারদের নিয়ে টানাটানি হাস্যকর!

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

ব্যর্থ-অচল ফুটবলারদের নিয়ে টানাটানি হাস্যকর!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের ফুটবল ফেডারেশন ভবনে জাতীয় দলের ফুটবলারদের নিয়ে যে টানা-হ্যাঁচড়া বা কাড়াকাড়ি হয়েছে, তা যেমন ছিল ন্যক্কারজনক, তেমনি জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নেরও। দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপখ্যাত সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দল এবার লজ্জাজনকভাবে বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। দলের ফুটবলারদের পারফরমেন্স নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। কিন্তু তার পরও দলটিকে প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়। সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের মাত্র ক‘দিন পরেই শুরু হয় আরেকটি ফুটবল আসর- ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ।’ অনেক আশা করা হয়েছিল ঘরের মাঠে এই দলটি শিরোপা জিতবে। কিন্তু সে আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। জাতিকে লজ্জা দিয়েছে মানুলরা নিজেদের মাঠেও। সাফ সুজুকি কাপ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাজে গোটা দলের নৈপূণ্য তামাশার খোরাক যোগায় দেশের ফুটবলপ্রেমীদের। তারপরও এদের নিয়ে টানাটানি, হাস্যকর বটে। ভাগ্যের জোরে সেমিতে উঠে বাজে খেলে হার ও বিদায়। পরপর দুটি টুর্নামেন্টে যে খেলোয়াড়রা জঘন্য পারফরম্যান্স প্রদর্শন করলেন (একমাত্র ব্যতিক্রম জামাল ভুঁইয়া), তাদের ক্লাব দলে ভেড়াতে দেশের তিনটি ক্লাব (শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেড, ঢাকা আবাহনী লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড) যেন ‘পাগল’ হয়ে গিয়েছিল। মামুনুল ইসলামের কথাই ধরা যাক। যে মামুনুল একসময় কর্নার থেকেই গোল করতে পারতেন, এবার সাফ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে তাকে দেখা গেছে কর্নার থেকে একটি শটও তুলতে পারছেন না, সঠিক জায়গায় বল যাচ্ছে না। ডিফেন্ডার রায়হান খেলার চেয়ে চুলের স্টাইল নিয়ে ছিলেন বেশি ব্যস্ত। একই অবস্থা সোহেল রানারও। ফরোয়ার্ড সাখাওয়াত রনি দুটি ম্যাচে চার গোল করলেও এর চেয়ে দশগুণ বেশি গোলের সুযোগ নষ্ট করেছেন যা অমার্জনীয়ভাবে। অনেকেই বলেছেন বাংলাদেশ দলে এখন কোন স্বীকৃত স্ট্রাইকার নেই! তাদের খেলা দেখে দেশবাসী যেখানে হতাশায় বিমূঢ়, তখন কিনা তিনটি দেশীয় ক্লাব তাদের বিবেচনা করলেন ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ হিসেবে! যা ছিল হাস্যকর, বিস্ময়কর, লজ্জাকর! ফুটবলবোদ্ধাদের অভিমত, জাতীয় দলের এসব ফুটবলার আর চলে না। তাদের দিয়ে ভাল আর কিছু হবে না। বাফুফের উচিত ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টিপাত করা। তরুণ-নবীন ফুটবলারদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে আগামী দিনের জন্য গড়ে তোলা, যাতে তারা সফল হতে পারে। জাতীয় দল গঠনে এ বিষয়টা এখন সময়ের দাবি। তবে এটাও ঠিক, জাতীয় দল আর ক্লাব দল এক নয়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের সিংহভাগ ফুটবলারই খেলেন শেখ জামাল ধানম-িতে। নতুন মৌসুমে তাদের ক্লাবে খেলার ব্যাপারে মৌখিকভাবে কথা দিয়ে মামুনুলসহ ১১ ফুটবলার সে কথার বরখেলাপ করেছেন এবং অন্য তিনটি ক্লাবের হয়ে খেলতে তাদের র্তাবুতে ভিড়েছেন। সচেতন ফুটবলপ্রেমীরা এর নিন্দা করেছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, শেখ জামালের উচিত নবীন-দক্ষ খেলোয়াড় খুঁজে বের করে দলভুক্ত করা এবং ভালমানের বিদেশী ফুটবলার আনা। তাহলে নিশ্চয়ই আসন্ন মৌসুমে তারা খুব একটা মন্দ করবে না। শেখ জামাল ধানমন্ডির জন্য এটা সাপেবর হয়েছে। তাদের উচিত ল্যথারজিক রোগে আক্রান্ত এবস ফুটবলারদের কথা ভুলে গিয়ে তারুণ্য সমৃদ্ধ একটি দল গঠন করা। তাদের সঙ্গে ভাল মানের বিদেশি ফুটবলার যোগ করে জাতীয় করলে মানুনুলদের চেয়ে বেটার হবে। পাশাপাশি ভাল মানের বিদেশি কোচিং স্টাফ। ওয়াকিফহাল মহলের অভিমত, এটা শেখ জামালের জন্য ভাল হয়েছে, আপৎ দূর হয়েছে। এ নিয়ে হতাশ না হয়ে নজর দেয়া উচিত তরুণদের দিকে। ‘পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গেছে, তাতে করে আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ-সিদ্ধান্ত কি হবে, সেটা এখনও ঠিক করা হয়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি। দেখি কি হয়।’ জনকণ্ঠকে এমনটাই জানালেন শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব লিমিটেডের ম্যানেজার আনোয়ারুল করিম হেলাল। গভীর ষড়যন্ত্র চলছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব শেখ জামালের বিরুদ্ধে। শেখ কামাল টুর্নামেন্টে তাদের নিমন্ত্রণ করা হয়নি, দলটি এএফসি কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এশিয়ার অন্যতম সেরা ক্লাব হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। বিভিন্ন কারণে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কয়েকটি ক্লাব গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে গত কয়েক মাস ধরে। তাদের ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কিছু কর্মকর্তা। তারই বহির্প্রকাশ ঘটেছে মঙ্গলবার বাফুফে ভবনে। জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকে নিজেদের খেলোয়াড় বুঝে নিতে গেলে শেখ জামালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করা হয়। অথচ তাদের ১১ ফুটবলারকে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ করেই এক প্রকার ছিনিয়েই নিয়ে বাফুফে ভবন ত্যাগ করেন ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের কর্মকর্তারা। রিক্তহস্তে ফেরে শেখ জামালের কর্মকর্তারা। আগামী মার্চে এএফসি কাপের মূল পর্বে খেলবে শেখ জামাল। বাংলাদেশের কোন ক্লাব এবারই প্রথম এমন কৃতিত্ব দেখাল। এ আসরে অংশ নিতে ইতোমধ্যেই জামালের হয়ে খেলতে বাংলাদেশে চলে এসেছেন। এ কারণেই জাতীয় দল থেকে নিজেদের খেলোয়াড়দের ক্লাবে ফেরত নিতে চেয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু তাদের কোন খেলোয়াড় দেয়া হয়নি নানা অজুহাতে। সব মিলিয়ে এ জন্য বাফুফের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শেখ জামাল ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ‘পরিবেশটা ছিল জঘন্য, ঘোলাটে ও বাজে। আর এটাকে এই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি মিডিয়াকে ক’দিন আগে বলেছিলেন, আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় দলের ১১ ফুটবলার শেখ জামালের ফুটবলার হিসেবে ক্যাম্পে থাকবে। এরপর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পর তাদের শেখ জামালের কাছে ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু বাফুফে এই কথার বরখেলাপ করেছে। আপনারা সবই দেখেছেন, সবই জানেন। আমাদের ১১ ফুটবলারকে যে তিনটি ক্লাবের কর্মকর্তারা কৌশল খাটিয়ে নিয়ে গেছেন, তারা বাফুফেরই কর্মকর্তা। এটা খুবই বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।’ হেলাল আরও যোগ করেন, ‘এ ঘটনায় খুবই কষ্ট পেয়েছি। একটা সেরা ক্লাবকে এভাবে কেউ ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত করতে পারে, এটা ভাবাই যায় না।’ সবশেষে হেলাল এই বলে শেষ করেন, ‘আমরা আরও তিন-চার দিন অপেক্ষা করব। দেখি কি হয়। পরে অবস্থা বুঝে আমাদের ক্লাব সিদ্ধান্ত নেবে আমরা লীগে এবার খেলব কি না।’
×