ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা হাইকোর্টের

কল্যাণপুরে বস্তি উচ্ছেদ অভিযানে বাধা, সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

কল্যাণপুরে বস্তি উচ্ছেদ অভিযানে বাধা, সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার কল্যাণপুরে নতুন বাজার পোড়া বস্তি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালাতে গিয়ে স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়েছে পুলিশ। বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে বস্তিবাসীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই অভিযানের সময় বিক্ষুব্ধ বস্তিবাসী পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জমি থেকে বস্তি উচ্ছেদে টানা পাঁচ ঘণ্টা অভিযান চালানোর পর বৃহস্পতিবারের মতো অভিযান কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানে ব্যবহৃত চারটি বুলডোজারসহ সেখানে মোতায়েন করা পুলিশ বাহিনীকে নিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদ কার্যক্রমে আদালত তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয়ার এ অভিযান বন্ধ হলো। বৃহস্পতিবার বস্তি উচ্ছেদ কার্যক্রমে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ‘যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া ছাড়া’ ওই বস্তির বাসিন্দাদের উচ্ছেদ ও হয়রানি না করতেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক আবেদনে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। আদালতে যখন এ বিষয়ে শুনানি চলছে, তখনও কল্যাণপুরের নতুন বাজার পোড়া বস্তি এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। বস্তিবাসী উচ্ছেদে বাধা দিলে সকালে ওই এলাকায় বিক্ষোভ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরে বাধা উপেক্ষা করেই দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন গণপূর্তের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এদিকে এই উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা চেয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে দেয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠির অনুলিপি নিয়ে আদালতে আসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র। উচ্ছেদ অভিযানে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা ওই আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, আবু ওবায়দুর রহমান ও অবন্তি নুরুল। হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষে শুনানি করেন একেএম আসিফুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী এ্যাটর্নি জেনারেল এআরএম হাসানুজ্জামান ও ফজলে রাব্বী। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০০৩ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কল্যাণপুরের ওই জমি থেকে বস্তি উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে আসক, একটি বেসরকারি সংস্থা এবং দুই বস্তিবাসী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। তাদের আবেদনে ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর অবকাশকালীন আদালত স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করে। পরের বছরের ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের নিয়মিত বেঞ্চেও একই আদেশ আসে। ২০০৬ সালে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবারও উচ্ছেদ চালানোর জন্য চিঠি দিলে আসক ফের আদালত যায়। ওই বছরের ২৫ জুন আদালত উচ্ছেদ কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেয়। বিভিন্ন সময়ে এই মেয়াদ বৃদ্ধির পর ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এরপরও চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ওই জমিতে উচ্ছেদ চালাতে পুলিশ চেয়ে চিঠি দেন। এই প্রেক্ষাপটে রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টে সম্পূরক আবেদন নিয়ে এলে বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞার আদেশ আসে। আদেশের পর সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত মন্ত্রণালয়, আইজিপি, হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মহানগর হাকিমকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলেছে।’ অন্যদিকে সহকারী এ্যার্টনি জেনারেল হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে আবেদন করার জন্য এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে নোট পাঠিয়েছি।’ এদিকে আগের ঘোষণা অনুয়ায়ী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ১৫ একর জমির ওপর এই বস্তি উচ্ছেদে অভিযানে যায়। উচ্ছেদ অভিযান শুরুর আগে পুলিশ ও গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বস্তিবাসীদের সরে যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা সময় দিলে বস্তির বাসিন্দাদের একটি অংশ আতঙ্কে মালপত্র সরিয়ে নিতে শুরু করলেও আরেকটি অংশ সংগঠিত হয়ে লাঠি হাতে বস্তির প্রবেশপথে বিক্ষোভ শুরু করে। বস্তিবাসী আগুন জ্বালিয়ে ব্যারিকেড তৈরির চেষ্টা করেন। পুলিশ ও বস্তিবাসীদের মুখোমুখি অবস্থানে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। বস্তির বাসিন্দারা দফায় দফায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের এক সদস্যসহ বেশ কয়েকজন বস্তিবাসী আহত হন। কল্যাণপুরে নতুন বাজার পাইকপাড়ায় ছোট-বড় ৯টি বস্তিতে ২০ হাজার লোক বাস করেন। পোড়া বস্তি নামে পরিচিত এসব বস্তি গড়ে উঠেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন হাউজিং এ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জমিতে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই জমির দখল নিয়ে মামলা চলছে। তাদের পক্ষে আদালতের স্থগিতাদেশও আছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ অন্যায়ভাবে ২০ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করতে এসেছে। অন্যদিকে গণপূর্ত বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল আলম জানিয়েছেন, এখানে ৫০ একর জায়গা রয়েছে। প্রায় ১৫ একর জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। এই জায়গা দখলমুক্ত করার জন্যই এ অভিযান। মিরপুর থানার ওসি ভূঁইয়া মাহাবুব হোসেন বলেন, এটা গণপূর্তের জায়গা। আগে থেকে নোটিস দিয়ে উচ্ছেদ চালানো হচ্ছে। আমরা সহযোগিতা করতে এসেছি।
×