ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংশোধিত আইনে ক্ষমতা পেয়েছে শুল্ক বিভাগ

অর্থপাচার- এবার শুল্ক গোয়েন্দারাই আটক ও চার্জশীট দেবে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

অর্থপাচার- এবার শুল্ক গোয়েন্দারাই আটক ও চার্জশীট দেবে

আজাদ সুলায়মান ॥ সংশোধিত মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় ছয় ধরনের অপরাধ তদন্ত, চার্জশীট প্রদান ও গ্রেফতার করার মতো ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক বিভাগ। এজন্য দেশের চৌকস ৫০ শুল্ক কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে। এ ছয় ধরনের অপরাধ হচ্ছে- চোরাচালান ও শুল্ক ফাঁকি, মেধাস্বত্ব প্রতারণা, মাদক পাচার, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, পরিবেশ আইন ভঙ্গ ও জীববৈচিত্র্য পাচার। শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের এ ছয় ধরনের অপরাধ নিয়ে কাজ করার জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের পর দেশব্যাপী চালানো হবে সাঁড়াশি অভিযান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান এম নজিবুর রহমান জানিয়েছেন, মূলত আর্থিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্যই পর্যায়ক্রমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে এ ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। জানা যায়, সংশোধিত মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১৫ এর আওতায় শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক কর্মকর্তাদের এ ছয় ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। এ আইনে কেউ অপরাধী প্রমাণিত হলে তাকে সর্বনিম্ন ৪ বছর ও সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদ-ের শাস্তি রয়েছে। এছাড়া পাচারকৃত অর্থ বাজেয়াফত করার পাশাপাশি দ্বিগুণ জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এ জন্যই ব্যবসা বাণিজ্যের অজুহাতে বিদেশে অর্থপাচারের মতো অপরাধ প্রতিরোধে সংশোধিত আইন যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান এম নজিবুর রহমান। সূত্রমতে, প্রচলিত আইনে এসব অপরাধের তদন্ত আগেও হতো। কিন্তু সংশোধিত আইনে এ ছয় ক্যাটাগরির অপরাধ নিয়ে বিশেষায়িত কাজ করা হবে। এক্ষেত্রে রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশের সিআইডিÑ এ চারটি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এর মধ্যে রাজস্ব বোর্ডের সদস্যরা প্রতিরোধ করবে ক্রসড বর্ডার ও ট্যাক্সসংক্রান্ত অপরাধ। মাদক, অস্ত্র ও হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের মতো অপরাধের দায়িত্ব পালন করবে সিআইডি। বাকি দুটো অপরাধ জগতের ওপর নজরদারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক। ইতোমধ্যে এ চারটি প্রতিষ্ঠান দুই মাস ধরে এ বিষয়ে বৈঠকের পর বৈঠক করে নিজেদের মধ্যে সমন্বিত কর্মকৌশল ঠিক করেছে। এরপরই শুল্ক গোয়েন্দা ও শুল্ক বিভাগের ৫০ চৌকস কর্মকর্তাকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। বুধবার শুল্ক গোয়েন্দার সদর দফতরে দুই দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান এম নজিবুর রহমান। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশোধিত আইনে যে সব অপরাধের কথা বলা হয়েছে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে দেশের নিরাপত্তা যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বাড়বে রাজস্বও। বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গী অর্থায়নে কিভাবে কারা জড়িত, কারা মদদদাতা, কারা গডফাদার এসব চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এটা যে শুধু বাইরে অর্থপাচার ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে সেটা নয়। যারা বিদেশ থেকে অর্থ এনে দেশে বসে বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকা-ে লিপ্ত তাদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সংশোধিত আইনে শুল্ক গোয়েন্দা সদস্যরা সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে এ ছয়টি অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের যে কোন সময় আটক, গ্রেফতার, রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত শেষে চার্জশীট প্রদান করতে পারবে। এমনকি আইনী লড়াইয়েও বাদী হিসেবে দায়িত্ব পালনের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান জনকণ্ঠকে বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচার করা বড় ধরনের অপরাধ। এ অর্থ শুধু ব্যবসা বাণিজ্যের কর্মকা-ে বিনিয়োগ করা হয় না, জঙ্গী-সন্ত্রাস ও নাশকতার কাজেও ব্যবহৃত হয়। প্রায়ই পাকিস্তান থেকে ভারতীয় মুদ্রা ঢাকায় ধরা পড়ছে। প্রচলিত আইনে পুলিশ এসব মামলা তদন্ত ও পরিচালনা করে। এখন প্রচলিত সংশোধিত আইনে মুদ্রাপাচার ছাড়াও জীববৈচিত্র্য পাচার, অস্ত্র চোরাচালান ও মাদক পাচারের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় থাকছে শুল্ক গোয়েন্দা। বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় এজন্য বিশেষ ইউনিট সাদা পোশাকে তৎপর থাকবে। এমনকি একটি নামকরা পণ্যের ব্র্যান্ড নকল করে অন্য কেউ যদি কোন পণ্য বাজারজাত করতে চায়, তাহলে মেধাস্বত্ব প্রতারণা আইনের আওতায় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
×