ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটের বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী;###;সাধারণ মানুষ কেউই রেহাই পায়নি খালেদার প্রতিহিংসা থেকে

মানুষ পুড়িয়ে মারার দায়ে সবার বিচার হবে ॥ কোন ক্ষমা নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

মানুষ পুড়িয়ে মারার দায়ে সবার বিচার হবে ॥ কোন ক্ষমা নেই

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশে উন্নয়ন হয়, দেশ এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের ঠাঁই নেই, আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ দমন করেছি। মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছি। দেশকে উন্নয়নের ধারায় ফিরিয়ে এনেছি। বিএনপি সরকারের আমল ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আমল। তিনি বলেন, এই সিলেট বিভাগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় অহরহ বোমা হামলা হতো। সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর হামলা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিমকে হত্যা করা হয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সময় বিদেশীরাও নিরাপদ ছিল না। সিলেটে শাহজালালের মাজারে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপরও হামলা হয়েছিল। এমনকি আমি সমাবেশ করতে এসেছিলাম, সেখানেও বোমা হামলা চালানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু তারা নিজেদের বোমায় নিজেরাই মরেছিল। বিএনপি-জামায়াতের আমল ছিল সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ, বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টির আমল এবং এ দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং অপকর্মই ছিল তাদের কাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এসব অপকর্ম কঠোর হাতে দমন করেছি। আওয়ামী লীগের আমল হচ্ছে উন্নয়ন ও সুশাসনের আমল। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষান্ত হয়নি। তারা নির্বাচন বানচালের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদার প্রতিহিংসা থেকে সাধারণ মানুষ কেউ রেহাই পায়নি। বাবার সামনে ছেলেকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, বাবা কিছু করতে পারেনি। মায়ের কোল খালি করে নিষ্পাপ শিশুদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তাদের আগুনে পুড়ে অনেকেই অসহায় পঙ্গুত্ব নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তারা বাস, ট্রাক, সিএনজি, রিক্সা পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়েছে। জীবন্ত মানুষের গায়ে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও আছে কিনা জানি না। এতকিছুর পরও তারা শান্ত হয়নি। ‘তাদের কোন ক্ষমা নেই’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয়েছে, সেখানেই মামলা হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে মারার দায়ে তাদের সবার বিচার হবে। তাদের প্রত্যেকের বিচার এদেশের মাটিতেই হবে। বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা চাই এদেশের মানুষের শান্তি আর তারা চায় অশান্তি। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য; আর বিএনপি জোট সরকার মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭১ সালে দেশের ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা পেয়ে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তিনি ক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আমরা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। জাতির জনকের হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছিলেন জিয়াউর রহমান। কিন্তু আমরা জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার আমরা করব। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলঙ্কমুক্ত হবে। আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে, অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন করে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিমানে লুটপাট করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান ছিল মরা লাশ। আমরা বিমানে প্রাণের সঞ্চার করেছি। শাহজালাল ও শাহপরাণের পুণ্যভূমি সিলেটের এই সমাবেশে উপস্থিত হতে পেরে আমি ভীষণ আনন্দিত। তিনি প্রথমেই সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনারা ২০০৮ সালে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করে দেশের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমি আপনাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে দেশের উন্নতি করে এবং নির্বাচনী ওয়াদা পূর্ণ করার লক্ষ্যে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যায়। যার ফলশ্রুতিতে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ইতোমধ্যে আমাদের সকল নির্বাচনী ওয়াদা সফলভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছি। বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, মানুষের জন্য পুরস্কার নিয়ে ক্ষমতায় আসে। বিএনপি-জামায়াত মানুষের জন্য, দেশের জন্য তিরস্কার বয়ে আনে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের উন্নতি হয়। তিনি বলেন, জাতির পিতা বলেছিলেন- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না; বাঙালী জাতি অদম্য জাতি। বাঙালী জাতিকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। কিন্তু আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের উন্নয়ন করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আমরা দেশের উন্নয়ন, মানুষের উন্নয়ন করেছি। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশে উন্নয়ন হয়, দেশ এগিয়ে যায়। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে সিলেটবাসীর জন্য উপহার নিয়ে এখানে এসেছি, আজ এখানে উপহার স্বরূপ যেসব উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেছি- শাবির এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইসিইটি ভবন, আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স, জৈন্তাপুর উপজেলার ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিলেট এপিবিএন ব্যারাক ও ওসমানী থানা ভবন, খাদিমপাড়া হাসপাতাল, বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ সামসুদ্দীন শিশু হাসপাতাল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি ভবন। যেসব উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেলাম, তা হলো- সিলেট আউটার স্টেডিয়াম, নারী পুলিশ ডরমেটরি ভবনের উর্ধমুখী কাজের সম্প্রসারণ, শাহপরাণ থানা ভবন, সিলেট জেলা ও বিভাগীয় এনএসআই কার্যালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কার্যালয়, তামাবিল স্থলবন্দর, সিলেট ইলেক্ট্রনিক সিটিসহ কয়েকটি রাস্তার কাজ। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভায় শেখ হাসিনা আরও বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে গড়ে তোলা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। ইতোমধ্যে ৭৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুত পেয়েছেন ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুত পৌঁছবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়েছে তাদের ক্ষমা নেই। তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। আওয়ামী লীগ হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আওয়ামী লীগ চায় দেশে উন্নয়ন। শিক্ষা ও চিকিৎসাক্ষেত্রে তার সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে আমরা কম্পিউটার শিক্ষাকে সর্বজনীন করেছি, মাধ্যমিক পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করেছি। মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই প্রদান করা হচ্ছে। ১ কোটি ২০ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসাসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে আমরা ৩০ লাখ লোককে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। এদেশের কোন মানুষ যাতে কষ্ট না পায়, বেকারত্বের অভিশাপ নিয়ে কেউ যাতে কষ্ট না পায় সে লক্ষ্যে কাজ করছি। বেসরকারীকরণকে আমরা উন্মুক্ত করেছি। সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে বিনিয়োগ হবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশে রিজার্ভ এখন ২৭ বিলিয়নের উপরে। অর্থনীতির চাকা খুব সচল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করেছি। রিফুয়েলিং স্টেশন নির্মাণ করেছি। অচিরেই তা চালু হবে। আবুল মাল আবদুল মুহিত ॥ অর্থমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা-দীক্ষায় এক সময় সিলেট দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অগ্রগামী ছিল। কিন্তু সে অবস্থান আমরা ধরে রাখতে পারিনি। তাই শিক্ষায় সিলেট পিছিয়ে পড়ে। তবে বর্তমানে তার অনেকটা উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পুনরুদ্ধার করতে হবে সিলেটের অতীত ঐতিহ্য। অর্থমন্ত্রী বলেন, এমসি কলেজ, মদন মোহন কলেজসহ মাত্র তিনটি কলেজ ছিল সিলেটে। আর এ তিনটি কলেজই আলো ছড়িয়েছে সিলেট তথা সারাদেশে। এখন আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। তাই শিক্ষায় আমরা পিছিয়ে থাকতে পারি না। গত ৭ বছরে দেশের চেহারা বদলে গেছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার দেশের উন্নয়নে আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সারাদেশে উন্নয়ন কাজ চলছে। জনকল্যাণ ও দেশের উন্নয়নই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ব্রত উল্লেখ করে মুহিত বলেন, আমাদের দেশ ছিল দরিদ্রের তালিকায়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখন আমরা মধ্যম আয়ের দেশের দ্বারপ্রান্তে। নেত্রীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহযোগিতা করলে দেশ উত্তর উত্তর এগিয়ে যাবে; তাতে কোন সন্দেহ নেই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, বিএনপি ও তার সহচর জামায়াত দেশ ও জাতির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ওরা কোন শুভকাজ সহ্য করতে পারে না। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় গিয়েছে দেশে লুটপাট ও সন্ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছে। আর সে দলটির দোসর জামায়াত এসব কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি-জামায়াত যেমন স্বৈরাচারী আচরণ করে, তেমনি জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। তারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে উস্কে দেয়। বোমা-গ্রেনেড হামলা চালায়। মানুষকে পুড়িয়ে মারে। জ্বালিয়ে দেয় যানবাহন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও গণতন্ত্রের বিকাশে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর। কোন বাধাই এ লক্ষ্যে থেকে বিচ্যুতি ঘটাতে পারবে না। বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে কারও ‘পাকিস্তান খেলা’ চলবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে সংবিধান পাস হয়েছে, তা দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে। গত উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ যাবতকাল পর্যন্ত যেসব নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলো এটি। অথচ নির্বাচনের ২১ দিন পর বিএনপি এক সভা করে বলাবলি শুরু করল নির্বাচনে অনিয়ম হয়েছে। আর বিএনপির সাথে গলা মিলিয়ে এক বিদেশী মহিলা বলতে লাগলেন, মানবাধিকারও নাকি বিঘিœত হয়েছে। শপথ নেয়ার পর বিচারক যে রায় দেবেন, তা পরে লিখলে সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন রেখে সুরঞ্জিত বলেন, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রায়ের অনেক পর তা লেখা হয়। মদনমোহন কলেজ ॥ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মদনমোহন কলেজের প্লাটিনাম জুবিলী উৎসব ২০১৫-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মদনমোহন কলেজকে সরকারীকরণের ঘোষণা দিয়ে বলেন, শিক্ষার প্রসারে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যে লক্ষ্যে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা বাস্তবায়নের সুযোগ পাওয়া যায়নি। আমরা শিক্ষাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখন শিক্ষার হার ৭১ ভাগে উন্নীত হয়েছে, যা শতভাগে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে শুধু সরকার নয় সমাজের বিত্তশালী ও শিক্ষানুরাগীদের এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষানুরাগীদের এগিয়ে আসার কারণে আমাদের দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষা বিস্তারে প্রচলিত শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারী স্কুল ও একটি সরকারী কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি বিভাগে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলারও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু সরকারী নয়, বেসরকারী উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী সিলেটীরা দেশের প্রতিটি দুর্যোগ সমস্যা মোকাবেলায় সাহায্য করে যাচ্ছেন। রেমিটেন্স পাঠিয়ে আমাদের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। আমরা প্রবাসীদের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে সম্মানিত করছি। তিনি বলেন, আমরা যখন ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসেছিলাম তখন সার্ভে করে দেখেছিলাম দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেট অঞ্চল পিছিয়ে রয়েছে। তাই শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়ে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আজ সিলেটের শিক্ষার হার এগিয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান অনেক গুণীজনের জন্ম দিয়েছে এবং শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের দানে এই প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কলেজ প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্য সুখেন্দুবিকাশ দাস কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল ফতেহ, প্রাক্তন ছাত্র আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বিজিত চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, প্লাটিনাম জুবিলী অভিভাষণ পাঠ করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর হারুন-অর-রশিদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বেলা দেড়টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মদনমোহন কলেজে এসে পৌঁছলে তাকে কলেজের গবর্নিং কমিটি, শিক্ষক, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাকে স্বাগত জানান। সেখানে তিনি কলেজের হীরকজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন। এর আগে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটের সময় সিলেটে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে ১২টা ২০ মিনিটে হযরত শাহজালাল মাজার জিয়ারতে আসেন। ১২টা ৫০ মিনিটে শাহপরাণ মাজারের উদ্দেশে রওনা হন। ১২টা ৫৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শাহপরাণ মাজার জিয়ারত শেষে বেলা সোয়া ১টায় মদনমোহন কলেজের উদ্দেশে যাত্রা করেন।
×