ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কবিতা

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

কবিতা

আততায়ী আলমগীর রেজা চৌধুরী আততায়ী তোমার বাড়ির পথ চেনে চেনে তোমার দোচালা ঘর, তুলশীতলা, ইদাঁরার স্যাঁতসেতে জল, বইয়ের সবিস্তৃত তাক, লুকানো জ্ঞানের মগজ। তুমি তাকে চেনো না। দরকার নেই। হিমযুগ থেকে বিন্যস্ত পৃথিবীর নিপুণ কারিগর ভুবনের মাঠে রেখে গেছে সহস্র অঙ্কুরিত বীজ কে আততায়য়ী! লেবাসের নিচে অন্ধ পাতক। রক্তের হোলিখেলায় স্বর্গ উৎসব। এক সময় বোমার আঘাতে কাতরায় বলে,‘ বড় ভুল ঈশ্বর! তোমার কিছুই বুঝিনি। অন্ধ- বধির হস্তারক, ক্ষমিও মোরে।’ ত্রিকালগ্নে ঘুরে সৈয়দ রফিকুল আলম গোধূলী ঘুমোতে যাবে নিবে যাবে ঢলে অস্ত্র পাটের কোলজুড়ে টানা সন্তরে মেরুনের ছোপ এক্রোলিপ ছাপ গলে প্রাত্যহিকে যায় যেমন দিনানু মরে। সৃষ্টির আদি হতে চলে ধারাপাত ত্রিকালগ্নের কু-লী ঘরে ক্ষয়ে বৈচিত্র্য গোলকে সৃজনের ছায়াস্নাত যুগ যুগ হতে চক্রিকা ঘূর্ণি সয়ে। বর্ণাঢ্য সুধা মধুরিম মোহমায়া চপলা-হরিণী –মন লাফ দিয়ে ওঠে সাগর পাহাড় নদী বসুধার ছায়া স্নিগ্ধ প্রকৃতি শোভা সুন্দরে ফুটে কোটি বছরের ভূ-চলন্তিকা ঘুরে অজর কি রবে? আর কতো যাবে দূরে... পুরোনো কাসুন্দি অজামিল বণিক “যে নাটক মঞ্চস্থ হবে না কোনোদিন, এমন অর্থহীন নাটকের মহড়া কতোদিন, কতো রাত দিতে হবে আমাদের, বলতে পারেন সাহেব?” আচমকা এমন একটা উদ্ভট প্রশ্নের ঢিল ছুড়ে মারলাম, জনৈক পথচারীর মুখের উপর। ফাল্গুনের জোছনাময়ী রাত। চলছিলেন আপন মনে তিনি আন্তর আনন্দে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে। হঠাৎ থেমে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন তিনি আমার দিকে। ‘পাগল না-কি’Ñ স্বগত উচ্চারণ রেখে পা বাড়ালেন আবার। ‘কে পাগল Ñ আপনি না আমি ?’ বলতেই ঘাড় ফিরিয়ে চকিতে দেখে নিয়ে সম্ভবত পাগলই ঠাওড়িয়ে আমাকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। ব্যাপারটা তেমন কিছু নয়। এমনিতেই একটু ভ্যাবাচেকা খাইয়ে দিয়ে লোকটার সাথে একটু নির্দোষ তামাশা করছিলাম মাত্র। কেননা, অমন হরেক রকম তামাশাই একে অন্যের সঙ্গে আমরা আজ অহরহ করে চলেছি এই বাংলাদেশে। যেমন ২০০১-এর স্মরণীয় অক্টোবরের নির্বাচনের বেহেশতী ফলাফল: অহরহ হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ দিন-দুপুরে রাজপথে পুড়িয়ে মারা জ্যান্ত মানুষ, সংখ্যালঘু বসতিতে পাশব-প্লাবন, আরো কতো ঘটনার ঘনঘটা, অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয় নির্বিকার। তাঁর বিজ্ঞ অভিমত : সব বানোয়াট, সাজানো নাটক। তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলি নাটকতো বটেই Ñ এসব নির্ভেজাল, নির্দোষ তামাশা বই কিছু নয়। অবশ্য পত্রিকান্তরে মুষ্টিমেয়র ভিন্নমত : সুস্থ মন- মানুষের ভীষণ দুর্ভিক্ষ চলছে এখন বাংলাদেশেÑ মনুষ্যত্বের ভীষণ দুর্ভিক্ষ। আমার দৃষ্টির ভেতর (উৎসর্গ: কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা) আনোয়ার কামাল আমাদেরও একটি সমুদ্র আছে, শোণিতে সমুদ্রপাত হয় আমারও সশস্ত্র শব্দবাহিনী শোভাযাত্রা করে দ্রাবিড়ার প্রতি ধেয়ে যায়। মৃন্ময়ী অগ্নিময়ী হয় আমরা জাতিতে তামাটে বলে যতদূর দৃষ্টি যায়, যতদূর বাংলাভাষী ততদূর বাংলাদেশ হয়ে যায়। শুক্লা শকুন্তলা, যিসাস মুজিব হনলুলু ও অন্যান্য কবিতা কুসুমের ফণা হয়ে এক জনমে লক্ষ জন্ম নিয়ে গালিবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। হ্যামিলনের রাজা হয়ে জলদাস বেশে জাতিসত্তার কবিতায় নিজেকে সমর্পণ করে। ভিনদেশী প্রেমের কবিতা নিয়ে অরক্ষিত সময় দিগন্তের খোসা ভেঙে ভালোবাসার বুকপকেটে প্রিয় পঙ্ক্তি জমা থাকে আমাদেরও একটি সমুদ্র আছে, শোণিতে সমুদ্রপাত হয় যতদূর দৃষ্টি যায়, যতদূর বাংলাভাষী ততদূর বাংলাদেশ হয়ে যায়। তাম্র আকাশে জেগে ওঠা চন্দনকৃষ্ণ পাল বৃষ্টি শব্দ নেই শূন্য অবয়বে ঘাসদের নিঃশ্বাসে পাথরের ঘুম সমস্ত স্পর্শ সুখ গহন অতলে জ্যোৎ¯œার বাহুমূলে কঠিন শৃঙ্খল। তুমি তো আগুন ছিলে শুষ্ক বনভূমে তাপের মুগ্ধতায় জমেছিলো আর্দ্রতার সুর পরিস্ফুট হলো কই ঘাসের সুষমা শুষে নিলে অমৃত বিষ ফেলে রেখে। সম্মোহন ছিঁড়ে গেছে বিনম্র টংকারে নীল আলো ছুঁয়ে গেছে রক্তের বিষ তীব্র বিবমিষা এসে রুদ্ধ করে দোর তোমার চোখের কোণ হিংস্রতা ছুঁয়েছে। এক ফোঁটা আলো থেকে দূরে গেলে সখা কান্তির শরীরে জমে বিষণœ বিকেল সমূহ বিস্ময় নিয়ে চোখ বুজে ভোর তাম্র আকাশে জাগে নৃশংস নায়ক। নৃশংস গান মাসুদ অর্ণব জ্বলজ্বলে অন্ধকারে জ্বলে আছে লাল; অভিনয় ব্যতীত একসাথে হাঁটে না বিশ্বাস আর অবিশ্বাস। তারপরও মানবিক পথে হাঁটা যেতে পারে পাশাপাশি। কলমের বিরুদ্ধে চাপাতি কেন গাইবে রক্তক্ষরণের নৃশংস গান? কবরস্থ হোক মানবতাহীন ধর্ম; মনের বাগানে গজিয়ে উঠুক সবুজ। পাখিদের মুক্তকণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ুক স্বপ্নের সুবাস। খাতার পেছনে লেখা ঠিকানা হামীম ফারুক ভুল ঠিকানায় কতবার যাওয়া আসা হলো, যদিও ওটা ছিল খাতার পেছনে লেখা। নদী পার করে দিয়ে মাঝি বরাবরের মতো বলত, এবার গিয়ে ঠিক খুঁজে পাবেন। বাজারের কাছে বড় দোকানটায় মাছির মতো ভীড় হরেন কাকু অকৃতদার-পথটা দেখিয়ে দিতেন। বুনো ঝোপটার কাছে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম খাতাটি: অগত্য গচ্ছিত সিন্দুক থেকে বের করে দেই- বায়া দলিল, হরিণের মাংস। ঠিকানাটি হয়তো ভুল ছিল। নাহলে কোথা থেকে এসেছিল লোকগুলো, চুইংগাম মুখে।
×