ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইসমাত আরেফিন খান

গল্প ॥ প্রবাহ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

গল্প ॥ প্রবাহ

বহু কাক্সিক্ষত রিনরিনে একটা মিষ্টি হাসির শব্দে চমকে ফিরে তাকাল সিহাব। আরে দীপাই তো! পাথরের আড়ালে ফর্সা মুখের একাংশ ঢাকা পড়লেও দীপাকে চিনতে একটুও কষ্ট হলো না সিহাবের। এই মুখটিকে কত খুঁজেছে সে। আজ এতদিন পরে দেখা হলো, সেও কিনা এই বিদেশ বিভূঁইয়ে, একেবারে অনাকাক্সিক্ষত পরিবেশে। নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না। উৎসাহের আতিশয্যে উঠতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যাচ্ছিল। কোনমতে সামলে নিল। কিন্তু কিছুটা এগোতেই সবটুকু উৎসাহ একসঙ্গে দপ করে নিভে গেল। দীপার পাশে বেশ সুন্দর দেখতে এক ভদ্রলোক। তারই গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে বলতে হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে দীপা। সেই চিরচেনা ঢংয়ে হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলা। কিছু কিছু চেনা অল্প দিনের হলেও মনে হয় যেন অনেক দিনের চেনা। নিজের অবস্থা চিন্তা করে হাসি পেল সিহাবের। যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে রাত ভোর করে দিয়েছে, যাকে খুঁজে না পেয়ে নিজেকে ব্যর্থ মনে হয়েছে, সে রয়েছে কত সামনে অথচ যোজন যোজন দূরে। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে কিন্তু ছুঁতে পারবে না। নিয়তির কী নিষ্ঠুর পরিহাস! পিছু হটতে গিয়েই চোখে পড়ে গেল দীপার। ‘আরে, সিহাব ভাই না? সিহাব ভাই..., আমি দীপা।’ অগত্যা যেতে হলো। মুখে কিছুটা কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে সামনে গেল সিহাব। ‘তুমি যে দীপা সে আমি তোমার হাসি শুনেই বুঝতে পেরেছি।’ পাশের ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে সহাস্যে বলে উঠল, ‘তোমার স্বামী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরেও পরিচয়টা করিয়ে দাও।’ ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে মনে হলো সিহাবের এই হঠাৎ আবির্ভাবে যারপরনাই বিরক্ত। নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাড়ানোর মতো হাত বাড়িয়ে দিল ‘মবিন’। আর দীপাও কিছুটা যেন বিড়ম্বিতের মতোই মৃদুস্বরে বলল, ‘সিহাব ভাই, আমার কাজিনের বন্ধু।’ কিছুক্ষণের জন্য নিভে গেলেও আবার সপ্রতিভ হয়ে উঠল দীপা। ‘কি যে ভাল লাগছে সিহাব ভাই আপনাকে দেখে। প্রায় আট-নয় মাস হলো এখানে এসেছি। এখন পর্যন্ত কোন বাঙালী বন্ধু পাইনি।’ ‘বল কী, এখানে তো প্রচুর বাঙালী।’ ‘তা জানি, কিন্তু ও একদম পছন্দ করে না।’ মবিনের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে ধরল দীপা। ‘কেন ভাই, নিজের জ্ঞাতি ভাইদের প্রতি এত বিরক্তি?’ সহাস্যে তাকাল মবিনের দিকে সিহাব। ‘ওদের কৌতূহল খুব বেশি। নিজের চাইতে অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে বেশি পছন্দ করে। আপনিও কিন্তু এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি।’ হঠাৎ করেই যেন একটা ধাক্কা খেল সিহাব। কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ভদ্রলোক যেন সচেতনভাবেই তাকে আঘাত করার চেষ্টা করছে। সিহাবের সঙ্গে এর পরে আর কোন যোগাযোগ থাকুক সে চাইছে না। এবার সিহাব সত্যি সত্যি কৌতূহলী হয়ে উঠল। অপমানকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে দীপার সঙ্গে কথায় কথায় জেনে নিল আমেরিকার একটি স্বল্প খ্যাত ইউনিভার্সিটিতে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের ওপর এক বছরের একটি ডিপ্লোমা করতে এসেছে মবিন, দীপার স্বামী। বাংলাদেশে একটি এনজিওতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সেই সুবাদেই আসা। ভদ্রলোক যথেষ্ট স্মার্ট এবং সুদর্শন। তবে দীপার তুলনায় একটু বয়স্ক মনে হয়। মনে মনে হাসল সিহাব। ভদ্রলোককে কোন দিক থেকে একটু ছোট করে হয়ত নিজে শান্তি পেতে চাইছে। দীপারা বিদায় নিয়ে চলে যেতেই সিহাব আস্তে আস্তে একেবারে লেকের ধারে এসে দাঁড়াল। সবুজ পাহাড়ের গা ছুঁয়ে নীলাভ পানি এঁকেবেঁকে কোথায় হারিয়ে গেছে না দেখতে পেলেও সিহাব হারিয়ে গেল তার ফেলে আসা অতীতে। বন্ধু পাভেলের বোনের বিয়েতে তাদের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছে সিহাব আর তার আরেক বন্ধু জাফর। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র তারা। চোখে অনেক রঙ্গিন স্বপ্ন। বলতে গেলে কল্পনার জগতের বাসিন্দা। সেখানেই পরিচয় সদা চঞ্চল দীপার সঙ্গে। দীপা কলেজে সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী। তার বন্ধুর দূর সম্পর্কের কাজিন। থাকে খুলনায় এক মফস্বল শহরে। বাবা সেখানে ছোটখাটো ব্যবসা করেন। খুব ইচ্ছা হয়েছিল আত্মীয়স্বজনদের দেখার। বিয়েতে অনেকেই আসবে। তাই দীপার বাবাও এসেছেন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে সবাইকে দেখাবেন বলে। খুব যে আহামরি সুন্দরী দীপা তা কিন্তু নয়, তবে ওর মধ্যে এমন কিছু একটা আছে যা যে কাউকে আকর্ষণ করতে পারে। অসম্ভব মায়াবী এক জোড়া চোখ। সবচেয়ে বেশি যেটা সিহাবকে টেনেছিল তা হলো দীপার হাসি। ওর হাসার জন্য কোন কারণ দরকার হয় না। সামান্য হাসির কথাতেই হেসে গড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে মুরব্বিদের অনেক বকাও খেতে হয়েছে মাঝে মাঝে। সন্ধ্যার ঠিক সঙ্গে সঙ্গেই ওরা গিয়ে পৌঁছল পাভেলের গ্রামের বাড়িতে। চারদিক পুরোপুরি অন্ধকার হওয়ার আগেই পাভেলের মা তাড়া দিলেন হাত-মুখ ধুয়ে নেয়ার জন্য। অনভ্যস্ততা এবং চারদিকে আবছা অন্ধকার থাকাতে সিহাব ঠিক সামলাতে পারল না। বাঁধানো ঘাটের দু-তিন সিঁড়ি পেরোতেই পা পিছলে পড়ে গেল। তড়িঘড়ি উঠতে গিয়ে ব্যথায় কুঁকড়ে গেল। আর তখনই শুনতে পেল খিল খিল হাসির শব্দ। সতেরো-আঠারো বছরের এক তরুণী মুখে ওড়না চাপা দিয়ে হেসেই চলেছে। হাসির দমকে তার শরীর ফুলে ফুলে উঠছে। মেয়েটা এগিয়ে আসছে তাকে সাহায্য করার জন্য। কিন্তু হাসি থামাতে পারছে না। পাভেল অপেক্ষা করছে জাফরের জন্য। জাফরের আবার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে একটু বেশিই সময় লাগে। সিহাব অনেকটা বিরক্ত হয়েই একা চলে এসেছে। তাছাড়া পথচলার ক্লান্তিও ছিল। ‘নিন আমার হাতটা ধরুন।’ অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল মেয়েটি। সিহাব হয়ত একাই উঠতে পারত। কিন্তু দীপার হাত ধরার লোভ সামলাতে পারল না। একেবারে লক্ষ্মী ছেলের মতো হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। হাত ধরতে গিয়ে সিহাব সামান্য কেঁপে উঠলেও দীপার সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে তার হাসি থামাতেই ব্যস্ত। জাফর আর পাভেলকে দেখে দীপা সরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে জাফর পেয়ে বসল সিহাবকে। ‘শালা, মেয়ে দেখলেই চিৎপটাং।’ ‘আরে, আমি কি মেয়েটাকে দেখে পড়েছি, নাকি পড়ার পর দেখেছি?’ ‘ওই একই হলো, এমন ভাগ্য আমার হয় না।’ ‘কোমরের ব্যথায় মরছি আর তুমি কিনা বলছ ভাগ্য।’ ‘অমন হাত ধরে ওঠালে আমি তো সারা শরীরের ব্যথাও টের পাব না। তোর তো শুধু কোমরে।’ পাভেলের দিকে তাকিয়েÑ ‘মেয়েটা কে রে দোস্ত?’ ‘আমি নিজেই তো চিনি না।’ ‘বোঝ তাহলে’ সিহাব কিছু বলে স্বাভাবিক হতে চাইল। খুব সামান্য সময় হলেও সিহাব যেন মোহাবিষ্টের মতোই ছিল। দীপার অনেক গুণ ছিল। আলপনা আঁকা, স্টেজ সাজানো, মেহেদী পরানো, এগুলোতে খুব পটু ছিল। পাভেল তার বন্ধুদের নিয়ে আলপনা আঁকছিল, দীপা লোভ সামলাতে পারল না। কাছে গিয়ে দাঁড়াল- ‘ভাইয়া, হলুদের স্টেজের সামনের আলপনাটা আমি করে দিই?’ আত্মীয়, তার ওপর সুন্দরী যুবতী মেয়ে, না করা যায় না। আবার হ্যাঁ বলতেও সাহস হচ্ছিল না। একেবারে সামনেরটা যদি ভাল না হয়। কিছুক্ষণ ইতস্তত করে বলল, ‘তুমি একপাশে করে দাও, কেমন।’ দীপা বুঝতে পারছিল পাভেলের অবস্থাটা। পাশেরটাতেই রাজি হয়ে গেল। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার পর সবাই মুগ্ধ। পরে কোমর বেঁধে পুরোপুরি নেমে গেল পাভেলের বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করতে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে হাসি, গল্প আর চায়ের আড্ডা। সিহাব নিজেকে সত্যিই হারিয়ে ফেলেছিল। দীপাকে বলা হয়ে ওঠেনি। পরীক্ষার তাড়া ছিল বলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে আসতে হয়েছিল। ঢাকায় এসেই ভাবল যে কথা মুখে বলা হয়নি চিঠি লিখে জানাবে সে কথা। কিন্তু নিয়তি বাদসাধল। পাভেল দীপাদের ঠিকানা জানে না। সিহাবের পীড়াপীড়িতে বাবার কাছে জানতে চাইল, তিনিও পুরোটা জানেন না। কোন্ শহরে থাকে ওরা সেটুকুই শুধু জানেন। পাভেলের মা বলেছিলেন যোগাড় করে দেবেন কিন্তু দেব, দিচ্ছি করে আর দেয়া হয়ে ওঠেনি। সিহাবও পাস করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাড়ি জমাল বিদেশে উচ্চশিক্ষার্থে। সুতরাং তার প্রথম প্রেমের অঙ্কুরেই সমাধি হলো। দীপাকে সিহাব নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে এসেছে। দীপারটা সে চায়নি। ভেবেছিল দীপাই হয়ত দেবে। কিন্তু দেয়নি। প্রায় তিন-চার মাস পার হয়ে গেল কোন ফোনও পেল না সিহাব। প্রায় ভুলতে বসেছিল। হঠাৎ করেই একদিন কাকডাকা ভোরে ফোন বেজে উঠল। ‘সিহাব ভাই, আমি দীপা।’ দীপার গলায় আতঙ্ক। ‘আমার খুব বিপদ। আমি এখানে একটা দোকান থেকে ফোন করেছি। আপনি কি তাড়াতাড়ি একটু আসতে পারবেন? প্লিজ।’ অসহিষ্ণু গলায় কথা বলল দীপা। ‘ঠিকানাটা বল, আমি এখনই আসছি। তুমি ভয় পেও না।’ দীপার কথা অনুযায়ী খাবারের দোকানে ঢুকে দেখি রীতিমতো কাঁপছে সে। ‘কী হয়েছে দীপা? তোমার স্বামী কোথায়?’ ‘পরে সব খুলে বলব। আপনি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন প্লিজ। মবিন দেখে ফেললে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাবে।’ ‘এটা আমেরিকা দীপা। মবিন চাইলেই তোমাকে জোর করে নিয়ে যেতে পারবে না। আমি পুলিশ ডাকব। তুমি নির্ভয়ে আমার সঙ্গে এসো।’ মনে হলো সিহাবের কথা বিশ্বাস করল দীপা। চেহারা কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকল। একেবারে লক্ষ্মী মেয়ের মতো সিহাবের পিছু পিছু গাড়িতে উঠে বসল। বাসায় এসে সিহাব আর কিছু জানতে চাইল না। জোর করে নাস্তা খাওয়াল দীপাকে। পুরনো দিনের কিছু কথাবার্তা বলে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল। কি অদ্ভুত এই বিধিলিপি! সিহাবের ভালবাসা এভাবে তার ঘরে আসবে সে কখনও চিন্তাও করতে পারেনি। সারাদিন বলতে গেলে একেবারে নির্জীবের মতো কাটাল দীপা। রাতের খাবারের পর দু’কাপ চা নিয়ে বারান্দার চেয়ারে এসে বসল দু’জন। চারদিকে সুনসান নীরবতা। ‘দীপা, কী হয়েছে বলবে? তোমার স্বামী...।’ ‘ওই লোকটা আমার স্বামী ছিল না।’ সিহাবের কথার মাঝখানে বলে উঠল দীপা। সিহাবের তো চক্ষু কপালে। ‘বলছ কী তুমি?’ ‘ঠিকই বলছি।’ মাটির দিকে চোখ রেখে আস্তে আস্তে বলতে শুরু করল দীপা। “ওই লোকটা তার মিথ্যা ভালবাসায় আমাকে ভুলিয়েছিল। প্রতিদিন রোকেয়া হলের সামনে গাড়ি নিয়ে বসে থাকত। তার প্রলোভনকে ভালবাসার গভীরতা ভেবে সাড়া দিলাম। দু’পরিবারের অসামঞ্জস্যতা নিয়ে বাংলাদেশে বিয়ে করলে ঝামেলা হবে বলে এই সুদূর আমেরিকায় নিয়ে এলো বিয়ে করে সংসার পাতবে বলে। কিন্তু বিয়ের কথা বললেই গড়িমসি করত। বলত, ‘সত্যিকারের বিয়ে তো আমাদের হয়েই গেছে। ওই লোক দেখানো সামাজিকতায় আমি বিশ্বাস করি না।’ প্রথম প্রথম আমার মনে হতো ভালবাসায় অনেক গভীরতা থাকলেই মানুষ এভাবে ভাবতে পারে।” এ পর্যন্ত বলে একটু থামল দীপা। সিহাব একেবারে নির্বাক শ্রোতা। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সরাসরি সিহাবের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বলল, ‘আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আর পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল সমাজকে অস্বীকার আমি করতে পারি না। তাছাড়া আমার বাবা-মা জানেন আমরা লুকিয়ে বিয়ে করেছি। তারা কষ্ট পেলেও মেনে নিয়েছেন এবং অপেক্ষা করছেন আমি কবে স্বামী নিয়ে দেশে ফিরব, সেজন্য মাসখানেক ধরে একটু বেশি তাড়া দিচ্ছিলাম।’ ‘হতে পারে লোকটি পয়সাওয়ালা, একটু বেশি আধুনিক। সেজন্য হয়ত বিয়ের আগে লিভ টুগেদারের কথা ভেবেছেন।’ ‘লোকটি বিবাহিত। তার দুটি বাচ্চা আছে।’ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতোই কথাগুলো কানে এলো সিহাবের। ‘লোকটি আমাকে নিয়ে এসেছিল তার এক বছরের নিঃসঙ্গ জীবনের প্রমোদসঙ্গিনী করতে। এর বেশি কিছু নয়। ক’দিন আগেই মাত্র জেনেছি ব্যাপারটা।’ কথা বলতে বলতে বার বার চোখ মুছে নিজেকে ধাতস্থ করতে হচ্ছিল দীপাকে। সে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেলে আপনাকে ঝামেলায় ফেলতাম না। নিজের ভাগ্যের সঙ্গে নিজেই যুঝতাম। কিন্তু তার স্ত্রী-পুত্ররা বায়না ধরেছে তারা অবশ্যই এয়ারপোর্টে আসবে বাবাকে নিতে। সুতরাং আমি সঙ্গে থাকলে সমস্যা। আমার দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছিল আমেরিকান এক বন্ধুর ওপর। যে দু’দিন পরে আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে আর এ দু’দিন আমাকে দেখাশোনা করবে। লোকটিকে আমি বিশ্বাস করতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল রক্ষক যদি ভক্ষক হয়। নিজেকে আর কত নিচে নামাব। আপনাকে জ্বালানো ছাড়া আর কোন পথ খুঁজে পাইনি।’ ‘আমাকে বিশ্বাস করলে যে, আমিও তো পুরুষ মানুষ?’ ‘অবশ্যই আপনি পুরুষ মানুষ। কিন্তু ওরা শুধু পুরুষ, মানুষ নয়।’
×