ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের ৭ বছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়েছে জিইডি

আর্থ-সামাজিক সূচকে শক্ত অবস্থান

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

আর্থ-সামাজিক সূচকে শক্ত অবস্থান

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দেশের অধিকাংশ অর্থনৈতিক সূচকই রয়েছে ভাল অবস্থানে। তাছাড়া সামাজিক ক্ষেত্রেও অর্জন অনেক। বর্তমান সরকারের সাত বছরের অবস্থা মূল্যায়ন করে এমনই তথ্য দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, বিগত সাত বছরে মোট দেশজ উৎপাদন, মোট দেশজ আয়, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে তা অভূতপূর্ব। সঙ্কটের জাল ছিন্ন করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের নিম্ন মধ্য আয়ের দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজ আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনে অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ছিল ৭১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সেটি হয় ১০২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৯৪ দশমিক ৯৮ (প্রাক্কলিত) বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ১ শতাংশ, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয়েছে ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ। গত সাতটি অর্থবছরের প্রতিটিতেই বাংলাদেশ ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। গত সাত বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ছিল ৬ দশমিক ৩১ শতাংশ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে ৩৩তম অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় হয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মার্কিন ডলার। এ বিষয়ে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট ছিল ২৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটি টাকার অঙ্কে এযাবতকালের সর্ববৃহৎ সরকারী বিনিয়োগ পরিকল্পনা। তাছাড়া সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষ করেছে, বর্তমানে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে। তাছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ফলে এসবের প্রভাব অর্থনীতিতে পড়েছে। রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে আয় হয় ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। সর্বশেষ গত অর্থবছরে অর্থাৎ চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত রফতানি আয় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এটি একটি অন্যতম অর্জন। রেমিট্যান্স আয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় ছিল ৪ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, সেটি ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলস্টোন অতিক্রম করেছে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বমন্দা এবং বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসের ফলে অর্থবছর ২০১১ থেকে অর্থবছর ২০১৫ সময়ের মধ্যে ৩৫ লাখ ৭৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বিদেশে যেতে পেরেছে। প্রতি ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলে আড়াই লাখ দেশীয় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়, এ হিসাবের ওপর ভিত্তি করে অর্থবছর ১১ থেকে অর্থবছর ১৫-এর মধ্যে দেশে ও বিদেশে মিলে প্রায় এক কোটির বেশি (১০ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন) কর্মসংস্থান হয়েছে। এত কর্মসংস্থান অতীতের আর কোন সময়ে হয়নি। মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আয়ত্তে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। ফলে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। গত এক বছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। তার আগের বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্টে ভিত্তিতে গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সামান্য বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণ হিসেবে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, পেট্রোলিয়ামজাতীয় পদার্থসহ সকল পণ্যের দাম কমে গেছে। এজন্য দেশেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার পাশাপাশি আমাদের দেশে টাকার মান স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
×