ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গগন তারা

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

গগন তারা

সেই কবে থেকে শোনা যাচ্ছে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই পৃথিবীর অনেক সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল তো সইতে হচ্ছেই। তথাপি রয়েছে ঝড়, তুফান, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডোর প্রকোপ, ভূমিকম্পের আক্রমণ। যুগ পরম্পরায় এসব যেন চলে আসছে পৃথিবী ধ্বংসের জন্যই। আর এখন তো বিশ্বজুড়ে চলছে মানবসৃষ্ট ধ্বংসলীলা। জঙ্গীবাদীরা যেখানে যায়, সেখানেই ধ্বংসের তা-ব চালায়। মধ্যপ্রাচ্য, আফগানিস্তান, সিরিয়া, এমনকি ইউরোপে তাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ে ধ্বংসের গর্জন হানে যেন। তদুপরি পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কখন যে বিশ্বমানবসহ পৃথিবীকে ধ্বংস করবে, কেউ জানে না। আর জঙ্গীবাদীরা যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়েছে, তাতে তাদের হাতে পড়লে পরমাণু অস্ত্রের হতে পারে বিপজ্জনক ব্যবহার। এই আশঙ্কা থেকে নিস্তার হয়ত নেই। পৃথিবীর এমন গভীরতর অসুখ টের পেয়েছিলেন প্রায় সত্তর বছর আগে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। এই অসুখ সেরে যাবে এমন আশাবাদ রয়েছে বলেই এখনও বেঁচে আছে অনেকেই বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তাকে ধারণ করে। কিন্তু বিজ্ঞানীরাই যদি জাগিয়ে তোলেন ভীতি এই ধরণীর প্রাণিকুলের মাঝে তবে প্রাণবায়ু রক্ষা করা তো অসম্ভব প্রায়। বিশ্ববাসী মাঝেমধ্যে শুনে আসছেন, পৃথিবী অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু সেই অচিরেই কোন সুনির্দিষ্ট সময় ধারণ করে না। অনেক জ্যোতিষী, ভবিষ্যত বক্তা তো দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিলেন পৃথিবী ধ্বংসের। কিন্তু না, ধ্বংস হয়নি তার প্রমাণ তো আকছার। যে যার অবস্থানে রয়ে গেছি। মার্কিন মুল্লুকের উইয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম চেকের নেতৃত্বে একদল গবেষক দিনকয়েক আগে পেশ করা এক গবেষণাপত্রে এক দানব তারার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, তীব্র গতিতে ধেয়ে আসছে দানব তারা। যদি এটি কাছাকাছি এসে পড়ে, তাহলে যে কোন মুহূর্তে বিশাল কোন মহাজাগতিক বস্তুর আচমকা ধাক্কায় টালমাটাল হয়ে যেতে পারে সৌরম-ল। নিমেষে উধাও হবে বাসযোগ্য গ্রহের বায়ুম-ল। বন্ধ হয়ে যাবে শ্বাস-প্রশ্বাস। প্রাণের অস্তিত্বহীন হবে পৃথিবী। গোটা সৌরম-লে শুরু হয়ে যাবে অসম্ভব উথাল-পাতাল। নাসা এই তথ্যকে স্বীকার করে জানিয়েছে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অসম্ভব ঝড়ো গতিতে ছুটে আসছে একটি দানবের চেহারার অনুরূপ তারা। এ গ্যালাক্সিতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। সূর্যের চেয়ে অনেক গুণ ভারি এ তারার সুপারসনিক গতি। জোরে ছুটে আসার জন্য পথে সব উড়িয়ে-গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ দুর্যোগের দিন আসছে মানুষের জন্য। এই যে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে যে হাকডাক মানুষকে ব্যতিব্যস্ত করছে, ধ্বংসের এই নাসিকা ধ্বনি অতীব পুরাতন। রাজশেখর বসু তথা পরশুরামের ‘গগনচটি’ গল্পটি এই ক্ষেত্রে এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। কক্ষ বিচ্যুত এক খ- গ্রহ হঠাৎ কাছাকাছি এসে পড়াতে পৃথিবী ধ্বংসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারও কাছে তা রাজার উড়ানো ফানুস, কারও কাছে রাহু, কারও কাছে আবার তা কেতু। সংবাদপত্রে এক প-িত লিখলেন, ‘এই আকাশচারী ভয়ঙ্কর পাদুকা কোন মহাপুরুষের। দেখিয়া মনে হয় বিদ্যাসাগরের। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের খামখেয়ালী দেখে সেই স্বর্গ হতে ধৈর্যচ্যুতি হয়েছে, তাই তার এক পাটি চটি গগনতলে নিক্ষেপ করেছেন। এই উড়ক্কু গগনচটি শীঘ্রই শিক্ষা পর্ষদের মস্তকে নিপতিত হবে।’ মার্কিন মুল্লুকের বিজ্ঞানীদের এই উদাহরণ দেয়া না গেলেও পৃথিবী ধ্বংস হোক- কেউই চায় না।
×