ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কারা সপ্তাহ ’১৬ উদ্বোধন

কারাবন্দীর হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে রূপান্তর করুন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

কারাবন্দীর হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে রূপান্তর করুন ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি কারাবন্দীর হাতকে কর্মীর হাতিয়ারে রূপান্তর করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বুধবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার প্রাঙ্গণে কারা সপ্তাহ ২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। দেশের ৬৮ কারাগারে একযোগে এ কারা সপ্তাহ উদযাপিত হচ্ছে। এর আগে মন্ত্রী সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠান স্থলে এসে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান ও কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন তাকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধান অতিথি রাষ্ট্রীয় সালাম গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করেন। পরে তিনি পায়রা উড়িয়ে কারা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর মন্ত্রী কারা কর্মকর্তাবৃন্দকে নতুন র‌্যাঙ্ক ব্যাজ পড়ান এবং সেরা জেল ও বিভাগকে ক্রেস্ট প্রদান করেন এবং কারারক্ষীদের অস্ত্রবিহীন চোখ ধাঁধানো মহড়া প্রদর্শন উপভোগ করেন। তিনি কারা সপ্তাহ উপলক্ষে কারাগার প্রাঙ্গণে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীরও উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক সময় কারাগারকে শুধু শাস্তির স্থান মনে করা হতো কিন্তু সময় পাল্টেছে কারাগারকে উন্নত বিশ্বের ন্যায় শাস্তির স্থান নয় সংশোধনাগারে পরিণত করতে হবে। সারাবিশ্বে কারাগারের ধারণা রূপান্তরিত হয়ে সংশোধনাগারে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদেরও সময় এসেছে এ বিষয়ে ভাবার। এ ছাড়া বন্দীরকে মুক্তির পর যেন পুনঃঅপরাধে জড়িত না হয় সে বিষয়ে বিশেষ কাউন্সেলিং করতে হবে। ‘এবারের অঙ্গীকার, কারাগার হোক সংশোধানাগার’- এ প্রতিপাদ্যে উদযাপিত কারা সপ্তাহ ২০১৬ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, বন্দীদের পুনর্বাসনে ইতোমধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২তে ‘পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ স্কুল স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বন্দীদের বিভিন্ন মেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কারাগারগুলোতেও এ ধরনের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ধরনের কর্মকা- সম্প্রসারিত করে সব কারাগারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে বন্দীদের হাতকে কর্মীর হাতিয়ার রূপান্তর করতে হবে। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বন্দীদের উপদেশ প্রদানের মাধ্যমে পুনঃঅপরাধকরণ রোধের ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কেন্দ্রীয় প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র উদ্বোধন এবং সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও দিনাজপুর কারাগার উদ্বোধনের ফলক উন্মোচন করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খান, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোঃ ফজলুল কবীর, সকল কারা উপ-মহাপরিদর্শকবৃন্দ, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক সাবেক এমপি আখতারুজ্জামান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাবেক এমপি কাজী মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথি বিশেষ কারা দরবারে যোগ দেন। কারা সপ্তাহ ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। কারা সপ্তাহে দেশের ৬৮ কারাগারের আটক প্রায় ৭০ হাজার বন্দীর জন্য উন্নত খাবার পরিবেশন, স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাতের বিশেষ সুবিধা, বন্দীদের মাঝে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও স্পোর্টস অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, দেশ ও জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করণার্থে জঙ্গী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে কারাগারের ভেতরে বসে অভিনব কায়দায় মোবাইল ফোন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ দ্রব্য নিয়ে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য লাগেজ স্ক্যানার, বডিস্ক্যানারসহ অত্যাধুনিক নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি সংযোজনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে কারা প্রশাসন ও এর নিরাপত্তাকে আরও সুদৃঢ় ও সমৃদ্ধশালী হবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে অপরাধীদের সহজে শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে ‘ক্রিমিনাল ডাটাবেজ তৈরি করা অপরিহার্য। এ করণে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট অধিদফতরের তথ্য প্রবাহের সঙ্গে সংযুক্ত করে কারাগারে আগত বন্দীদের ডাটাবেজ তৈরির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যুদ্ধপরাধীদের রায় বাস্তবায়নে কারা বিভাগের কার্যক্রম প্রশংসনীয়। অপরাধীদের নিরাপদে আটক রেখে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় যে গুরু দায়িত্ব পালন করছেন, তার জন্য কারা বিভাগের সকল সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গী এবং মাদক পাচারকারীদের কোন প্রলোভনেই সহায়তা করবেন না। এদের প্রতি জিরো টলারেন্স প্রদর্শন করতে হবে। তিনি বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাভ্যন্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতা স্মৃতি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি। এ জাদুঘর জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই নবনির্মিত ওই কারাগারে বন্দী স্থানান্তরের কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, কারা বিভাগের উন্নয়নের ধারার অংশ হিসেবে কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি রাজশাহী ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ফরিদপুর, খুলনা ও দিনাজপুর জেলা কারাগারকে কেন্দ্রীয় কারাগারে উন্নীত করার ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এতদিন কারা বিভাগের জেল সুপার থেকে উর্ধতন কর্মচারীদের ইউনিফর্ম ব্যবহারের বিধান ছিল না। এখন থেকে কারা বিভাগের সর্বস্তরের কর্মচারীদের ইউনিফর্ম পরিধানের বিধান করা হচ্ছে। পাশাপাশি দায়িত্ব পালনের সহায়তাদানের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত তিন হাজারের বেশি নতুন পদ সৃজন করা হয়েছে। সরকার কারাগারের ও বন্দী উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
×