ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

’৭১’র যুদ্ধশিশু ঃ অবিদিত ইতিহাস গ্রন্থের ওপর আলোচনা

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

’৭১’র যুদ্ধশিশু ঃ অবিদিত ইতিহাস গ্রন্থের ওপর আলোচনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গ্রন্থটির নাম ‘৭১’র যুদ্ধশিশু :অবিদিত ইতিহাস’। লিখেছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক মুস্তফা চৌধুরী। ১৯৭১ সালে অধিকৃত বাংলাদেশে যে অসহায় নারীরা পাক সেনা কর্তৃক সম্ভ্রম হারান এবং এর ফলশ্রুতিতে যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করে মূলত তাদের কেন্দ্র করে গ্রন্থটি লেখা হয়েছে। গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশেষ আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরের আয়োজন করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী ও মানববিদ্যা বিভাগ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বইটি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন গ্রন্থটির লেখক মুস্তফা চৌধুরী। উপস্থিত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও সাংবাদিকদের বইটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন লেখক নিজেই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী প্রমুখ। এতে সভাপ্রধান ছিলেন অধ্যাপক ফিরদাউস আজিম। ‘৭১’র যুদ্ধশিশু : অবিদিত ইতিহাস’ গ্রন্থটি সম্পর্কে লেখক মুস্তফা চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের পাতায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে। বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল অধিকৃত বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত জবরদখল করে থাকা পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যে অগণিত নারীদের ধর্ষণ করে, যার ফলে যুদ্ধশিশুর জন্ম হয়। সে সময় ১৩ বছর বয়সী পর্যন্ত নারীরাও মা হয়েছিল। বর্বর পাকিস্তানীদের ধর্ষণের ফলে নাম পরিচয়হীন যুদ্ধশিশু ভূমিষ্ট হয়। এরমধ্যে কিছু যুদ্ধশিশু কানাডার নানা প্রান্তে লালিত-পালিত হয়েছে। সে বিষয়কে অনুসন্ধানের ফলাফল ভিত্তিক এ গ্রন্থ। কানাডায় আমি যেখানে বসবাস করি, এছাড়া অন্যান্য জায়গায় ঘুরে পোষ্য যুদ্ধশিশুদের দলিল সরাসরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করা ছাড়া ব্যাপকভাবে সেগুলো অনুসন্ধানও করেছি। এগুলোর তাৎপর্য খুঁজেছি, বহু মানুষের মূল্যবান উপদেশ, সহায়তা অনুগ্রহ লাভের ফলে বইটি প্রকাশ করতে পেরেছি। বক্তব্য শেষে লেখক উপস্থিত শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকদের বইটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। চারশত আটানব্বই পৃষ্ঠার এ বইটি প্রকাশ করেছে একাডেমিক প্রেস এন্ড পাবলিসার্স লাইব্রেরি। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৮শ’ টাকা। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে অধিকৃত বাংলাদেশে যে অসহায় নারীরা সম্ভ্রম হারান এবং এর ফলে যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করে, একই সঙ্গে যে সকল অসাধারণ হৃদয়বান কানাডীয় বাবা-মা যারা বাংলাদেশের যুদ্ধ শিশুদের কয়েকজনকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তাদের প্রতি। লেখক, গবেষক মুস্তফা চৌধুরী ইংরেজী সাহিত্য, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান এবং কানাডীয় ইতিহাস বিষয়ে যথাক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও বিশ্বদ্যিালয় এবং চার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার্জন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব স্মরণ ॥ ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজধানীর রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ দলিলে সই করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এএকে নিয়াজী। সেই স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই জন্ম হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। ঐতিহাসিক সেই আত্মসমর্পণের দলিলের খসড়া লিখেছিলেন তখনকার ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় চীফ অব স্টাফ লে. জেনারেল (অব.) জে.এফ.আর জ্যাকব। শুধু দলিলের খসড়া রচনাই নয়, নিয়াজীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার কৃতিত্বও তার। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে (এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঢাকাবাসীর সামনে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি নিয়মিত বাহিনীকে প্রকাশ্য আত্মসমর্পণ করতেই শুধু বাধ্য করেননি, তাদের গার্ড অব অনার দিতেও বাধ্য করেছিলেন বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু লে. জেনারেল জে.এফ.আর জ্যাকব। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সেনানায়ক এবং বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু গত ১৩ জানুয়ারি পৃথীবীর মায়া ত্যাগ করেছেন। বাংলাদেশের এই পরম বন্ধু ‘জে.এফ.আর জ্যাকবকে স্মরণ করল ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’। বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে স্মরণ করা হয় মুক্তিযুদ্ধে যৌথবাহিনীর অগ্রগণ্য এই সেনানায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেলকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই স্মরণানুষ্ঠানে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের সামরিক এ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জে নন্দা, মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) এস আই এম নূরুন্নবী খান বীরবিক্রম ও মেজর (অব.) এ এস এম শামসুল আরেফীন। শিল্পী ইরাবতী ম-লের কণ্ঠে ‘দাঁড়াও মন অনন্ত ব্রহ্মা- মাঝে’ ও ‘লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা’ স্মরণ-সঙ্গীত দুটি পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আয়োজন। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। শামছুল আরেফিন বলেন, আমরা আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুকে হারিয়েছি যার সহযোগিতা না থাকলে অনেক কিছু অপূর্র্ণ থেকে যেত। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আপন করে নিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম দেখা হয়। তিনি নানা বিষয়ে ব্রিফিং দিয়েছিলেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তাকে নিয়ে অনেক কিছু জেনেছি। তিনি বাংলাদেশকে ভালবাসতেন যার সূত্র ছিল ১৯৭১। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তিনি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের একজন হয়েই বেঁচে থাকবেন। এস আই এম নূরুন্নবী খান বীরবিক্রম বলেন, বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে মিশে আছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকবের নাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরেই আমাদের বিজয় হয়ত আসত না যদি জ্যাকব তার কৌশল ব্যবহার না করে পাকিস্তানী বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য না করাতেন। তিনি বলেন, মিত্রবাহিনীকে ঢাকামুখী করার নানা কৌশল এই জ্যাকবই করেছিলেন। চীফ অব স্টাফ হিসেবে অপারেশনের বিষয়গুলো তিনিই দেখতেন। তবে যারা পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ নিয়ে এখনও নানা কথা বলে তাদের জন্য বলা দরকার জেনারেল জ্যাকব কিন্তু তার অপারেশনগুলোতে মুক্তিবাহিনীকেই সামনে রেখেছিলেন আর ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছিল তাদের সহযোগী। মুক্তিবাহিনীকে তিনি শ্রদ্ধা করতেন। ব্রিগেডিয়ার জে নন্দা বলেন, সৈনিক কখনও মরে না আর যারা লিজেন্ড তারা কখনও হারিয়ে যায় না চিরকাল বেঁচে থাকে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জ্যাকব তেমনই একজন লিজেন্ড। মুক্তিযুদ্ধে সময় তিনি নানা রকম পরিকল্পনা করেছিলেন এবং যুদ্ধে নতুন ধারণা নিয়ে এসেছিলেন।
×