ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংসদের নবম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির উদ্বোধনী ভাষণ;###;দেশ এক স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় অতিক্রম করছে

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান

সংসদ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ স্বাধীনতা সমুন্নত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় এবং শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালী জাতিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, একাত্তরে শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। আসুন ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে আমরা ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। বুধবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশনে (শীতকালীন) উদ্বোধনী দিনে প্রদত্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা একটি স্বর্ণোজ্জ্বল অধ্যায় অতিক্রম করছি। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রতিকূলতার মধ্যে সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। আমার বিশ্বাস সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে শান্তিশৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত হবে এবং ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে- এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী- রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এবং জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এসব লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল করতে বর্তমান সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিগত মেয়াদে গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনীদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে একাত্তর সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। সম্প্রতি বিচারিক আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা মামলা এবং খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সরকার ও বিরোধী দলকে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতীয় সংসদ দেশের সকল উন্নয়ন কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান সরকার রাজনীতি থেকে হিংসা, হানাহানি ও সংঘাতের অবসানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও আলোকিত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতীর অগ্রযাত্রার স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে সরকারী দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদে যথাযথ ও কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য সরকারী ও বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশন হওয়ায় সাংবিধানিক রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যে ও দেশের অগ্রগতির বিষয়গুলো তার ভাষণে তুলে ধরেন। ভাষণের সময় মুহুর্মুহু টেবিল চাপড়িয়ে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান সরকারী ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। রাষ্ট্রপতি তার মূল ভাষণের সংক্ষিপ্তসার ৪০ মিনিটের বক্তব্যে তুলে ধরেন এবং বাকি ভাষণ পঠিতভাবে গণ্য করার অনুরোধ জানালে স্পীকার তার পুরো ভাষণটি পঠিত গণ্য করা হবে বলে উল্লেখ করেন। বিকেল সাড়ে চারটায় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দশম জাতীয় সংসদের নবম অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই স্পীকার স্বাগত বক্তব্যে দেশবাসীকে ইংরেজী নববর্ষের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করেন। শোকপ্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপরই বিউগলে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আগমনী বার্তা বাজানো হয়। বিকেল পৌনে ৫টায় নীল স্যুট-কোট পরিহিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে তাকে সম্মান জানান। এরপর অর্কেস্ট্রায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরে রাষ্ট্রপতি নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে সাড়ে পাঁচটায় অধিবেশন ত্যাগের সময়ও জাতীয় সঙ্গীতের সুরে তাকে বিদায় জানানো হয়। নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে বুধবার সরকারী ও বিরোধী দলের আসন ছিল পরিপূর্ণ। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনের চতুর্দিকে নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। রাষ্ট্রপতির ভাষণের সময় ভিভিআইপি গ্যালারিতে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সিনিয়র সচিব, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিকবৃন্দসহ বিশিষ্টজনরা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রস্থানের পর স্পীকার সংসদ অধিবেশন আগামী রবিবার পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করেন। বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদে গত দুই বছরের উন্নয়ন ও সাফল্যগুলো দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, সংবিধান সমুন্নত এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রেখে ২০১৪ সালে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং বর্তমান সরকরের ওপর দেশ পরিচালনার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০২১, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের জ্ঞানভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধশালী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ নিম্ন-আয়ের বৃত্ত ভেঙ্গে ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়েছে ২০৪১ সালের দিকে, বিশ্বসভায় একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়ার মানসে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাক্সক্ষা পূরণে সক্ষম হবে। দেশ জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে ॥ রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেন, বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলোÑ ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক এবং জ্ঞাননির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এ সকল লক্ষ্য অর্জনে সরকার ২০১০-২১ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০১১-১৫ মেয়াদী ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কার্যক্রম এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলে অন্তর্ভুক্ত নতুন বিষয়সমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬-২০ মেয়াদী সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ অর্জন প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার কর্তৃক এসকল কার্যক্রম গ্রহণের ফলে জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে এবং বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে সরকার নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে। আন্দোলনের নামে সহিংসতা ও নাশকতার কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী কতিপয় রাজনৈতিক দল সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অবরোধ ও হরতালের নামে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ গাড়ি পোড়ানো, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নাশকতামূলক কর্মকা-ে লিপ্ত হয়। সরকার কর্তৃক যথাযথ ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে এসকল নাশকতা বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক সূচকসমূহের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশসমূহের চেয়েও অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছে। চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ চালাচ্ছে সরকার ॥ রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার শুরু থেকেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকার গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন ও আর্থ-সামাজিক সমৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সুশাসন সুসংহত করার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস সরকার সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। তিনি বলেন, শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও বৈরিতার মধ্যেও দেশে সুশাসন সুসংহতকরণ এবং গণতান্ত্রিক চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চলমান সঙ্কট এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদ্ভূত নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও যথোপযুক্ত রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় রয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও রয়েছে সুস্থিত। গত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ দশমিক তিন শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে মার্কিন ডলারে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের প্রবৃদ্ধি হয় গড়ে ৯ দশমিক তিন শতাংশ হারে। সার্বিকভাবে অনুকূল সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং আর্থ-সামাজিক খাতে লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি বাংলাদেশকে নিম্নমধ্য-আয়ের দেশে উত্তরণের পথে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণেই স্থল সীমান্ত চুক্তি ॥ ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তির কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের সমাধানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকা-ের পর এ বিষয়ে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সর্বাত্মক প্রচেষ্টার ফলে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমানা চুক্তিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১১ সালে একটি প্রটোকল প্রণয়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালের স্থল সীমানা চুক্তি এবং ২০১১ সালের প্রটোকলটি কার্যকর করার লক্ষ্যে ভারতের লোকসভায় ২০১৫ সালের ৭ মে এবং রাজ্যসভায় ওই বছরের ১১ মে ভারতের ১০০তম সংবিধান সংশোধনী বিল সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। পরবর্তীতে গত বছরের ৬-৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে স্থল সীমানা চুক্তি-১৯৭৪ ও ২০১১-এর প্রটোকলটি কার্যকর করা হয়। রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের ফলে দীর্ঘদিনের বিরাজমান সীমানা সংক্রান্ত অনিষ্পন্ন বিষয়াদির স্থায়ী সমাধানসহ ছিটমহলবাসীর মানবিক সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা, বলিষ্ঠ ও গতিশীল নেতৃত্বে এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার গ্রহণযোগ্যতা ও সুখ্যাতির ফলেই এ ঐতিহাসিক সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান। একই সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী দুটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাসম্পন্ন এ সম্মাননা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের দেশ ॥ রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। দেশের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিসহকারে নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করতে পারে- সে বিষয়ে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রীস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবসমূহ নির্বিঘেœ যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে ও উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হচ্ছে। ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে সকল সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। দুর্নীতিরোধে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ কার্যক্রমে ব্যাপক গুণগত ও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এ পর্যন্ত ১১ হাজার ৭০৭টি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান করে ৩ হাজার ৮২৭টি মামলা বিভিন্ন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রুজু করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন দক্ষতার সঙ্গে তিন হাজার ৮৩১টি মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশীট দাখিলের মাধ্যমে তদন্তাধীন মামলার সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মামলাসহ বেশকিছু মামলায় সাজা হয়েছে। মামলার রায় অনুযায়ী বিদেশে পাচারকৃত বেশ কিছু অর্থও উদ্ধার/ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য সর্বজনবিদিত ॥ বর্তমান সরকারের আমলে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে দেশের অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য এখন সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতায় গুরুত্বারোপ করে সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ফোরামে কার্যকর অংশগ্রহণ ও গঠনমূলক অবদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে একটি প্রতিশ্রুতিময় ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। স্বয়ং জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, বিশ্বশান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ত্যাগ ও অবদান অতুলনীয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত সর্বমোট ২৮টি মামলা বিচারের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। আসামি ইউসুফ আলী মৃত্যুবরণ করায় তার মামলাসহ মোট ২২টি মামলার রায় প্রদান করা হয়েছে, অবশিষ্ট ৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। আপীল বিভাগে শুনানিকালে গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করায় ওই আপীলটি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপীল বিভাগ কর্তৃক ৬টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তার মধ্যে ৫টি আপীল মামলায় ৪ কয়েদির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এক কয়েদিকে আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ৬ আসামি বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত সাজাপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধীর সংখ্যা ২৪ জন। এর মধ্যে ১৭ জনকে মৃত্যুদ-, ছয়জনকে আমৃত্যু কারাদ- এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে চারজন আসামি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বলেন, শিশু হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে সরকার অত্যন্ত তৎপর। এ ধরনের হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কারণে সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার রাকিব হত্যাকা-ে জড়িত সকল আসামিকে শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে।
×