ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ৩১ রানে জিতে সিরিজে টিকে থাকল জিম্বাবুইয়ে, ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে মাশরাফিরা

পরীক্ষার ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

পরীক্ষার ম্যাচে হেরে গেল বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল আগের দিনই। খুলনাও বাদ গেল না বুধবার। ম্যাচ শুরুর আগেই বাগড়া দিয়েছিল বৃষ্টি। শুরুর পরও বৃষ্টির দাপটে মাঝে খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতকিছুর মধ্যেও জিম্বাবুইয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টি২০ ম্যাচে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৩১ রানে হারিয়েছে তারা। ফলে সিরিজ হাতছাড়া হওয়া থেকে আপাতত বাঁচল তারা। চার ম্যাচের সিরিজে এখন ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বোচ্চ টি২০ সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৮৭ রান তোলে জিম্বাবুইয়ে। জবাবে নতুন চেহারার বাংলাদেশ ৬ উইকেটে ১৫৬ রান করতে সক্ষম হয়। তবে এই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরমেট মিলিয়ে ৪০০ উইকেট শিকারি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ম্যাচে উভয় দলের স্পিনারদের মধ্যেই হয়েছে লড়াই। সে লড়াইয়ে জয়ী জিম্বাবুইয়ে। সিরিজ জয়ের জন্য আগামী শুক্রবার চতুর্থ টি২০ ম্যাচে আরেকটি পরীক্ষা ৫টি পরিবর্তন নিয়ে তৃতীয় টি২০ খেলতে নামা মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের। পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ হিসেবে ৫টি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে বাংলাদেশ। তৃতীয় টি২০ ম্যাচে একই সঙ্গে অভিষেক হল ৪ ক্রিকেটারের। পেসার আবু হায়দার রনি, পেস অলরাউন্ডার মুক্তার আলী ও ব্যাটিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত টি২০ অভিষেকের মাধ্যমে প্রথমবার জাতীয় দলের ক্যাপ পরেছেন। আর ৫ টেস্ট খেলে ফেলা পেসার মোহাম্মদ শহীদও প্রথমবারের মতো টি২০ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় শুভাগত হোম চৌধুরী ও হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়া মুশফিকুর রহীম ছিটকে যান দল থেকে। ওপেনার তামিম ইকবালকেও বিশ্রাম দিয়ে স্কোয়াডে থাকা ইমরুল কায়েস সুযোগ করে নেন সিরিজে প্রথমবার খেলার। এ কারণে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে তৃতীয় ম্যাচটিকে বড় সুযোগ হিসেবে নিয়েছিল সফরকারী জিম্বাবুইয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। বৃষ্টির বাগড়ায় অবশ্য ম্যাচ হওয়া নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ দেখা দিয়েছিল, টসও দেরিতে হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়েই খেলা শুরু হয়। টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় জিম্বাবুইয়ে। শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল সফরকারীদের। অভিষিক্ত দুই পেসার রনি ও শহীদের ওপর চড়াও হন ফর্মের তুঙ্গে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও ভুসি সিবান্দা। তাদের ব্যাটিং তা-বে ৪ ওভারেই ওঠে ৪৫ রান। অবশ্য চতুর্থ ওভারের শেষ বলে টি২০ ক্যারিয়ারে প্রথম উইকেট নেন শহীদ, ফিরিয়ে দেন মাসাকাদজাকে। তবে দ্বিতীয় উইকেটেও দারুণ খেলছিলেন সিবান্দা-রিচমন্ড মুতুম্বামি। ৭ ওভার শেষে আবার বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির পর খেলা শুরু হলে ছেদ পড়ে জিম্বাবুইয়ের ব্যাটিং ছন্দে। ৮ ওভারে জিম্বাবুইয়ের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৮০ রান। জিম্বাবুইয়ের জন্য অতীত পরিসংখ্যান অনুসারে সবচেয়ে ভীতিকর বাঁহাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান। প্রথম ওভারে ১৩ রান দিলেও নিজের দ্বিতীয় ওভারেই তিনি আঘাত হানেন। ফিরিয়ে দেন মুতুম্বামিকে। এর মাধ্যমে অনন্য এক গৌরবের অধিকারী হয়ে যান সাকিব। প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি ৪০০ উইকেটের মাইল ফলক ছুঁয়ে ফেলেন। পরের ওভারেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা সিবান্দাকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান তিনি। ৩৩ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৪ রান করেন তিনি। তবে চতুর্থ উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়ে দলকে বিশাল সংগ্রহে পৌঁছে দেন শন উইলিয়ামস ও ম্যালকম ওয়ালার। মাত্র ৭ ওভারেই এ রান তোলেন তারা। আবারও ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব, এবার সাজঘরে ফেরেন মাত্র ২৩ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা ওয়ালার। শেষ দুই ওভারে আরও ২৪ রান যোগ করে সফরকারীরা। তবে ফিরতি স্পেলে দারুণ বোলিং করেন রনি। ১৬ রান দিয়ে নেন উইলিয়ামস (২৬ বলে ৩২) ও সিকান্দার রাজার উইকেট। শহীদ একটি ক্যাচ হাতছাড়া না করলে হয়তো আরেকটি উইকেট তার ঝুলিতে জমা হতো। ৬ উইকেটে ১৮৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় জিম্বাবুইয়ে। এটি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে ২০১৩ সালে বুলাওয়েতে ৫ উইকেটে ১৬৮ রান তুলেছিল তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ। টি২০ ক্রিকেটে অবশ্য জিম্বাবুইয়ের এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২ উইকেটে ২০০ রান তাদের সর্বোচ্চ টি২০ সংগ্রহ। পরে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ১৬৪ রান তাড়া করতে পেরেছে। আর এদিন ৫টি পরিবর্তন নিয়ে এ বিশাল টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই ফিরে যান ইমরুল (১)। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ৬৮ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামলান দারুণ ফর্মে থাকা সাব্বির রহমান ও অভিষিক্ত মোসাদ্দেক। আগের দুই ম্যাচে অর্ধশতকের কাছাকাছি গিয়েও তা পাননি সাব্বির। এদিন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি হাঁকান। ২৬ বলে ৮ চারে ৫০ করার পরই অবশ্য সাজঘরে ফেরেন। দুই ওভার পরেই মোসাদ্দেকও (১৫) সাজঘরে ফিরলে বিপদ ঘনিয়ে আসে বাংলাদেশ শিবিরে। বল হাতে ম্যাজিক দেখানোর পর সাকিব ব্যাট হাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনিও ৩ রান করে ফিরে গেলে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। তিন স্পিনার তেন্ডাই চিসোরো, গ্রায়েম ক্রেমার ও সিকান্দারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণে চলে যায় জিম্বাবুইয়ের। একই ওভারের পঞ্চম বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও তুলে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক মুতুম্বামিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। এরপর বাংলাদেশের যুদ্ধটা মূলত হয়েছে সম্মানজনক হারের জন্য। দারুণ ব্যাটিং করেছেন তরুণ উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান ও মুক্তার। অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটি গড়লেও ততোক্ষণে ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে গেছে। নুরুল ১৭ বলে ৫ চারে ৩০ ও মুক্তার ১৫ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৬ উইকেটে ১৫৬ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
×