ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথমবার জাতীয় দলের ক্যাপ পরলেন রনি, মুক্তার ও মোসাদ্দেক, ৫ টেস্ট খেলার পর টি২০ অভিষেক হলো শহীদের

এক ম্যাচে চারজনের অভিষেক

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

এক ম্যাচে চারজনের অভিষেক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগে থেকেই বলা হয়েছিল এবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে পরীক্ষার সিরিজ হিসেবে নিয়েছে বাংলাদেশ। আসন্ন দুই টি২০ টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের জন্য সঠিক সমন্বয় খুঁজে বের করা এবং ক্রিকেটারদের টি২০ ফরমেটে আরও অভ্যস্ত করে তোলার লক্ষ্যেই চার ম্যাচের টি২০ সিরিজে প্রথম থেকেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষার সুযোগটা আরও উন্মুক্ত হয়েছে। সে কারণে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে একই সঙ্গে অভিষেক হলো ৪ ক্রিকেটারের। প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ ঘটেছে তিন তরুণ ক্রিকেটারের। পেসার আবু হায়দার রনি, পেস অলরাউন্ডার মুক্তার আলী ও ব্যাটিং অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতহ টি২০ অভিষেকের মাধ্যমে প্রথমবার জাতীয় দলের ক্যাপ পরেছেন। আর ৫ টেস্ট খেলে ফেলা পেসার মোহাম্মদ শহীদও প্রথমবারের মতো টি২০ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। তৃতীয় ও চতুর্থ টি২০ ম্যাচের জন্য ঘোষিত দলে বেশ পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিশ্রাম দেয়া হয় দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও আল-আমিন হোসেনকে। আর নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায় শুভাগত হোম চৌধুরী ও হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়া মুশফিকুর রহীম ছিটকে যান দল থেকে। প্রথমবারের মতো টি২০ দলে ডাক পান মুক্তার, শহীদ ও মোসাদ্দেক। ইনজুরি কাটিয়ে ওঠা পেসার তাসকিন আহমেদকেও নেয়া হয়। এসব কারণে নিশ্চিতই ছিল বেশ কয়েকজনের অভিষেক হবে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে। ম্যাচ শুরুর পর একাদশে দেখা গেল বিশ্রাম দেয়া হয়েছে তামিম ইকবালকেও। এ কারণে একই সঙ্গে চারজনের অভিষেক ঘটলো। আগে থেকেই স্কোয়াডে ছিলেন এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) টি২০ আসরে আলো ছড়ানো ১৯ বছর বয়সী বাঁহাতি পেসার রনি। কিন্তু সুযোগ পাননি খেলার। তৃতীয় ম্যাচেই তার সুযোগ হলো। তাকে জাতীয় দলের ক্যাপ পরিয়ে দিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভাল করা রনি এবার বিপিএলে দ্বিতীয় সর্বাধিক উইকেট শিকারি ছিলেন ১২ ম্যাচে ২১ শিকার ঝুলিতে পুরে। স্বীকৃতি হিসেবে পান মোস্ট ভ্যালুয়েবল ক্রিকেটারের পুরস্কার। এবার জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৪ ম্যাচের টি২০ সিরিজেই ডাক পেয়ে যান তিনি। তবে অপেক্ষায় ছিলেন, প্রথম দুই ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। তৃতীয় ম্যাচেই অভিষেক ঘটলো তার টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৫১তম ক্রিকেটার হিসেবে। প্রথমদিকে অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম খেলার অভিজ্ঞতা হিসেবে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন। এ কারণে প্রথম স্পেলে ২ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ফেলেন নেত্রকোনার এ পেসার। কিন্তু ডেথ ওভারে দুর্দান্ত বোলিং করার যে উদাহরণ দেখিয়েছেন পূর্বে এবারও সেটাই করলেন। ফিরতি স্পেলে দারুণ বোলিং করে দুই উইকেট নিয়েছেন। নিজের শেষ দুই ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১৬ রান। ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেটÑ অভিষেকটা একেবারে মন্দ হয়নি এ তরুণের। মুশফিকের ইনজুরিতে পড়ার পরই নিশ্চিত হয়েছিল ব্যাটিং শক্তি ঠিক রাখার জন্য মোসাদ্দেককে একাদশে রাখা হবে। ২০ বছর বয়সী ময়মনসিংহের ক্রিকেটার মোসাদ্দেক ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন, সবই দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে। গত বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) দুটি ডাবল সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন। সেই সুবাদে জাতীয় দলে আবারও ডাক পেলেন তিনি। গত বছর নবেম্বরে সফরকারী জিম্বুইয়ের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে দলে থাকলেও অভিষেক হয়নি। অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সুযোগ পেলেন সবচেয়ে ছোট সংস্করণ দিয়ে। তবে অভিষেকে তেমন আলো ছড়াতে পারেননি। ২ ওভার বোলিং করে ১০ রান দেয়ার পর চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৯ বলে করেন ১৫ রান। আর টেস্ট ক্রিকেটের স্পেশালিস্ট ভাবা হয়েছিল পেসার শহীদকে। দীর্ঘক্ষণ ধরে সঠিক ছন্দে নিখুঁত লাইন-লেন্থে বোলিং করতে পারাটাই শহীদের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। কিন্তু এবার তিনিও নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছেন বিপিএলে। ১৪ উইকেট নিয়েছেন টুর্নামেন্টে, তার চেয়েও বেশি নজর কেড়েছেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে। তাই ৫২ নম্বর টি২০ ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হলো তারও। ৩ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১ উইকেট নিলেও প্রথম আঘাতটা তিনিই হেনেছিলেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে ফিরিয়ে। ২৬ বছর বয়সী মুক্তার ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন বেশ অনেক বছর ধরেই। পারফর্মও করেছেন, তবে জাতীয় দলে ঢোকার দাবি জানানোর মতো ধারাবাহিক ছিলেন না কখনই। দীর্ঘদিন ধরেই একজন ভাল পেস বোলিং অলরাউন্ডারের সন্ধানে আছে বিসিবি। সে কারণেই টি২০ অভিষেক হয়ে গেল তারও। ২ ওভার বোলিং করে ১৭ রান দিয়ে কোন উইকেট অবশ্য পাননি তিনি। আর ব্যাটিংয়ে নেমে করতে পেরেছেন ১৫ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। একসঙ্গে চারজনের চেয়েও বেশি অভিষেকের ঘটনা অবশ্য আছে বাংলাদেশের টি২০ ক্রিকেটে। নিজেদের অভিষেক টি২০ ম্যাচের পর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলেছিল বছরখানেক পর। ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে সেই ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল ৬ ক্রিকেটারের। এরপরই সবচেয়ে বেশি অভিষেক জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এই ম্যাচে। একম্যাচে তিনজন অভিষেকের ঘটনা আছে আরও দুই দফায়। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বেলফাস্টে, একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে।
×