ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে রূপান্তর করতে ব্যয় হবে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি

কোরীয় সহায়তায় আপগ্রেড হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

কোরীয় সহায়তায় আপগ্রেড হচ্ছে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এতে সহায়তা দিচ্ছে কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। ফলে জনগণের চাহিদা পূরণে স্বাস্থ্য সেবার আওতা বৃদ্ধি পাবে, মেডিক্যাল কেয়ার ও ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেন্টার বেজড হেলথ কেয়ার ডেলিভারি সিস্টেম প্রতিষ্ঠা, বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশকের উন্নতি, দেশেই জটিল রোগের উন্নত সেবা নিশ্চিত করে বিদেশ নির্ভরতা কমানো, উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা খাতের পেশাজীবীদের দক্ষতা বাড়ানো, দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ক্লিনিক্যাল রিসার্চের মাধ্যমে এভিডেন্স বেজড মেডিসিন চালু এবং কার্যকর রেফারেল লিংকেজ তৈরি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিএসএমএমইউকে বর্তমান অবস্থা থেকে সুপার স্পেশালাইজড করতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৩৬৬ কোটি ৩৩ লাখ ৭২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৪৫ কোটি ৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, হাসপাতালের নিজস্ব তহবিলের ১৭৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৪ হাজার এবং কোরিয়ার ঋণ সহায়তা থেকে এক হাজার ৪৭ কোটি ৩৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, এ উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ সরকার ও কোরিয়া সরকারের মধ্যে একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ ঋণের সুদের হার দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। ১৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সেবা খাতে অনেক উন্নতি সাধন করলেও স্বাস্থ্য খাতে এখনও বিশ্বমানের অনেক কিছু করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরকারীভাবে টারশিয়ারি স্বাস্থ্য সেবামূলক কার্যক্রম সাধারণত জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল থেকে পরিচালিত হয়ে থাকে। টারশিয়ারি পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় উন্নত যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। যেখানে ১৫০ মিলিয়নের বেশি লোক বসবাস করে। এর অধিকাংশই বাস করে গ্রাম অঞ্চলে। অনেক সময় এই মানুষগুলো উন্নত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে সাধারণ জনগণকে সুলভ মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে বিএসএমএমইউকে সুপার স্পেশালাইজড করতে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, গ্যাস্ট্রো এন্টারলজি ও হেপাটবিলিয়ারি সেন্টার, চাইল্ড এন্ড মাদার হেলথ কেয়ার সেন্টার, কার্ডিও এন্ড সেরেব্রো ভাসকুলার সেন্টার, কিডনি ডিজিসেস সেন্টার, আইসিইউ এবং কেন্দ্রীয় ডায়াগনস্টিক ও প্যাথলজি বিভাগ স্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প প্রস্তাব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তগুলো প্রতিপালন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে গত ৩ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে যাবতীয় প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. আবদুর রব হাওলাদার কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের পাশাপাশি এ খাতে পেশাজীবীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিদেশ নির্ভরতা কমবে এবং এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভিতরে দুটি বেজমেন্টসহ ১৩ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট একটি ১৩তলা হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হবে। সেই সঙ্গে হাসপাতালের জন্য আধুনিক মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছর ভিত্তিক বরাদ্দ চাহিদা দেয়া হয়েছে, চলতি অর্থবছরে ১৯৮কোটি ৫৩ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, আগামী অর্থবছরে ১২৮ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ৬৯১ কোটি ৮৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।
×