ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যপণ্য মূল্য হ্রাসে

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

খাদ্যপণ্য মূল্য হ্রাসে

ইতিবাচক খবরের সত্যতা সাধারণ মানুষ বাস্তবে পেতে চায় বাজারে গিয়ে। সেটা শেষ পর্যন্ত না পায় স্বভাবতই হতাশ হয় তারা। গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দেনদরবার করে তেলের দাম লিটারপ্রতি পাঁচ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও খোলা বাজারে এর কোন প্রতিফলন আজ পর্যন্ত ঘটেনি। বিক্রেতাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তারা কিছু জানে না বলেও জানান। ফলে সাধারণ ক্রেতারা হতাশ। অবশ্য ক্রেতা তথা ভোক্তার সঙ্গে ব্যবসায়ী ও বিক্রেতার এহেন প্রতারণা আদপেই নতুন নয়। অতীতেও এরূপ ঘটেছে বহুবার। ফলে ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় তেমনি ক্রেতাও সহজে নিছক আশ্বাসে আর নির্ভর করতে চায় না। তারা চায় পণ্যের দাম কমানোর সুফল বাস্তবে পেতে। আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্যবসায়ী সংগঠন যাই বলুক না কেন, বর্তমানে দেশে প্রায় সবরকম নিত্য ভোগ্যপণ্যের দাম না কমার কোন কারণ নেই। কেননা বিশ্ববাজারে গত কয়েক মাস ধরে জ্বালানি তেলের দাম নিম্নমুখী। সর্বশেষ প্রতি ব্যারেল পেট্রোলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে দাঁড়িয়েছে ৩০ ডলারের নিচে। আর জ্বালানি তেলের সঙ্গে উৎপাদন ব্যয় ও পরিবহন খরচ সরাসরি সম্পৃক্ত বিধায় প্রায় পাল্লা দিয়ে কমেছে ভোগ্যপণ্য ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম। দেশে গত কয়েক মাসে সরকারী উদ্যোগে সারের দাম কমানো হয়েছে। ডিজেলে দেয়া হয়েছে ভর্তুকি। কৃষক সরাসরি এর সুফল পাওয়ায় ধান-চালের উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্যে বর্তমানে দেশ প্রায় স্বনির্ভর। চাল রফতানিও হচ্ছে বিদেশে। চাষীর চালের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ থাকলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল। তবে গম বা আটা, ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, গুঁড়ো দুধের দাম মোটেও স্থিতিশীল নয়। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটির দামই কমেছে। পরিহাসের বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা প্রায় তাৎক্ষণিকভাবে তার দাম বাড়িয়ে দেন দেশীয় বাজারে। অনেক সময় দাম বাড়ানোর জন্য নানা অজুহাতে পণ্য মজুদ করেন অবৈধভাবে। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়ান পণ্যের। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দেশে তার দাম কমাতে তারা টালবাহানা ও গড়িমসি করেন। অজুহাত তোলেন আগের দামে এলসি খোলা, পণ্যের চালান দেরিতে আসা ইত্যাদির। চাপে পড়ে অনেক সময় দাম কমালেও তা খুবই সামান্য। তাতে ভোক্তা তেমন উপকৃত হন না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিশ্ববাজারে সবরকম সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ১৯ শতাংশ, দেশে কমেছে মাত্র সাত শতাংশ। বিশ্ববাজারে গমের দাম ২৮ শতাংশ কমলেও দেশে কমেছে মাত্র ৯ শতাংশ। অন্যদিকে চিনির দাম বিশ্ববাজারের ২৭ শতাংশের তুলনায় দেশে কমেছে মাত্র ৫ শতাংশ। বিশ্ববাজারে গুঁড়ো দুধের দাম ১৩৫ দশমিক ৫ পয়েন্ট কমলেও দেশীয় বাজারে এর কোন প্রতিফলন নেই। ফলে ক্রেতাসাধারণ প্রতিনিয়ত বাজারে গিয়ে ঠকছেন এবং প্রতারিত হচ্ছেন- দামে ও ওজন, উভয়তই। নিত্যপণ্যের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজার মূল্য প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করে ভোগ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে ট্যারিফ কমিশন। দেশে পণ্যের দাম কমবে কিনা তা নির্ভর করে সরকারের আমদানি নীতি, মজুদ ব্যবস্থাপনা সর্বোপরি ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ওপর। সেই প্রেক্ষিতে বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পণ্যমূল্য হ্রাস পাবে জনগণের প্রত্যাশাও তাই।
×